যেখানেই টেন্ডার সেখানেই দুর্নীতি আর মাস্তানি চলবেই?-সংসদ চত্বরে টেন্ডারবাজ

সরকারি টেন্ডার মানেই দুর্নীতি আর মাস্তানি কি না, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন নেই। ঘটনার পর ঘটনা এবং খবরের পেছনে খবরে ‘যেখানেই টেন্ডার সেখানেই দুর্নীতি আর মাস্তানি’র নিষিদ্ধ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করেছে। আর যেখানে টেন্ডারবাজির শিকার মন্ত্রীপুত্র, সেখানে ঘটনা আরও জটিলই বটে।


জাতীয় সংসদ চত্বরে, জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষের কার্পেট কেনার দরপত্র বা টেন্ডার জমা দেওয়া নিয়েই ঘটেছে টেন্ডারবাজির নতুন কাহিনি। মাস্তানি ও দুর্নীতির দৌরাত্ম্য সংসদ ভবন পর্যন্ত—এটা কোনো ভালো কথা নয়।
গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলো জানাচ্ছে, সংসদ অধিবেশন কক্ষের কার্পেট কেনার টেন্ডার জমা দিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রীর পুত্র। বাধা দিয়েছে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী এবং অভিযোগ উঠেছে, তাদের সহযোগিতা করেছে গণপূর্ত বিভাগের উচ্চপদস্থ কয়েক কর্মকর্তা। মাননীয় স্পিকারের হস্তক্ষেপে মন্ত্রীপুত্র পরে দরপত্র জমা দিতে পেরেছেন। তবে এ ঘটনায় দুই প্রকৌশলীকে বদলি করা হলেও মূল সন্ত্রাসীরা অচিহ্নিত ও মুক্তই রয়ে গেছে।
টেন্ডারবাজির মহামারি জাতীয় সংসদকে পর্যন্ত আক্রান্ত করতে পারা রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। তা ছাড়া আইন প্রতিমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির পুত্রকে যারা বাধা দিতে পারে, তারাও নিশ্চয়ই কম ক্ষমতাবান নয়। স্পিকারের হস্তক্ষেপে মন্ত্রীপুত্র দরপত্র জমা দিতে পারলেও অন্য যে ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দিতে পারেননি, তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? অন্যদিকে এই প্রশ্নও উপেক্ষা করা যায় না, সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের পাঁচ কোটি টাকার কাজ পাওয়ার চেষ্টা করা আইনমন্ত্রীর পুত্রের জন্য শোভন ও স্বচ্ছ আচরণ কি না?
এই অঘটনে সহযোগিতার অভিযোগে গণপূর্ত বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও তাঁদের সত্যিকার দোষ আইনি প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত হতে হবে। যে দুর্নীতির অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে, সেই দুর্নীতির আসল হোতাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি না করা গেলে অনিয়মের যথাযথ বিহিত হবে না।
যে দ্রুততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে মাননীয় স্পিকার অপরাধ ঘটায় বাধা দিয়েছেন, তা তাঁর ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করবে। তা হলেও আসল দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচার না করা পর্যন্ত আইনের কাজ আইন করেছে বলে মনে হবে না।

No comments

Powered by Blogger.