মধুখালীতে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ৭নং মেগচামী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ১৬ এপ্রিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। প্রার্থীরা এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে প্রার্থী ও কর্মীদের প্রচারণা। মধুখালী উপজেলা সদরের বাজার থেকে সামান্য দূরত্বে কৃষি প্রধান মেগচামী ইউনিয়নে যাতায়াতে ‘জাইকা’র ঋণে প্রশস্ত সড়ক নির্মিত হয়েছে সম্প্রতি। তবে এখনো অধিকাংশ হাটবাজার-রাস্তাঘাটে উন্নয়নের বিশেষ ছোঁয়া লাগেনি। ৬টি সরকারী প্রাইমারী স্কুল, একটি এমপিওভুক্ত ও একটি নন এমপিওভুক্ত হাইস্কুল এবং একটি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা ও একটি ননএমপিওভুক্ত মাদ্রাসা রয়েছে। একটি নন এমপিওভুক্ত কলেজও গড়ে উঠেছে। এলাকায় শিক্ষার হার মোটামুটি। শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠায় চাকরি ও বিদেশগমনের প্রবণতা রয়েছে অধিবাসীদের মধ্যে। যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এছাড়া পাশ্ববর্তী এলাকা হতে আসা দুর্ধর্ষ অপরাধীদের বিচরণও রয়েছে এখানে। এজন্য এবারের নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করা অধিবাসীদের নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে ভোটাররা জানান। স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মেগচামী ইউনিয়নের এবারের নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, মেম্বার পদে ২১ জন এবং সংরক্ষিত নারী আসনে ৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। মোট ভোটার রয়েছেন ১০ হাজার ১৪৭ জন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপি থেকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তরুণ উদীয়মান সমাজসেবক শেখ সবুজ। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকে রয়েছেন হাসান আলী খান। এছাড়া মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাব্বির উদ্দিন শেখ ‘চশমা’ প্রতীকে এবং ‘মোটর সাইকেল’ প্রতীকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুজ্জামান সুইট রয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী সাব্বির শেখের আপন ভাই মনিরুজ্জামান পলাশও চেয়ারম্যান প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ‘রজনীগন্ধা’ প্রতীকে। এছাড়া ‘আনারস’ প্রতিকে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হাসান মুকুল। সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় এখানে বিএনপি প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। এছাড়া দলীয় ভোটারের সংখ্যা বেশি সাথে ব্যক্তি ইমেজ ইতিমধ্যে ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় বিলআড়লিয়া বাজারে গেলে সেখানে কথা হয় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীর সাথে।
তারা সকলেই সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রশাসন ও র‌্যাব-পুলিশের যথাযথ হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থী শেখ সবুজ অভিযোগ করেন, নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে প্রতিপক্ষ হতে হুমকি-ধামকিও বাড়ছে। বিশেষ করে নৌকায় ভোট না দিলে হিন্দু ভোটারদের গায়ের চামড়া তুলে নেয়ার জন্য প্রকাশ্য সভায় হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমাকেও নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভোটারেরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুজ্জামান সুইট একইরকম অভিযোগ করে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসনের পক্ষ হতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী সাব্বির আলী বলেন, ২৫/২৬ লাখ টাকায় মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। এজন্য দলীয় মনোনয়ন পাইনি। এখন ভোটারেরা যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সেটিই দাবি করছি। নওশের আলী মন্ডল নামে এক ভোটার জানান, নির্বাচনের দিন বিশেষ কোনো কেন্দ্র টার্গেট করে ভোট কাটার চেষ্টা চলতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ইউনিয়নে স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি। স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক রকিবুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের দিন যতো ঘনিয়ে আসবে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে। তার যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারে সেব্যবস্থা নিতে হবে। এব্যাপারে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হাসান আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নির্বাচনের পরিবেশ ভালো দাবি করেন। ভোটারদের হুমকি-ধামকির ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।

No comments

Powered by Blogger.