ঘর বিধ্বস্ত, গাছপালা–বিদ্যুতের লাইনের ক্ষতি, আহত ৪

কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ১৮টি ঘর বিধ্বস্ত ও শতাধিক গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার হাওরবেষ্টিত অরুয়াইল, পাকশিমুল, চুন্টা, কালীকচ্ছ, নোয়াগাঁও ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শতাধিক একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ এবং চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় কয়েক দিনের ঝড়ে বিদ্যুতের লাইনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। এতে ১০টি কাঁচাঘর সম্পূর্ণ ও আটটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শতাধিক গাছপালা ভেঙে যায়। এ সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে ওই গ্রামের ইউসুফ মিয়ার পুত্রবধূ সুমি আক্তার (২২), নাতি মো. ইমরান (৪), ছেলে মো. রাজন (১২) ও হযরত আলী (১৬)। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. নোমান বলেন, ‘ঝড়ে ১৮টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। উপজেলায় কোনো বরাদ্দ নেই বলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক কোনো সহায়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জেলায় তালিকা পাঠানো হবে, সেখান থেকে বরাদ্দ এলে বিতরণ করা যাবে।’  টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির তোড়ে সরাইল উপজেলার হাওরবেষ্টিত অরুয়াইল, পাকশিমুল, চুন্টা, কালীকচ্ছ, নোয়াগাঁও ও শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শতাধিক একর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। আংশিক তলিয়ে গেছে আরও অর্ধশতাধিক একর জমির ধান। শাহজাদাপুর গ্রামের কৃষক মামুন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকার জমিতে শুধু একটি ফসলই (বোরো) হয়। এ বছর আগাম বৃষ্টিতে কিছু তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এমনটি হলে সব শেষ হয়ে যাবে।’ সরাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, সরাইল উপজেলার হাওর এলাকায় প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। সেখানে শুধু একটি ফসল হয়। পানি দ্রুত সরে গেলে কৃষকদের সামান্যই ক্ষতি হবে।
আর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে কয়েক দফা ঝড়ে উপজেলার কয়েকটি স্থানে ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি ভেঙেছে। এসব স্থানে মেরামত কাজ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে গত সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল নয়টা পর্যন্ত কয়েক দফা ঝড় আর বৃষ্টিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর জানকি ছড়া এলাকায় দুটি বড় আকারের গাছ ভেঙে পড়ে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের ওপর। এ ছাড়া গতকাল সকালের ঝড়ে কুলাউড়া উপজেলার রবির বাজার এলাকায় ১১ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের ৬টি খুঁটি ভেঙে যায়। পবিস কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোবারক হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝে সঠিকভাবে মেরামত কাজ করা যাচ্ছিল না বলে গত সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার বেলা দুইটা পর্যন্ত কমলগঞ্জে বিদ্যুৎ ছিল না। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকি ছড়ায় তারের ওপর পড়ে থাকা গাছ অপসারণ করে বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে মঙ্গলবার বেলা দুইটায় আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হয়েছে। এখন অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা যায়নি। মতলব দক্ষিণ উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে একাধিক স্থানে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত সোমবার সকাল আটটা থেকে গতকাল বেলা দুইটা পর্যন্ত বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ থাকে। দুইটার পর বিদ্যুতের সরবরাহ পুনরায় চালু হয়। এতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাভুক্ত ১৩০টি গ্রামের প্রায় ৩২ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েন।

No comments

Powered by Blogger.