ইজতেমায় শিথিল হতে পারে অবরোধ

ইজতেমার সময়ে প্রত্যাহার হচ্ছে না বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের চলমান অবরোধ কর্মসূচি। তবে অবরোধ অব্যাহত রেখেই ইজতেমা অনুষ্ঠানে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করছে বিরোধী জোট। ৯-১১ই জানুয়ারি তিনদিন কর্মসূচি শিথিল করার বিষয়টিও তারা রাখছেন বিবেচনায়। এ নিয়ে গতকাল কয়েকজন সিনিয়র নেতা বৈঠকও করেছেন। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম ও জোটের তরফে অবরোধ শিথিলের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে আজ যে কোন সময় তার ঘোষণা দিতে পারে বিএনপি। গতকাল বিএনপি ও জোটের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, তাবলীগ জামাতের প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিতে এসেছিলেন। সেখানে তারা তার শারীরিক পরিস্থিতির কথা শুনে সুস্থতা কামনায় দোয়া করার কথা বলেছেন। তবে তারা বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে কোন কথা বলেননি। অবশ্যই মঙ্গলবার চেয়ারপারসন কার্যালয় থেকে বেরিয়ে প্রতিনিধি দলের নেতা মাওলানা আবদুর রহিম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, অবরোধ প্রত্যাহার প্রসঙ্গে কোন কথা হয়নি। ওদিকে নেতারা জানান, বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের একটি মিলনমেলা। প্রতিবছর ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতারা অংশ নেন। ফলে ইজতেমার ব্যাপারে একটি ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তবে ইজতেমার জন্য চলমান অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করার পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে বিএনপি ও জোটে। একপক্ষ বলছেন, ইজতেমার জন্য অবরোধ শিথিল করা হলে আন্দোলনে সাধারণ মানুষের জনসমর্থন বাড়বে। এছাড়া, ইজতেমা উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবে। অন্যথায় ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। তবে অন্যপক্ষ যুক্তি দেখিয়েছেন, একবার মাঠ ছাড়া হলে ফের আন্দোলনে ফিরে আসা কঠিন হবে। এতে সারা দেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসতে পারে। তারা ৫ই জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন থেকে সরে আসাসহ অতীতের কয়েকটি আন্দোলন কর্মসূচির উদাহরণ দিয়ে এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। নেতারা বলেন, ইজতেমা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এই বিষয়টিও দেশবাসীকে অনুধাবন করতে হবে। এব্যাপারে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, তাবলীগ জামাতের একটি দল ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে ইজতেমার দাওয়াত দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবছে দলের নীতিনির্ধারণী মহল। ইজতেমার জন্য দু’একটা দিন কর্মসূচি শিথিল করার পক্ষে যেমন যুক্তি আছে তেমনি পরিস্থিতির বিবেচনায় অব্যাহত রাখার পক্ষেও যুক্তি আছে। তবে চেয়ারপারসনের সঙ্গে নেতারা সাক্ষাৎ করতে না পারায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনার যোগ্য। তবে আমি এব্যাপারে ওয়াকিবহাল নই। এদিকে আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ব্যাপক চাপ রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। তাদের মতে, অতীতে হঠাৎ করে আন্দোলন থেকে সরে আসায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকায় অবস্থান করলেও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা অনেকেই ঘরছাড়া রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমন পরিস্থিতি আন্দোলন অব্যাহত না রাখলে আগামীতে নতুন করে কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। তৃণমূলের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরুণ অংশ। দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ গতকাল গুলশানের একটি বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার আহ্বানে সারা দেশে চলমান অবরোধ কর্মসূচি পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। চলমান এ আন্দোলনের গন্তব্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, শেখ হাসিনার বিদায় এবং নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। যে কোন মূল্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তারা ভয়কে জয় করে চলমান আন্দোলন সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। ওদিকে মঙ্গলবার অসুস্থ অবস্থায় বেশ কয়েকজন জেলা পর্যায়ের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলীয় সূত্র জানায়, এ সময় তিনি তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.