আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যা স্পষ্ট হলো by ইকবাল খন্দকার

অনেকেই ছাত্রদলের আন্দোলন নিয়ে বাঁকা কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। সেই বিষয়গুলো কী? জানাচ্ছেন ইকবাল খন্দকার

নিন্দুকেরা কথাটা প্রথমে আড়ালে আবডালে বলত। তারপর সামনাসামনিই বলতে শুরু করল। কথাটা কী? কথাটা হচ্ছেÑ বিএনপি দুর্বল হয়ে গেছে। বিএনপি আর কোনো দিন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতেও পারবে না, আন্দোলনও করতে পারবে না। ছাত্রদলের পাতিনেতারা আন্দোলন করে নিন্দুকের এসব কথাবার্তার মোক্ষম জবাব দিয়েছেন। তারা দেখিয়ে দিয়েছেন, বিএনপির মেরুদণ্ড এখনো সোজাই আছে। আর এরই মধ্য দিয়ে দিনের ফকফকা আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে, মূল বিএনপি না হলেও অন্তত ছাত্রদল আন্দোলনের ক্ষমতা রাখে। তবে আন্দোলনটা সরকারের বিরুদ্ধে না করে নিজের দলের বিরুদ্ধে কেন করছে, এই বিষয়ে কেউ কোনো প্রশ্নও করতে পারবেন না, মুখ টিপে কেউ হাসতেও পারবেন না। বোঝা গেছে কথাটা?
‘দলকানা’ বলে একটা শব্দ প্রচলিত আছে। দলকানা কিন্তু চটকানা জাতীয় কোনো শব্দ না। দলকানা মানে হচ্ছে দলের প্রতি অন্ধ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ দল যা করে তাই ভালো। দলের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। ছাত্রদলের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো, অন্যান্য দলের ছাত্রসংগঠনের মতো ছাত্রদল মোটেই দলকানা নয়। দল যা করবে, তাই তারা মেনে নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবে, এতটা অন্ধ তারা না। উচিত কথা বলতে তারা বাপকেও ছাড়ে না। বাপকেই যেখানে ছাড়ে না, সেখানে দলের মহাসচিবকে ছাড়বে? তাও আবার ভারপ্রাপ্ত। যা-ই হোক, ছাত্রদলের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেহেতু স্পষ্ট হয়েছে তারা অন্ধ ভক্তির ঊর্ধ্বে, অতএব তারা বড় সাইজের একটা সাধুবাদ পেতেই পারে।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা ভালো পদে আছেন, তারা সবাই বিপদে আছেন। কারণ সবার ঘাড়ের ওপরই একাধিক মামলা ঝুলছে। ময়লার গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ আরো ম্যালা মামলা। যে কারণে কিছু একটা হলেই বড় বড় নেতারা পুরনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে গা ঢাকা দেন। হয়তো খাটের নিচে শুয়ে মশার কামড় খেতে খেতে রাত কাটান। পদওয়ালা নেতাদের এই যে দুরবস্থা, এই দুরবস্থা দেখে কিন্তু ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের এমনিতেই পিছিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের ভাবার কথা ছিলÑ নাহ, পদ নিয়ে বিপদে পড়ার কোনো মানে হয় না। পদ না থাকাই নিরাপদ। খেয়াল করেন, তারা কিন্তু এমনটা ভাবেনি। রিস্ক থাকা সত্ত্বেও তারা পদ চাচ্ছে। পদের জন্য জান কোরবান করে দিতে চাচ্ছে। এতে কী স্পষ্ট হয়। স্পষ্ট হয় যে, তোরা যে যা বলিস ভাই, পদ আমার চাই।
সব কিছুর জন্যই হোমওয়ার্ক দরকার। যে সেক্টরে যে ভালো করছে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে ঠিকমতো হোমওয়ার্ক করছে বলেই ভালো করছে। ছাত্রদল যদি তাদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলন করতে যায়, তাহলে কি এমনি এমনি পেরে যাবে? তার আগে তাদের হোমওয়ার্ক করতে হবে না? আর হোমওয়ার্ক কখনোই বাইরে হয় না। হোম মানে হোম। ছাত্রদলের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আরো যে জিনিসটা স্পষ্ট হয়েছে তাহলো, তারা হোমওয়ার্কের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। নিজেদের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার বিষয়টা ছিল হোমওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। যেহেতু তারা নিজেদের দলের একজন আরেকজনকে অ্যাটাক করতে পেরেছে, অতএব পরে প্রতিপক্ষকে সহজেই অ্যাটাক করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.