রাশিয়া কেন সন্ত্রাসী হামলার টার্গেট?

২০১৫ সালের শেষের দিকে গৃহযুদ্ধপীড়িত সিরিয়ায় প্রথমবারের জন্য বিমান হামলার নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিনের এই মিশনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট। আর তা হচ্ছে- রাশিয়ার জনগণের ওপর আক্রমণ করতে সক্ষম হওয়ার আগেই সেখানকার সন্ত্রাসীদের শেষ করে দেয়া। রাশিয়ার হাজার হাজার লোক বিশেষ করে দেশটির ককেসাস অঞ্চল থেকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগ দিতে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে। সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে তাদের অনেকেই ভয়ানক ও সক্ষম যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও যুক্তরাজ্যের মতো রুশ সরকারেরও অনেক দিনের ভয় যে, তার নিজ দেশের এই নাগরিকেরা ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে দেশে ফিরে আসতে পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সিরিয়ার যুদ্ধে পুতিনের ওই হস্তক্ষেপকে ‘শক্তিমত্তা নয়, বরং দুর্বলতাপ্রসূত’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। সেই সময় পুতিন সিরিয়ার যুদ্ধকে রাশিয়ার জন্য দরকারি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান বলে তার দেশের নাগরিকদের বুঝিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিরিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার বিমান হামলা একদিকে বহু সম্ভাব্য সন্ত্রাসীকে সফলভাবে হত্যা করেছে। অন্যদিকে অন্য বহু সন্ত্রাসীকে রাশিয়ায় হামলা চালাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তার উদাহরণ ২০১৫ সালের হামলায় আইএসের স্বীকারোক্তি। ২০১৫ সালের অক্টোবরে রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানে বোমা পেতে রাখা হয়। ওই বোমা বিস্ফোরণে ২২৪ জন যাত্রী নিহত হন। এই হামলার দায় স্বীকার করে আইএস বলে,
সিরিয়া যুদ্ধে পুতিনের হস্তক্ষেপের প্রতিশোধ হিসেবে তারা ওই হামলা চালায়। তবে পুতিনের সিরিয়া সংযোগই রাশিয়ার সন্ত্রাসভীতির একমাত্র কারণ নয়। রাশিয়ার উত্তরে ককেসাস অঞ্চলে বহু দিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি তৎপরতা বিদ্যমান এবং তারা যে দেশটিতে বারবার বড় ধরনের ভয়াবহ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে তার প্রমাণ প্রায়ই পাওয়া যায়। সোমবার রাশিয়ার অন্যতম প্রধান শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের পাতাল রেলস্টেশনে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১১ জন নিহত ও ৫০ জনের অধিক আহত হন। এই হামলার আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণের শহর ভলগোগ্রাদে দুটো আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়। এই হামলাটি যে স্থানে চালানো হয় তা ককেসাস অঞ্চল থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। সেই সময় মনে করা হয়েছিল মস্কো কিংবা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে টার্গেট করে সন্ত্রাসীরা আর হামলা চালাতে পারবে না। সোমবারের সন্ত্রাসী হামলার মধ্য দিয়ে রুশ কর্তৃপক্ষের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে সন্ত্রাসের হুমকি মোকাবেলায় অনেক সম্পদ ও শ্রম ব্যয় করেছে। তা সত্ত্বেও সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। সোমবারের হামলার পর রাশিয়া এখন জানতে মরিয়া যে, দেশটির ইস্পাত দৃঢ় নিরাপত্তা অবকাঠামো ভেদ করে একজন সন্ত্রাসী কিভাবে ঢুকে পড়তে পারে।

No comments

Powered by Blogger.