চরাচর-ইটখোলা নয়, ইট কারখানা by আলম শাইন

এক সমীক্ষায় জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ইটখোলার সংখ্যা তিন হাজার ৯০০টি। খোলাগুলোতে বছরে কয়লা পোড়ানো হয় এক মিলিয়ন টনেরও বেশি। আর এ থেকে প্রতিবছর কার্বন ডাই-অঙ্াইড নির্গত হয় প্রায় ছয় কোটি ৪০ লাখ টন। এ ছাড়া ইটখোলা থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক ধোঁয়া। যা থেকে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ঘটে।


ইটখোলার মালিকরা একটু সতর্ক বা সচেতন হলে এ ক্ষতিকারক দিক থেকে দেশ, জাতি কিংবা পরিবেশকে বাঁচাতে পারেন। সাশ্রয় করতে পারেন নিজেদের অর্থনৈতিক দিকটাও। এর থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে ইটখোলাগুলোকে ইটের কারখানায় রূপান্তর করা। এ ধরনের কারখানার নাম 'ইকো ব্রিকফিল্ড'। এটি চালু করেছে 'কিলন এনার্জি অল্টারনেটিভ' (সিইএ) নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। ইট তৈরির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে 'হফম্যান কিন' নামক একধরনের উন্নত প্রযুক্তি। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে চীনের জিয়াং রিসার্চ অ্যান্ড ডিভাইস ইনস্টিটিউট অব ওরাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস। জানা যায়, ধোঁয়াবিহীন ইট তৈরির প্রকল্পটি ইতিমধ্যে সাভারের ধামরাইয়ের শিমুলতলী গ্রামে চালু হয়েছে। ইটখোলার মালিকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রকল্পটি হাতে নেয় 'সিইএ'। এভাবে ইট তৈরিতে ধোঁয়ার সৃষ্টি না হওয়ায় কার্বন নিঃসরণের ঝুঁকি নেই বললেই চলে। যে যৎসামান্য ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় তা সংরক্ষণ করে আবার ব্যবহার করা যায় ড্রায়িং চেম্বারে। ইকো-ব্রিকফিল্ডের বেশ কয়টি আকর্ষণীয় দিক রয়েছে, যেমন_মাটি সাশ্রয় হয় ৭০ ভাগ। ইট তৈরির উপযুক্ত মাটির সঙ্গে ৩০ ভাগ কয়লার গুঁড়া মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে মেশিনের সাহায্যে টুকরো করা হয়। এ টুকরোগুলো সরাসরি ড্রায়িং চেম্বারে ঢুকিয়ে দিলেই ৯ ঘণ্টার মধ্যে ইট তৈরি হয়ে যায়। এতে কাঁচা ইট শুকানোর ঝামেলা নেই মোটেই। অন্যদিকে পুরনো পদ্ধতিতে ইট পোড়াতে সময় লাগে প্রায় ১৫ দিন। তাতে অর্থ অপচয় হয় যেমন, তেমনি দীর্ঘ সময় ধরে চিমনি দিয়ে নির্গত হতে থাকে কালো ধোঁয়া। তাতে পরিবেশের যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয় তা অনুমেয়। বিশেষ করে সনাতনী পদ্ধতিতে ইট তৈরি করলে প্রতিটি ইটের পেছনে খরচ হয় গড়ে ছয় টাকা, আর ইকো-ব্রিকফিল্ডের মাধ্যমে খরচ পড়ে পাঁচ টাকা। সুখবর হচ্ছে, ধোঁয়াবিহীন ইট তৈরিতে এগিয়ে এসেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। এর জন্য তারা হাতে নিয়েছে 'হাইব্রিড হফম্যান কিন' প্রযুক্তি। এতে খরচ পড়বে মাত্র সাড়ে তিন টাকা। সংস্থাটি বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ১৫টি 'এনার্জি ইফিশিয়েন্সি কিলনস' স্থাপন করবে। আগামী পাঁচ বছর ধরে তারা এ পরীক্ষামূলক কাজটি করবে। জানা গেছে, এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইতিমধ্যে সাভার ও গাজীপুরের দুটি ইট কারখানা চালু করা হয়েছে। মেশিন বসানোর কাজ চলছে আরো বেশ কিছু ভাটায়। পদ্ধতিটি অব্যাহত থাকলে সনাতনী ইটখোলাগুলো ইটের কারখানায় রূপান্তর হবে। তাতে লাভবান হবে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। পাশাপাশি উপকৃত হবে দেশ ও জাতি। ফিরে পাবে পরিবেশের ভারসাম্য।
আলম শাইন

No comments

Powered by Blogger.