আমরা কী খাচ্ছি তা নিশ্চিত করবে কে?-মসলায় ভেজাল

‘খাঁটি বলে এই মিল থেকে মসলা কিনতাম। এখন দেখি জীবন তো শেষ কইরা দিছে’—যে মিল থেকে নিয়মিত মসলা কিনতেন, সেখানে ভেজালবিরোধী অভিযানের পর এই হচ্ছে এক ভোক্তার প্রতিক্রিয়া। মরিচের গুঁড়ায় মেশানো হতো কাপড়ের রং, জিরার সঙ্গে কাঠের গুঁড়া।


এখন কোনো কিছুই যখন আর ভেজালের বাইরে নেই, তাই না জেনে আমরা আসলে সবাই কোনো না কোনোভাবে এসবই খেয়ে যাচ্ছি। ভেজাল খাবার মানে বিষ; সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু না ঘটালেও ঠেলে দেয় মৃত্যুর দিকে। দুই দিন বাদে ঈদ; মসলার চাহিদা বেড়েছে, ক্রেতারা যে বিষ না কিনে মসলা কিনছেন, তা নিশ্চিত করবে কে?
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অভিযান শুরু করেছে ঈদ সামনে রেখে। এক দিনের অভিযানে যা ফলাফল পাওয়া গেল, তাতে আবারও নিশ্চিত হওয়া গেল যে খাবার ও পণ্য হিসেবে আমরা যা খাচ্ছি তার বেশির ভাগই অখাদ্য। গত বুধবার রাজধানীতে যে ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হলো, তাতে একটি মসলার মিল সিলগালা করা ও এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, একটি ওয়েল মিলকে ভেজাল তেল বিক্রির জন্য জরিমানা করার হয়েছে ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, নকল টিভি বিক্রির জন্য দুটি ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিক্রির দোকানকে জরিমানা করা হয়েছে। এ ধরনের জরিমানা ও মামলা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগেও হয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি। ভেজালের পরিস্থিতি আসলে যেখানে গিয়ে ঠেকেছে, তাতে মাঝেমধ্যে এ ধরনের অভিযান দিয়ে যে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না, তা পরিষ্কার।
খাদ্য ও পণ্যসামগ্রীতে ভেজালের বিষয়কে আজকের দুনিয়ায় খুবই গুরুতর একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বিষয় জড়িত, যার সবচেয়ে বড় শিকার দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এ ক্ষেত্রে কোনো নমনীয় অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়। খাদ্য ও খাদ্যপণ্যের ভেজালের বিরুদ্ধে তাই আরও কঠোর আইনের বিকল্প নেই। আমরা মনে করি, নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি কঠোর শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর প্রবণতা কমে আসবে। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের সক্রিয় মনোযোগ আশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.