শিগগিরই কাউন্সিল করতে পারে বিএনপি by কাফি কামাল

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগেই দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করতে পারে বিএনপি। দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন, নেতৃত্বের পুনর্বিন্যাস ও চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য অল্প সময়ের নোটিশে এ উদ্যোগ নিতে পারে দলটি। আগামী ১৩ই নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টিই আলোচনায় প্রাধান্য পেতে পারে। সূত্র জানায়, সুনির্দিষ্ট চারটি ইস্যুতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকেছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইস্যুগুলো হচ্ছে- কাউন্সিল আয়োজন, দলের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা, দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে জোটের আন্তঃসম্পর্ক রক্ষা এবং আগামী দিনের আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণ। ইস্যুগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির শীর্ষস্থানীয় তিন পর্যায় ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিকে সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের কারণে পেছানো হয়েছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পূর্বঘোষিত দিনক্ষণ। ৭ই নভেম্বর রাতে বৈঠকটি হওয়ার কথা থাকলেও সেটা ১৩ই নভেম্বর হবে। দলের দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ১০ই নভেম্বর চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ১১ই নভেম্বর দলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে বৈঠক করবেন খালেদা জিয়া। ১৩ই নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকটি হবে। প্রতিটি বৈঠক হবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে। বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা জানান, কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলের মধ্যেই কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে সারাদেশের আন্দোলনমুখী জনতাকে নেতৃত্ব দিতে দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের কোন্দল ও দ্বিধা-বিভক্তির কারণে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিজেদের মধ্যে অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব রেখে আন্দোলন সফল করা যায় না। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মতবিনিময়সহ নানাভাবে এ বিষয়টি শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে এনেছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগর, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় দলের শৃঙ্খলা ফেরার বিষয়টি পর্যালোচনা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। নেতারা জানান, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হতে পারে চেয়ারপারসনের সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের তিনটি বৈঠকে। তবে আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও নেতৃত্বের পুনর্বিন্যাস ঘটাতে অল্পসময়ের নোটিশে দলের জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করা হতে পারে। সে কাউন্সিল আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। সূত্র জানায়, জাতীয় কাউন্সিল আয়োজন করা হলে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদ নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটি থেকে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে উল্লেখযোগ্য একটি পরিবর্তন আসতে পারে। নির্বাচন নিয়ে সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ইঙ্গিতময় বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বিএনপি। দলের তরফ থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের দাবির কাছে নতি স্বীকার করতে শুরু করেছে সরকার। সূত্র জানায়, স্বল্পসময়ে সম্ভাব্য কাউন্সিল আয়োজনের মনোভাবের অন্যতম কারণ হলো প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতময় ওই বক্তব্য। নেতারা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও রায় নিয়ে বিএনপির নীরব ভূমিকায় ২০দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির একটি নীরব দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সমপ্রতি কারাগারে মানবতা বিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমের মৃত্যুর পর তার ছেলের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় দলীয় ফোরামে। দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জোটের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক রক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা হবে। কারণ দমন-পীড়ন এবং চাপ প্রয়োগ করে ২০দলীয় জোট থেকে শরিক দল জামায়াতকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানের বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা কম। আগামী দিনের আন্দোলনেও জনমত এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর জোর দেবে ২০দলীয় জোট। ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে না পারলেও আন্দোলন ব্যর্থ মনে করছেন না ২০ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলছেন, সে আন্দোলনের সফলতা হচ্ছে- ২০দলের ডাকে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেননি ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ। সরকার এখন দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখলেও একপর্যায়ে জনমতের চাপে তাদের অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হবে। তাই আগামী দিনের আন্দোলনেও জনসম্পৃক্ততার ভিত্তিতে কার্যকর কর্মসূচি প্রণয়নে জোর দেয়া হবে। কারণ জনগণ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত আছে। যদিও বিএনপি নেতারা কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারছেন না। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ত্বরিত আন্দোলনে যাওয়ার সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে আলোচনা হবে। এদিকে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের আগেই ৮ই নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ এবং ১২ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জের জনসভায় অংশ নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

No comments

Powered by Blogger.