২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াট হবে -প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৪ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছবে। এ লক্ষ্যে আগামী ৩ বছরের মধ্যে পল্লীর আরও ৩০ লাখ পরিবারকে সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস)-এর আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) কর্তৃক দেশে ৩০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গ্রামের মানুষের কাছে এখন বিদ্যুৎ মৌলিক প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বিদ্যুৎ সংযোগের পরিধি বহুলাংশে বেড়েছে।
তিনি বলেন, এখনও দেশের ৩৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। দেশের বিদ্যমান ডিজেলচালিত পাম্প ও মিনি গ্রিড পর্যায়ক্রমে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প ও মিনি গ্রিড প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস সি এম জাট অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব ও ইডকল চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মেজবাহ উদ্দিন। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চর জানাজাতের ইডকল সৌরবিদ্যুতের সুবিধাভোগী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেন। দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ইডকলের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বৃহৎ ও মাঝারি অবকাঠামো উন্নয়ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করতে ১৯৯৭ সালে ইডকল প্রতিষ্ঠা করে।
প্রধানমন্ত্রী কার্বন দক্ষতাসম্পন্ন টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের জন্য সরকারি- বেসরকারি অংশীদারিত্ব, পরিবেশ-পরিকল্পনা ও প্রযুক্তিবিষয়ক রোডম্যাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ আবশ্যক। তিনি বলেন, সরকার ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, প্রচার ও প্রসারের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রূপকল্প-২০২১-এ বিকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সন্ধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরপরই সরকার ২০২১ সাল নাগাদ প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রিডলাইন সম্প্রসারণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এসব উদ্যোগ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সহায়ক হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময় এসএইচএস-এর সংখ্যা ছিল কেবল তিন লাখেরও কম, যা কেবলমাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং প্রায় দেড় কোটি লোক সৌরবিদ্যুৎ সুবিধা লাভ করে। শেখ হাসিনা বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়নের ফলে গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদে ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও এখানকার অন্যান্য পেশার লোকদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসে, শিক্ষার্থীরাও পড়াশুনার জন্য অধিক সময় পায়।
তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুৎ জনগণের আর্থ-সামাজিক জীবনেও পরিবর্তন আনে। সরকার এসএইচএস’র খরচ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ-২০ ওয়াট সোলার হোম সিস্টেম কিনতে মাত্র ১২ হাজার টাকা লাগে। এতে তিনটি লাইট জ্বলবে এবং মোবাইল ফোনও চার্জ দেয়া যাবে। কেরোসিন অথবা অন্য যে কোন জ্বালানির খরচের চেয়ে এই খরচ অনেক কম।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার বায়োগ্যাস উৎপাদন, সোলার বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প এবং আইডিসিওএল’র মাধ্যমে মিনি গ্রিড সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যন্ত ও উপকূল এলাকায় সোলার বিদ্যুতের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মূল বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে যেসব এলাকা সরাসরি সংযোগ দেয় সেখানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি এসব এলাকায় বায়োগ্যাস উৎপাদনেরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.