চালচিত্র-গোটা জাতি ত্রিমুখী টেনশনে by শুভ রহমান

এ মুহূর্তে গোটা জাতি ত্রিমুখী টেনশনে। সদ্য দেশজুড়ে অর্ধ শতাব্দীকালের সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্প হয়ে গেল গত রবিবার। এর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ব্যক্ত হওয়ায় এ কলাম লিখতে হচ্ছে তার মধ্যেই। ইতিমধ্যে এ ভূমিকম্পের উৎস এলাকা_ নেপাল, ভারত ও তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ লেখার সময় পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৭৪-এ।


রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এ ভূমিকম্পে কারো নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে আতঙ্কজনিত হুড়োহুড়িতে লাফ দিয়ে পড়ায় ও নানাভাবে এ ভূমিকম্পে ৭০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানী ও কোনো কোনো জেলা শহরে কিছু দালানের অংশবিশেষ ও অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কার কথাটি মানুষের মানসিক শান্তি ও স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে। প্রাকৃতিক সব ধরনের দুর্যোগের মধ্যে মানুষকে ভূমিকম্পেই সবচেয়ে অসহায় ও অপ্রস্তুত অবস্থায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়; বিশেষ করে এই দুর্ভাগা দেশে। একেকটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, আর মানুষ সে অসহায়ত্ব হাড়ে হাড়ে নতুন করে উপলব্ধি করে। ভূকম্পন রোধ বা সে সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন, ভূমিকম্পকবলিত অসহায় মানুষকে রক্ষা, ত্বরিত প্রয়োজনীয় উদ্ধার ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে মানুষ বাঁচানো, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মানুষকে পুনর্বাসন, প্রয়োজনের মুহূর্তে এসব বিশাল কর্মযজ্ঞ চালানোর বড় জোর শুধু কথাবার্তাই হয়, তাও ভূমিকম্প হওয়ার পর পর কিছুকাল ধরে। সেসব কথাবার্তা বাস্তবে তেমন রূপায়িত হতে গত ৪০ বছরেও দেখা যায়নি। এবারও তারই পুনরাবৃত্তি হয় কি না, সে প্রশ্ন থেকেই গেছে। আর এই বিস্মরণ ও বাস্তবতাবিমুখতার হয়তো চড়া মাসুলই দিতে হবে আমাদের অচিরেই। আজ পর্যন্ত বিল্ডিং কোড মেনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দালানকোঠা নির্মাণের নূ্যনতম সতর্কতাটুকুই ব্যাপকভাবে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। বিল্ডিং কোড না মানা এবং নির্মাণকালে ভূমিকম্পরোধক কোনো ব্যবস্থা সংযোজিত না করার দায়ে কোথাও কাউকে অভিযুক্ত বা দণ্ডিত করা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের একটি ঘটনাও আজ পর্যন্ত ঘটতে দেখা গেল না। আজ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসংবলিত ভূকম্পন জরিপ ও পরিমাপের কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা ও কেন্দ্র গঠিত হতে দেখা গেল না। এখনো সিসমিক রেকর্ড ও রিডিংয়ের জন্য এ দেশকে সেই যুক্তরাষ্ট্রের বা প্রতিবেশী উন্নত দেশের ওপরই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। দেশে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে তা হয়তো নয়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় ও সরকারিভাবে সব প্রয়োজনীয় সাজ-সরঞ্জাম, মেধা ও দক্ষতাকে সংগঠিত করা ও কাজে লাগানোর ব্যাপারে গাফিলতি সীমাহীন এবং ক্ষমাহীন।
জামায়াতি তাণ্ডব : একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী অপশক্তি জামায়াতের সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিত তাণ্ডবও মহাজোট সরকার অঙ্কুরেই চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার বাস্তব পদক্ষেপ নেবে_জাতি এ মুহূর্তে সে ভরসাও চায়। জাতি যখন স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপশক্তির হাত থেকে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের আনুষ্ঠানিক বিচারপর্ব দৃঢ়ভাবে সমাধা করার কাজ চালাচ্ছে, পাঁচজন প্রধান যুদ্ধাপরাধীকে আটক করে সাক্ষ্য-প্রমাণসহ কাঠগড়ায় হাজির করছে, তখন অকল্পনীয় স্পর্ধায় জামায়াত-শিবির এ বিচারপর্ব বাতিল ও আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশের রাজপথে তাণ্ডব চালিয়েছে। আইন হাতে তুলে নিয়ে তারা পুলিশের ওপর গেরিলা কায়দায় অতর্কিত হামলা চালিয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক পুলিশকে আহত পর্যন্ত করার স্পর্ধা দেখিয়েছে। স্বস্তির কথা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক পাল্টা প্রতিরোধমূলক কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারও করে ফেলেছে। তবে সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ বেশ বিস্মিতই বোধ করছে, কিভাবে দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে প্রায় গেরিলা কায়দায় জামায়াতিরা একই সঙ্গে সারা দেশে সংগঠিত ও সুপরিকল্পিতভাবে এই তাণ্ডব চালাতে সক্ষম হলো! সোমবার বিকেলে এরা রাজধানীতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল, ককটেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, কয়েকটি পুলিশের পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলসহ বহু যানবাহনে অগি্নসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তদন্ত চালানো ও অবিলম্বে চলমান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বিধান করে এবং তার দ্রুত অপ্রতিহত পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দোষী সাব্যস্ত সব যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর সচেতন দেশবাসী গুরুত্বারোপ করছে। এ ব্যাপারে যেকোনো রকম শৈথিল্য ও কালক্ষেপণ হবে আত্মঘাতী এবং তা স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে পাকিস্তানের তালেবানের কায়দায় জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর সুযোগ করে দেবে বলেও দেশবাসী আশঙ্কা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের পরিকল্পিত তাণ্ডব ও তারপর আজকের হরতাল প্রকৃতপক্ষে বিএনপি ও সমমনাদের সামনের আন্দোলনের গ্রাউন্ড ওয়ার্ক মাত্র। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যায়, ২০১০-এর জুনে পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠান নিয়ে জামায়াত রাজনীতিতে সন্ত্রাস ও সহিংসতার সূচনা করে এবং আজ দেশবাসী তারই এক পরিণত রূপ প্রত্যক্ষ করেছে।
বিরোধী দলের 'যুদ্ধ' ঘোষণা : আদালতের রায় অমান্য করে দেশে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহালের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাবিতে আসছে ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতসহ চার দল ও সমমনা দলগুলো রাজপথে আন্দোলনে নামছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ আন্দোলনকে ব্যর্থ ও নিপীড়ক সরকারকে অপসারণের 'যুদ্ধ' বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ওই দিন পল্টন ময়দান থেকে আন্দোনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। কী আশ্চর্য, বিএনপি যেখানে সরকারি দল আওয়ামী লীগের বারংবার আহ্বানেও বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে সংসদে যায়নি বা আলোচনায় বসারও প্রয়োজনীয়তা বোধ করেনি, সেখানে কী অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অগ্রাহ্য করে আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে! এর মধ্য দিয়ে দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি এক মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার অশনিসংকেত ধ্বনিত হচ্ছে!
২০.০৯.২০১১

No comments

Powered by Blogger.