কিশোরগঞ্জে সাজ সাজ রব

আগামী ১২ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জ আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২০০৬ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সর্বশেষ কিশোরগঞ্জ সফর করেন। দীর্ঘ আট বছর পর সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তিনি আবার কিশোরগঞ্জ সফরে আসছেন। তার এই আগমন নিয়ে গোটা জেলায় সাজ সাজ রব। ওই দিন বিকালে কিশোরগঞ্জ সরকারি গুরুদয়াল কলেজ মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন বেগম জিয়া। অপরদিকে বেগম জিয়াকে স্বাগত জানাতে ৫৬ কিলোমিটারের ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পথে পথে নির্মাণ করা হচ্ছে ছয় শতাধিক তোরণ। কেবল সার্কিট হাউজ থেকে জনসভাস্থল গুরুদয়াল কলেজ মাঠ পর্যন্ত রাস্তাতেই শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কিশোরগঞ্জ সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পর গত ২২শে অক্টোবর চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুকের উপস্থিতিতে জেলা বিএনপি প্রস্তুতি সভা করে। পরে ২০ দলীয় জোটের একটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এতে ড. এম ওসমান ফারুককে সমন্বয়কারী করে জনসভা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শরীফুল আলমকে আহ্বায়ক এবং জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক মো. রমজান আলীকে সদস্যসচিব করা হয়। জনসভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মো. শরীফুল আলম জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন। জনসভা সংশ্লিষ্ট ৯টি উপকমিটিও গঠন করা হয় ওই বৈঠকে। এছাড়া জেলার ১৩টি উপজেলার নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শরীফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আমিরুজ্জামান ও নিজাম উদ্দিন খান নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার বাঁধনের নেতৃত্বে ৬টি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মো. শরীফুল আলম জানান, জনসভায় ৭ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে তারা আশা করছেন। সে লক্ষ্যে তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। দীর্ঘ আট বছর পর দলের প্রধান সফর করছেন। তাই নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। জনসভা উপলক্ষে শহরের বড়বাজার এলাকার ক্যাসেল সালাম হোটেলের দ্বিতীয় তলায় বিশেষ কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। গুরুদয়াল কলেজ মাঠের পূর্বদিকের ওয়াসীমুদ্দিন ছাত্রাবাস সংলগ্ন স্থানে বানানো হচ্ছে বিশাল জনসভা মঞ্চ। জনসভার জন্য এরই মধ্যে ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জনসভার কাজে অন্তত ২০০ মাইক ব্যবহার করা হবে। শরীফুল আলম বলেন, ১২ই নভেম্বর কিশোরগঞ্জের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। দলীয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ৭ই অক্টোবর বেগম জিয়া সর্বশেষ কিশোরগঞ্জ সফর করেন। তখন তিনি ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ আট বছর পর তিনি আবার সফর করছেন এই জেলা। এদিকে জেলা বিএনপি সভাপতি এডভোকেট মো. ফজলুর রহমান তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে দেশে ফিরতে পারছেন না। তার অবর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মো. শরীফুল আলম।
দলীয় একটি সূত্র জানায়, বিগত আন্দোলনের সময়ে জেলার কুলিয়ারচরে পুলিশের হাতে যুবদল নেতা হাসান আলী নিহত হন। দলের ১২০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৭০টি মামলা করা হয়। এসব মামলার মধ্যে দ্রুত বিচার আইনের দু’টি মামলায় জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেলের তিন বছর করে কারাদণ্ড ছাড়াও আরও ২৮ নেতাকর্মীর প্রত্যেকের ৩ বছর কারাদণ্ড হয়। তবে সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে দু’টি মামলাতেই ৬ মাসের জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সোহেল। এছাড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শরীফুল আলমসহ ৪৫ জন নেতাকর্মী বিভিন্ন সময়ে কারারুদ্ধ হয়েছেন। জেল, মামলা ও নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা তাই খালেদা জিয়ার সফরের খবরে উজ্জীবিত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এম ওসমান ফারুক বলেন, আগামী ১২ই নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জনসভায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষের ঢল নামবে। স্মরণকালের বৃহত্তম ওই জনসভার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা পাবে।

No comments

Powered by Blogger.