বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুরু

বিশ্ব ইজতেমার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত তুরাগ তীর। তাবলীগ জামায়াতের বৃহত্তর ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার থেকে শুরু হলেও আজ বৃহস্পতিবার আসরের নামাজের পর থেকেই বয়ান হবে। ইজতেমা প্রথম পর্ব ৯ই জানুয়ারি থেকে ১১ই জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এদিন মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে। ৪ দিন বিরতির পর দ্বিতীয়পর্ব ১৬ই জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ১৮ই জানুয়ারি রোববার ৫০তম বিশ্ব ইজতেমা আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছে। এতে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হবে। ইজতেমার দায়িত্বে থাকা  মুরব্বি মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন- আল্লাহর রাস্তায় যারা থাকবে তাদের অবরোধে আটকাতে পারবে না। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মুসল্লির সংখ্যা বাড়বে। তাবলীগ জামায়াত অনুসারী দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এখন টঙ্গীর তুরাগ তীরমুখী। গতকাল বুধবার থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা দল বেঁধে ইজতেমা মাঠে আসতে শুরু করেছে। তাদের একটাই মাত্র উদ্দেশ্য আল্লাহ এবং রাসুলকে পাওয়া ও আখিরাতে সুখ-শান্তিতে থাকা। গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দানের প্রবেশ পথের সবকটি’র মাথায় লাঠি হাতে জামাতবন্দি ভাইয়েরা পর্যায়ক্রমে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই ডিউটি করছেন। ভেতরে কোন রিকশা-গাড়ি বা অন্য কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারেন। আর জামাতবন্দি তাবলীগ ভাইদের পথ দেখিয়ে সাহায্য করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসাচ্ছেন সেনাবাহিনী ও র‌্যাব সদস্যরা। সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম বসিয়ে নিরাপত্তা বিধানে তত্ত্বাবধান করছেন। সঙ্গে সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশনও কট্রোল রুম বসিয়ে সকল কাজে দিকনির্দেশনাসহ পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া, বিভিন্ন সংস্থা, ওষুধ কোম্পানি ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনসমূহসহ বিভিন্ন লোকজন আগত লাখো লাখো মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে স্টল তৈরি করে প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানিগুলো অস্থায়ী মোবাইল টাওয়ার বসিয়ে আগত লাখো মুসল্লিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা দিতে প্রস্তুত। গাজীপুর সিটি করপোরেশন তৈরি স্থায়ী-অস্থায়ী বাথরুমগুলোতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েছেন এবং মশা নিধনের জন্য সেপ্র করে ওষুধ ছিটাচ্ছেন। বুধবার থেকেই জামাতবন্দি মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন এবং তারা যার যার খিত্তা ও হালকা অনুযায়ী জায়গা করে নিয়ে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত বুজুর্গ আলেমদের বয়ান শুনবেন এবং জিকির আসকারে মশগুল থাকবেন। রোববার আখেরি মোনাজাত শেষে তাদের অনেকেই জামাতবন্দি হয়ে দেশ-বিদেশে তাবলীগের দাওয়াতে বেরিয়ে পড়বেন এবং যারা জামাতবন্দি হয়ে চিল্লায় না যাবেন তারা স্ব স্ব বাড়িঘরের উদ্দেশে রওয়ানা দিবেন।  গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান প্রতিদিন ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির খোঁজখবর  নেন। দু’পর্বের ইজতেমায়ই বিশ্ব তাবলীগ জামাতের দেশী-বিদেশী বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মুরব্বিগণ বয়ান করবেন। বয়ানে তাবলীগের ছয় উসুলসহ আল্লাহর হুকুম পালন ও আল্লাহ এবং রাসুলের নৈকট্য লাভের পথ বাতলাবেন। বিশ্ব ইজতেমাকে উপলক্ষ করে ঢাকা জেলা ও গাজীপুর জেলা প্রশাসন লাখো মুসল্লিদের নিরাপত্তা দিতে পাঁচ স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের ব্যবস্থা করেছেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর রশিদ পিপি জানান, এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যরা ইজতেমা মাঠের নিরাপত্তার কাজ শুরু করেছেন। দুই পর্বেই পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আনসার ব্যাটালিয়ানসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থানের জন্য টঙ্গীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহে জায়গা করা হয়েছে। এতে করে টঙ্গীর স্কুল-কলেজও ছুটি দেয়া হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা  নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.