চামড়া পাচার

দেশ থেকে চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার আশংকা আমরা ব্যক্ত করেছিলাম ঈদুল আজহার পরপরই। অর্থনীতির চিরন্তন সূত্র অনুযায়ী সে আশংকা ব্যক্ত করা হয়েছিল। চাহিদা ও সরবরাহের সূত্রে চলে অর্থনীতি। ঈদের আগে যেমন গরুর সরবরাহ আসে প্রতিবেশী দেশ থেকে এদেশের চাহিদার টানে, তেমনি কোরবানির পর চামড়া পাড়ি জমাবে সীমান্ত পেরিয়ে সেই চাহিদার টানেই- যদি না আমরা এ বিষয়ে সতর্ক হই। তাই ট্যানারি মালিকরা যেন ন্যায্যমূল্যে চামড়া সংগ্রহ করে পাচার রোধে ভূমিকা রাখেন সে আহ্বান জানিয়েছিলাম আমরা। দুর্ভাগ্যজনক, তারা এ আহ্বানে সাড়া দেননি। তারা ঈদের আগে চামড়ার যে ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন, তা আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম। ট্যানারি মালিকদের এই বেঁধে দেয়া মূল্য মোটেই যৌক্তিক ছিল না। সবাই একাট্টা হয়ে এই মূল্য বেঁধে দেয়া সিন্ডিকেটও যৌক্তিক নয় বলেই প্রমাণিত হচ্ছে। সীমান্ত পেরিয়ে আসা গরুর মতো এখন চামড়ার সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় ট্যানারি মালিকদের কমমূল্যে চামড়া কেনার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ট্যানারি মালিকরা ব্যবসার নামে শুধু লাভ করতে চান এবং সেটা অযৌক্তিকভাবে। এ মানসিকতা, বলাই বাহুল্য, সুষ্ঠু ব্যবসায়িক মানসিকতা নয়। এ প্রবণতা গ্রহণযোগ্যও নয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা সরবরাহকারীদের জিম্মি করে কেবল বড় ব্যবসায়ীরাই যদি সব মুনাফা নিজেদের পকেটে ভরতে চান, তাহলে ব্যাহত হবে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি। বৈধ পথে লাভের সুযোগের অভাবে অবৈধ পথে লাভ খোঁজার সেই অস্বাভাবিক পথেই ঠেলে দেয়া হয়েছে মৌসুমি চামড়া ক্রেতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। গত কয়েক দিনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা বেশকিছু চামড়ার চালান আটক করেছে। হয়তো অনেক চামড়া ইতিমধ্যে পাচারও হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা আবারও দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রতি ন্যায্যমূল্যে চামড়া সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাই। অর্থনীতিকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে হবে। সিন্ডিকেট করে অর্থনীতিকে তার স্বাভাবিক পথ থেকে বিচ্যুত করা হলে সেই বিচ্যুতির মাশুল দিতে হয় রাষ্ট্রকে। আশা করি চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টরা এই সত্য উপলব্ধি করবেন।

No comments

Powered by Blogger.