খোলা হয়েছে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের তালা, কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড, বন্ধ একটি স্কুল

(ছবি:২- বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা খুলে নেওয়ার পর এভাবে ফটকের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। ছবি:২- মহিলা দলের সভানেত্রীর নেতৃত্বে সংগঠনের কয়েকজন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রিকশাভ্যানে করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের উদ্দেশে যান। ছবি: আবদুস সালাম) রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা খুলে নিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তালাটি খোলা হয়। খালেদা জিয়া এখনো ওই কার্যালয়ের ভেতরে রয়েছেন। সকাল থেকে গুলশানের এই কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের মহিলা সদস্যরা অবস্থান নেন। ফটকের দুই পাশে দাঁড়ানো ছিলেন পুরুষ পুলিশ সদস্যরা। এ কারণে বাইরে থেকে গেটের তালার অবস্থা দেখার সুযোগ ছিল না। এর মধ্যেই ওই ফটকের তালা খুলে নেয় পুলিশ। এ সময় কার্যালয়ের একপাশে আগের মতো একটি জলকামান ও দুটি প্রিজন ভ্যান রাখা ছিল। তালা খুলে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সরকারিভাবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার জন্য দেওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নাজিম উদ্দিন জানান, তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের পাহারা আগের মতোই আছে। এর আগে সকালে গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের প্রধান গেট তালাবদ্ধ। পকেট গেট খোলা। এই দরজা দিয়ে স্বজনেরা তাঁকে খাবার সরবরাহ করছেন। গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) ফিরোজ আহমেদের দাবি, ওই এলাকায় প্রায় ২০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এ ছাড়া বাসা ও এর আশপাশে সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
খালেদার জন্য মাছ-মোরগ-দই
গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ের ভেতরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও অন্যদের জন্য মাছ, মোরগ, কাঁচাবাজার, ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসেন মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী। তবে পুলিশি বাধায় তাঁরা তা দিতে পারেননি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফার নেতৃত্বে সংগঠনের ১২-১৩ জনের একটি দল রিকশাভ্যানে করে এসব খাদ্যসামগ্রী নিয়ে রাজনৈতিক কার্যালয়ের উদ্দেশে যান। কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ২০-২৫ গজ দূরে রিকশাভ্যানসহ মহিলা দলের নেত্রীদের থামিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর নুরে আরা সাফা ও ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সুলতানা আহমেদ খালি হাতে হেঁটে কার্যালয়ের ভেতরে যান। তাঁরা সেখানে ১৫ মিনিট অবস্থান করেন। কার্যালয় থেকে বেরিয়ে সুলতানা আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, নেত্রী অসুস্থ। ভেতরে সবাই যন্ত্রণায় কাতর। খাবার, ফলমূল, ওষুধ নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ তা ভেতরে নিতে দেয়নি। এখন তাঁদের (ভেতরে অবস্থানরত) ভাতেও মারা হচ্ছে। পানিতেও মারা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছে কি না—জানতে চাইলে মহিলা দলের এই দুই নেত্রী বিষয়টি এড়িয়ে যান। সুলতানা আহমেদ বলেন, দেখা করাটা মূল বিষয় নয়। তিনি অসুস্থ—এটাই বড় কথা। তাঁর নির্দেশনাই আসল। রিকশাভ্যানটির কাছে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কয়েকটি বড় আকারের জ্যান্ত মোরগ, রুই মাছ, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, গাজর, বিভিন্ন ধরনের সবজি, পাকা কলা, আপেল, কমলা, প্যাকেট নুডলস, মিষ্টি, দই, ওষুধ প্রভৃতি রয়েছে।
কত টাকার বাজার করা হয়েছে—জানতে চাইলে মহিলা দলের নেত্রীরা বলেন, টাকাটা মুখ্য নয়। আমরা এগুলো দিতে এসেছিলাম, কিন্তু পারলাম না। এদিকে বাজার দিতে আসা ১২-১৩ জনের মধ্যে মাত্র দুজন কার্যালয়ের ভেতরে যাওয়ায় বাকি কয়েকজন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাঁরা এ নিয়ে বিবাদও করেছেন। বেলা একটার দিকে মহিলা দলের নেত্রীরা চলে গেলে ভ্যানটিও তাঁদের সঙ্গে এলাকা ত্যাগ করে।
খালেদার কার্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড, বন্ধ একটি স্কুল by কমল জোহা খানরাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ৫ জানুয়ারি থেকে পুলিশি ব্যারিকেড দেওয়ায় কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম। স্কুলটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের বিপরীত পাশে ৮৬ নম্বর সড়কে অবস্থিত। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।
জানা গেছে, গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনেই পুলিশি ব্যারিকেড দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে সাহস পাচ্ছে না। এ ছাড়া গতকাল বুধবার পর্যন্ত এই সড়কে কাউকেই ঢুকতে দেয়নি পুলিশ।
শিক্ষকদের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ স্কুলে এলেও পুলিশ এই সড়কে শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেয়নি। স্কুলের সামনে থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ফটকের সামনে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও পুলিশ তা শোনেনি।
স্কুলটির নবম শ্রেণির ছাত্র মাসুদ রানা আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলে, ‘ক্লাসে আসি না। কেউ ক্লাসে আসার সাহস পায় না। আজ ঢুকতে দিয়েছে, তাই ভর্তির টাকা জমা দিতে স্কুলে এসেছি।’
শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার সাহস কেন পাচ্ছে না—এমন প্রশ্ন করলে মাসুদ রানার মা মারজান বেগম জানান, ‘বুঝতেই তো পারছেন। এই অস্থিরতার মধ্যে কেউ বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাতে সাহস পায় নাকি!’
স্কুলটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন ক্লাস করানো খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর দু-একদিন পরিস্থিতি দেখব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায়। রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়ার কারণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও ক্লাস কোনো কিছুই করানো যাচ্ছে না।’

No comments

Powered by Blogger.