'মুসলিম-শাসিত ফ্রান্স': কাল্পনিক উপন্যাস নিয়ে হইচই

ফ্রান্সে ইসলামী শাসন কায়েম হয়েছে। মেয়েরা বোরকা পরছে, বহুবিবাহ বৈধ করা হয়েছে, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে পড়ানো হচ্ছে কুরআন। একটি সদ্যপ্রকাশিত উপন্যাসে ২০২২ সালের ফ্রান্সের এমন এক কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। ফ্রান্সের সবচেয়ে বিখ্যাত জীবিত লেখক মিশেল হুয়েলবেক-এর লেখা 'সুমিশন' (ইংরেজিতে সাবমিশন)- যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় 'সমর্পণ' আজ বুধবার বাজারে ছাড়া হয়েছে। তবে এর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু ফ্রান্সে সৃষ্টি করেছে তুমুল বিতর্ক।     লেখক মিশেল হুয়েলবেক এতে তুলে ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ফ্রান্সের এক কাল্পনিক চিত্র, যখন একটি মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতা দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন। উপন্যাসে বলা হচ্ছে এর পর ফ্রান্সে ইসলামী শাসন কায়েম হয়, এবং তার প্রভাব পড়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে। এতে মেয়েদের চাকরি না করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, এবং তার ফলে পুরুষদের কাজের সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় বেকারত্ব কমে গেছে। প্যরিসের শহরতলীগুলোতে থেকে অপরাধ উধাও হয়ে গেছে। ফ্রান্সে সম্প্রতি ইমিগ্রেশনবিরোধী ন্যাশনাল ফ্রন্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সুমিশন উপন্যাসে দেখা যায়, এর নেত্রী মেরিন লা পেনকে ঠেকাতের মূলধারার দলগুলো একজন মুসলিম নেতার পেছনে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বইটির বিরুদ্ধে সাহিত্যের ছদ্মবেশে 'ইসলামবিরোধী ভীতি ছড়ানো'র অভিযোগ এনে সমালোচনা করেছেন অনেকেই।   টিভি উপস্থাপক আলি বাদ্দু বলেছেন, "বইটি পড়ে আমি অসুস্থ বোধ করেছি, অপমানিত হয়েছি। একজন মহান ঔপন্যাসিকের বইয়ে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে আমাদের নতুন বছর শুরু হলো।" ফরাসি দার্শনিক এ্যালাঁ ফিংকেলক্রাউট অবশ্য বলেছেন, "ফ্রান্সের আশু ইসলামীকরণকে তুলে ধরে তিনি সমস্যা ঠিক যেখানে - সেখানেই হাত দিয়েছেন।" ঔপন্যাসিক মিশেল হুয়েলবেক -যিনি একবার ইসলামকে 'সবচেয়ে নির্বোধ ধর্ম' বলে আখ্যায়িত করে বিতর্কিত হয়েছিলেন - বলেছেন, তিনি উস্কানিমূলক কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এ বই লেখেননি। কুরআন আবার পড়ার পর আমার মনে হয়েছে - এটা আমি যা ভেবেছিলাম তার চাইতে ভালো। এতে আক্রমণাত্মক ধর্মযুদ্ধের চাইতে একাকী প্রার্থনাকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।মিশেল হুয়েলবেক তার কথায়, একটি মুসলিম পার্টি ফ্রান্সের রাজনীতি বদলে দিতে পারে এমন সম্ভাবনা সত্যি আছে। লা ফিগারো-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেছেন, সারা পৃথিবীতেই ধর্মের পুনরুত্থান ঘটছে, নাস্তিকতা বড় বেশি বিষণ্ণ। "আমি নিজেও এখন আর নাস্তিক নই এবং আলোকিত মানুষের শূন্যতার চাইতে ইসলামও ভালো" হুয়েলবেকের কথায়, "কুরআন আবার পড়ার পর আমার মনে হয়েছে - এটা আমি যা ভেবেছিলাম তার চাইতে ভালো। সব ধর্মের মতোই এতেও ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে, সাধারণভাবে কুরআনে আক্রমণাত্মক ধর্মযুদ্ধের চাইতে একাকী প্রার্থনাকেই উৎসাহিত করা হয়েছে।" "তাই আমি কোনো ভয় থেকে এই উপন্যাস লিখেছি বলে মনে হয় না।" বলেন মিশেল হুয়েলবেক।- বিবিসি।
প্যারিসে পত্রিকা অফিসে বন্দুকধারীর হামলা, নিহত ১২
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে চার্লি হেবদো নামে একটি বিদ্রুপাত্মক সাময়িকীর অফিসে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ১২ জন লোক নিহত এবং ৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পুলিশ বলছে, নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও দুজন পুলিশ রয়েছে।   পুলিশ আরো বলছে, বন্দুকধারীরা চিৎকার করে বলছিল, 'আমরা নবীর হয়ে প্রতিশোধ নিয়েছি।'   বন্দুকধারীরা এর পর একটি গাড়িতে করে পালিয়ে যায়। তারা বেরিয়ে যাবার সময়ও একজন পুলিশ আহত হয়।   ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওলন্দ ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছেন। সেখানে তিনি একে একটি 'বর্বর সন্ত্রাসী হামলা' বলে বর্ণনা করেছেন।   চার্লি হেবদো পত্রিকার অফিস এই রাস্তায় প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কালো পোশাক পরা দুজন লোক কালাশনিকভ রাইফেল নিয়ে পত্রিকা অফিসে ঢোকে এবং গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলির শব্দ পাওয়া যায়।   এর পর সেখান থেকে লোকজন পালাতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন। পত্রিকাটি তার সবশেষ টুইটে ইসলামিক স্টেট নেতা আল-বাগদাদিকে নিয়ে একটি কার্টুন প্রকাশ করেছিল। এই আক্রমণের পর আক্রমণকারীদের খোজে অভিযান শুরু হয়েছে এবং সারা প্যারিস জুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে। চার্লি হেবদো পত্রিকাটি আগেও হামলার শিকার হয়েছিল।   ২০১১ সালের পত্রিকাটি ইসলামের নবী মুহাম্মদকে তাকে 'প্রধান সম্পাদক' বলে উল্লেখ করার পর পত্রিকাটির অফিসে বোমা হামলা হয়। এর পরের বছর পত্রিকাটি আবার নবী মুহাম্মদের একটি কার্টুন প্রকাশ করে।   ২০০৬ সালেও এই পত্রিকাটি ড্যানিশ পত্রিকায় প্রকাশিত নবী মুহাম্মদকে নিয়ে আঁকা কার্টুন পুনর্মৃদ্রণ করেছিল, এবং তখন থেকেই তারা সবার নজরে আসে। ফ্রান্সের বর্ণবাদবিরোধী আইনে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মামলা হওয়া সত্বেও তারা বিতর্কিত কার্টুন প্রকাশ চালিয়ে গেছে। সাময়িকীটির সম্পাদক পুলিশ প্রহরায় থাকেন। সূত্র: বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.