ছোট্ট তাহসিন চিৎকার করেছিল ‘চাচ্চু বাঁচাও’

‘চাচ্চু, বাঁচাও বাঁচাও!’ নৌকা উল্টে চাচা হাসানের কোল থেকে সাগরের পানিতে ছিটকে পড়ার মুহূর্তে এভাবেই চিৎকার করেছিল ছোট্ট তাহসিন (৯)। উত্তাল ঢেউয়ে চাচা শুধু শুনতে পেয়েছিলেন এ তিনটি শব্দ। এখন সে কথা বারবার বলে জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। আর নিজের কোল থেকে শিশুকন্যা নিহার (৫) ছিটকে পড়ার দৃশ্য বিভীষিকার মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে মা নুরনাহার বেগমকে। ক্ষণে ক্ষণে শুধু ‘নিহা’, ‘তাহসিন’ বলে ডেকে যাচ্ছেন তিনি। নৌকাডুবির তিন দিন পর আজ বুধবার সকালে এই দুই ছোট্ট শিশুর মরদেহ পাওয়া গেল দুর্ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে। কাছাকাছি সময়ে মিলল পূর্ব মাইটভাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের মরদেহ। এ নিয়ে দুর্ঘটনার পর গত তিন দিনে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপেজলার গুপ্তছড়া ঘাটে নৌকাডুবির এ ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকার যাত্রীরা সি ট্রাকের যাত্রী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা ঘাট থেকে যাত্রীরা প্রথমে সি ট্রাকে ওঠেন। ঘাট থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটের অদূরে সি ট্রাকটি পৌঁছে। ওই সব সি ট্রাক তীরে ভিড়তে না পারায় তীরে যাত্রী পারাপার করা হয় ইঞ্জিনচালিত লাল নৌকা (জাহাজের লাইট বোট) দিয়ে। ওই সন্ধ্যায় সি ট্রাক থেকে নেমে যাত্রীরা নৌকায় রওনা দেওয়ার কিছু পরেই প্রবল বাতাসে তা উল্টে যায়। নৌকাটিতে সি ট্রাকের আনুমানিক ৫৫ জন যাত্রী ছিলেন।
ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল নৌকায়। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ৩০ জনকে উদ্ধার করে। আজ বুধবার সকালে উদ্ধার করা তিনজনের মরদেহ নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের কাছে হস্তান্তর করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে মরদেহগুলো উপজেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম জাকারিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন তারা নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে যাচ্ছেন। দুই শিশু তাহসিন ও নিহা চাচার বিয়েতে সন্দ্বীপ যাচ্ছিল। তাহসিন পড়ত চট্টগ্রামের হালিশহরের মাস্টারমাইন্ড আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে। নিহা একই স্কুলে প্লে শ্রেণিতে পড়ত। তাদের কাতারপ্রবাসী চাচা হাসানের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল আগামী শুক্রবার। দুর্ঘটনার খবর শোনার পর দুই শিশুর বাবা মুসলিম উদ্দিন গতকাল মঙ্গলবার কাতার থেকে চট্টগ্রামে ফিরেছেন। মুসলিম উদ্দিনের ফুপাতো ভাই ইব্রাহিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, দুই শিশুর বাবা সন্দ্বীপে রওনা হয়েছেন। পরিবারের কেউ কথা বলতে পারছে না। বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। স্বজনেরা জানান, দুর্ঘটনার সময় নিজেদের হাত থেকে দুই শিশুর ছিটকে পড়ার দৃশ্য ভুলতে পারছেন না চাচা ও মা। তাঁরা স্বাভাবিক হতে পারছেন না। চিকিৎসা নেওয়ার পর তাহসিনের চাচা মো. হাসান ও মা নুরনাহারকে বাড়িতে বিশ্রামে রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.