নিউ ইয়র্কে বিচারের মুখে বাংলাদেশের কূটনীতিক

যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বাংলাদেশের এক কূটনীতিক ও তার স্ত্রীকে। তারা হলেন- নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সাবেক কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনা প্রভা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের সাবেক এক গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ রানা। রানার দাবি, ক্রীতদাসের মতো অবস্থায় তাকে রেখেছিলেন তারা। তাকে দিয়ে দিনে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এমন অভিযোগে রানা যে মামলাটি করেছেন তার নম্বর ১৪-০১৯৯৩। এটি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট, সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্কে। গতকাল এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ বিষয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনও কোন রিপোর্ট আসে নি বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে বলেন, আমরা নিউ ইয়র্ক মিশনের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। রিপোর্ট এখনও আসে নি। রয়টার্স-এর রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, মিশনের রিপোর্টে বিস্তারিত থাকবে। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। মনিরুল মরক্কোয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করছেন। গত বছরের ২৩শে মার্চ সস্ত্রীক তিনি নিউ ইয়র্ক ছেড়ে আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে কাজে যোগ দেন। বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন। ডিসেম্বরে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। ঢাকায় মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, নিজের সুবিধার জন্য গৃহকর্মী রানা মামলা করেছে। ওদিকে রয়টার্স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৃহকর্মী মাসুদ রানার মামলা বাতিল করে দেয়ার জন্য মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিনা প্রভা মার্কিন আদালতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ম্যানহাটানের ডিস্ট্রিক্ট জজ সিডনি স্টেইন সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, মাসুদ রানা যে মামলা করেছেন তা থেকে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের সাবেক কনসাল জেনারেল ও তার স্ত্রীকে মুক্তি দেয়া যাবে না। গত বছর মার্চে নিউ ইয়র্ক থেকে মরক্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে চলে যান মনিরুল ইসলাম। এর অল্প কিছু দিন আগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন মাসুদ রানা। এতে তিনি বকেয়া বেতন ও ক্ষতিপূরণের মামলা করেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবড়াগাড়ে আটক নিয়ে যখন ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র তার কিছুদিন পরেই ওই মামলা করেন মাসুদ রানা। ওদিকে মনিরুল ইসলামের পক্ষে তার আইনজীবী আদালতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মঙ্গলবার কোন মন্তব্য করেন নি। তবে তিনি বলেছেন, তার মক্কেল অভিযোগের বিরুদ্ধে জোর লড়াই চালিয়ে যাবেন। রিপোর্টে বলা হয়, মাসুদ রানা বাংলাদেশী নাগরিক। তিনি এ-৩ ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি মামলায় বলেছেন, মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাকে নিউ ইয়র্কে কাজ নিতে  প্রলুব্ধ করে। বলে তাকে মাসে ৩০০০ ডলার বেতন দেয়া হবে। নবায়ন করা হবে তার ভিসা। পক্ষান্তরে তার অভিযোগ অনুসারে, ওই পরিবারের সঙ্গে প্রায় দেড় মাস অবস্থান করেন মাসুদ রানা। কিন্তু তাকে কখনও বেতন দেয়া হয় নি। জোর করে তাকে দিয়ে দিনে ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা কাজ করানো হতো। করা হতো শারীরিক নির্যাতন। তাকে বাধ্য করা হতো বিভিন্ন কাজে। নিঃসঙ্গ করে রাখা হতো। কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো। পালানোর চেষ্টা করলে দেয়া হতো প্রাণহানির হুমকি। বিচারক সিডনি স্টেইন বলেন, মামলার নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে, রানাকে বিবাদীরা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মাঝে মধ্যেই তাকে দিয়ে বাংলাদেশ কনসুলেটের বিভিন্ন ইভেন্টে, অনুষ্ঠানে রান্না করানো হতো। তবে কনসুলার থেকে তাকে পর্যাপ্ত অর্থ দেয়া হতো না। আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান ডেচার্টের আইনজীবী এমিলি শেয়া প্রতিনিধিত্ব করছেন মাসুদ রানার। তিনি বিচারকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রানাকে বিবাদীরা ক্রীতদাসের মতো রেখেছিলেন। রানা যা চান এই রায়ের মাধ্যমে তিনি এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। এ বিষয়ে রয়টার্স বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.