জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়-সার্বিক কর্মকাণ্ডে উন্নতি চাই

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ড নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অসন্তুষ্ট_ মঙ্গলবার সমকালে প্রকাশিত এ খবর উদ্বেগজনক। ১২ লাখ ছাত্রছাত্রীর উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব পালনকারী এ প্রতিষ্ঠানে এখন অনেক গলদ। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়কে অ্যাফিলিয়েটেড কলেজগুলোতে রেজিস্ট্রেশন করা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সারিতে ফেলা হয়। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ কার্যত সরকারের হাতে। বাজেট আসে তাদের মাধ্যমে।


অনাকাঙ্ক্ষিত রেওয়াজ যে, যখন যে দল ক্ষমতায় তাদের একনিষ্ঠ সমর্থকদের নিয়োগ দেওয়া হয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে। দক্ষতা ও যোগ্যতা নয়, বরং রাজনৈতিক আনুগত্যই এ ক্ষেত্রে নিয়ামক। অথচ অ্যাফিলিয়েটেড ১৬ শতাধিক কলেজের জন্য ভর্তির গাইডলাইন প্রণয়ন ও পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সার্টিফিকেট প্রদানের মতো গুরুদায়িত্ব অর্পিত রয়েছে তাদের হাতে। অ্যাফিলিয়েটেড কলেজগুলোর যাবতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। কোন কলেজে অনার্স কোর্স চালু হবে এবং কোন বিষয়ে চালু হবে সে বিষয়ে অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলেজের শিক্ষকদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি শিক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ে তারা প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। এ শিক্ষকরাই স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদান করেন এবং অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের পরীক্ষার উত্তর মূল্যায়ন করেন। তাদের নিয়োগদানের প্রক্রিয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নতুন প্রতিষ্ঠিত কলেজকে অনুমোদন প্রদান করা হবে কি-না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বও তাদের। দুর্ভাগ্য যে, এসব কাজে প্রায়ই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তার নিষ্পন্নের প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ নয়। এক সময়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা কলেজগুলো ছিল ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভিমত থেকে স্পষ্ট যে, যথেষ্ট যোগ্যদের হাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ এ কর্মভার অর্পিত হয়নি। অতীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি ঘুষ-বাণিজ্যের কথাও শোনা গেছে। তবে সব দায় কেবল অতীতের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার যুক্তি নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনা এবং বিশেষভাবে মানোন্নয়নের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সাধুবাদ পাবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অবশ্যই যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগদান হবে প্রথম শর্ত। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ভার যাদের হাতে তাদের বাচাই করার কাজে দলীয় আনুগত্য কোনোভাবেই প্রধান বিবেচ্য হতে পারে না। এ কাজে এমন ব্যক্তিদের বাছাই করা চাই যারা মেধা-মননে ও সততায় কলেজগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পূর্ণ আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন। এ ধরনের কর্তৃপক্ষ থাকলেই কেবল সিলেবাসের মানোন্নয়নসহ জরুরি কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করা সম্ভব। বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সরকারের রয়েছে বিশেষ অগ্রাধিকার। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, কিন্তু তারপরও বাজেট বরাদ্দ ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে। এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড উন্নত করার প্রতি মনোযোগ প্রদান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সময়ের দাবি পূরণ করেছে। এখন অপেক্ষা উপযুক্ত ফলের এবং তা যেন কোনোভাবেই হতাশাব্যঞ্জক না হয়।
 

No comments

Powered by Blogger.