সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ-গণতন্ত্র সুসংহত রাখার আহবান

গত বুধবার জাতীয় সংসদে নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান দেশ পরিচালনায় সরকারের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী এবং নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়সহ সরকারের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।


সেই সঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক অনভিপ্রেত অভ্যুত্থান চেষ্টা, বিরোধী দলের সংসদে যোগদান, বিশ্বমন্দা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই দেশের প্রধান বিরোধী দল তথা চারদলীয় জোট সংসদে অনুপস্থিত। বিরোধী দলকে সংসদে যোগদানের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, 'গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে কোনো বিশেষ অবস্থানে থমকে যাওয়া কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চেয়ে জনগণ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালনই মুখ্য। তাই বিরোধী দলকে বলব, আপনাদের সব প্রস্তাব, সুপারিশ ও অভিযোগ সংসদে এসে বলুন।' নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, 'পরামর্শের ভিত্তিতে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনই ছিল আমার এ উদ্যোগের লক্ষ্য।' রাষ্ট্রপতি অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, 'গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত ও বাধাগ্রস্ত করার সাম্প্রতিক ঘৃণ্য চেষ্টা সেনাবাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছে। এ জন্য আমি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।' রাষ্ট্রপতি আরো বলেছেন, 'অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আত্মত্যাগের পর দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালিত হচ্ছে। এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার কোনো অপচেষ্টা কারো কাম্য নয়। এ ধরনের অপচেষ্টা কখনো বরদাশত করা হবে না।'
সংসদে রাষ্ট্রপতির এই ভাষণ ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। একটি সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের ভূমিকা অপরিহার্য। জনগণ যখন কোনো প্রার্থীর পক্ষে রায় দেয়, তখন তারা সেই রায়ের মাধ্যমে নিজেদের কথা বলতে সংসদে প্রতিনিধি পাঠায়। ওই প্রতিনিধি সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণ করছেন কি না, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে সংসদে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোনো তর্কবিতর্ক ছাড়া বিভিন্ন বিল পাস হতে দেখা যাচ্ছে। এই তর্কবিতর্ক না থাকার ফলে বিলটির দুর্বলতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণ সঠিকভাবে অবহিত হতে পারছে না। তাই বিরোধী দলের লাগাতার সংসদ বর্জন জনগণের দ্বারা অর্পিত দায়িত্বই অস্বীকার করার শামিল। গণতন্ত্রমনা জনগণও সেটাই মনে করে। সুতরাং রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে জনগণের মতামতেরই প্রতিফলন ঘটেছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান। সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ করার বিষয়টি সংসদের টেবিলে উপস্থাপিত লিখিত বক্তব্যে না থাকলেও তিনি সংসদে সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে সরকার অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের কাজের গতি আরো বৃদ্ধি করবে এবং বিরোধী দল সংসদে উপস্থিত হবে_শুধু আনুষ্ঠানিকতা রক্ষা করতে নয়, বরং দেশের উন্নয়নে গণতান্ত্রিক পথে সত্যিকার ভূমিকা রাখার প্রয়াসে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অভিভাবক। বছরের আগামী দিনগুলোতে রাষ্ট্রপতির দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হবে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সুসংহত ও স্থিতিশীল হবে_এটাই দেশ ও জনগণের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.