স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ-বদলি-পদোন্নতিতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ -টিআইবি

স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এই উৎকোচ গ্রহণ করে থাকেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে টিআইবি সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দালালদের কমিশনের সম্পর্ক আছে।
তবে টিআইবি বলছে, নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে লেনদেন সব ক্ষেত্রে ঘটছে না। বেসরকারি খাতে চিকিৎসাসেবা নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে, সেটিও সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী জিডিপির পাঁচ শতাংশ ব্যয় হওয়ার কথা। বাংলাদেশে ব্যয় হচ্ছে দশমিক ৮৪ শতাংশ, বরাদ্দ দিন দিন কমছে। এটি অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। সম্পদের স্বল্পতা থাকলেও অর্জন অনেক। স্বল্প সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে সেবার মান আরও বাড়ত।

>>রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্বাস্থ্য খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে​ টিআইবি। প্রতিবেদনে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। ছবি: ফোকাস বাংলা
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি আরও বলে, স্বাস্থ্যসেবা খাতে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক মানুষ সেবা নিতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। যদিও বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান কোনো অংশেই কম নয়। কর্মস্থলে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বসবাসের উপযোগী আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার জন্য এবং ছুটিকালীন দায়িত্ব পালনে বিশেষ প্রণোদনা ভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
গবেষণায় যা পাওয়া গেল
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাডহক চিকিৎসক নিয়োগে তিন থেকে পাঁচ লাখ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বেশি টাকার লেনদেন হয় ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলায় পদায়নের ক্ষেত্রে। এ খাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হয় পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনকি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সুবিধাজনক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার জন্য আড়াই লাখ বা তার চেয়েও বেশি টাকা দিয়ে থাকেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরির অভিজ্ঞতা, জ্যেষ্ঠতা ও উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাকে বিবেচনা করা হয় না। এ ছাড়া প্রকাশনাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন, সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় পাস বা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন সন্তোষজনক কি না, তা-ও সব ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় না।
গবেষক তাসলিমা আক্তার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ তথ্য পান। এ ছাড়া ২০১২ সালে টিআইবির জাতীয় খানা জরিপ ২০১২–এর তথ্য তিনি ব্যবহার করেছেন। ওই জরিপে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারী মোট খানা ছিল ৩ হাজার ২০৮ এবং অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২৭৬ জন।
তাসলিমা বলেন, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যন্ত্রপাতি মেরামতে অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার ও মেরামতকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া পথ্য সরবরাহে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যায়। ঠিকাদার বাছাইয়েও অনিয়মের আশ্রয় নিতে দেখা যায় প্রায়ই।
গবেষণা প্রতিবেদনে বিভিন্ন আইনের সীমাবদ্ধতা ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ যেমন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন প্রয়োগে দুর্বলতার অভিযোগ তোলা হয়।

No comments

Powered by Blogger.