কুর্দিস্তান নিয়ে ইরান-ইসরাইল বিরোধ by মোহাম্মদ শফিক

দীর্ঘ কয়েক দশক অর্থাৎ আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরানে বিপ্লবের আগে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। ওই সময় দেশ দু’টি পরস্পরের প্রতি বৈরী আরব রাষ্ট্রগুলোর হুমকি, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও কৌশলগত বিন্যাসকে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখত। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তাদের মৈত্রী রূপ নিয়েছে চরম বৈরিতায়। এই বৈরিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে লেবাননে। লেবাননে ইসরাইলের প্রতিপক্ষ হিজবুল্লাহকে অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে ইরান। পাশাপাশি ইসরাইল সৌদি আরব ও মিসরের সাথে গাঁটছড়া বাঁধে। ইসরাইলের তিন শত্রু ফিলিস্তিনের হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও সিরিয়ার বাশার সরকারকে সহায়তা করছে ইরান। তবে আঞ্চলিক রাজনীতির কৌশলগত বিন্যাসের মধ্য দিয়ে কুর্দিস্তানকে ঘিরে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে বড় ধরনের সঙ্ঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিহাস ও ভূরাজনৈতিক ঘটনাবলি সে বাস্তবতাই জানান দিচ্ছে। কুর্দিস্তান ইস্যুতে তুরস্কের মতো ইরানও স্বাধীনতার পক্ষে না হলেও স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে। বিগত দিনগুলোতে কুর্দিস্তানের সাথে তেহরানের সহযোগিতা বেশ বেড়েছে। কুর্দি গেরিলা বাহিনী পেশমার্গার সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে ইরানিরা। ইরাক-ইরান যুদ্ধকালীন কুর্দিরা ইরানের হয়ে বিপুলসংখ্যক ইরাকি সৈন্যকে হত্যা করে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ইরাকি সৈন্যদের অনেক রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়।
তেহরানের দিক থেকে উদ্বেগের কারণ হলো, ইসলামিক স্টেটের একের পর এক অগ্রযাত্রা। আর তা শুধু ইরাকজুড়েই নয়, সিরিয়ার বিশাল এলাকা নিয়েও। আইএস ইরানেও হামলা চালাতে পারে। কারণ ইসলামিক স্টেটের তিকরিতের ঘাঁটি থেকে তেহরানের দূরত্ব মাত্র ৩৫০ মাইল।
কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিশেষ বাহিনী ও গোয়েন্দারা কুর্দিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে আছে। ইসরাইল তেহরানের সরকারবিরোধী গোষ্ঠী মুজাহিদিন-ই-খালকের সহযোগিতায় ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে। ইসরাইল কুর্দি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে সুবিধা নিতে তৎপর।
ইরান চাইছে কুর্দিস্তানে সৌদি প্রভাবও হ্রাস করতে। সৌদি সহযোগিতায় মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের পতন ঘটানো হয়। রিয়াদ কুর্দিস্তানকে অর্থসহায়তা ছাড়াও তেল রফতানির ক্ষেত্রে সহযোগিতা দিতে চাইছে। অবরোধের কারণে অর্থসঙ্কটে থাকা তেহরানও কুর্দিস্তানকে সৌদি বলয়ে ঢোকানো ঠেকাতে কুর্দি তেল রফতানি সহায়তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের কৌশলগত বিন্যাসের ক্ষেত্রে কুর্দিস্তান গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা ভূমিকা রাখছে। ইরাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরাইল কুর্দিদের সহায়তা দিয়ে আসছে।
ইসরাইলের লক্ষ্য কথিত শক্তিশালী অংশীদারিত্বের কুর্দিস্তান বা সৌদি আরব ও ইরান উভয়ের বিরুদ্ধে ইসরাইলের ‘ভাঙন’ ধরানোর নীতি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই নিপুণভাবে কাজ করেছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনে ইসরাইলের ‘ভাঙন নীতি’ সফল। ধারাবাহিকভাবে ইরানের কুর্দি, আজেরি, বালুচ ও বাচতিয়াদের নিয়েও শঙ্কা জাগে। কারণ, ইসরাইলের রয়েছে কৌশলগত লক্ষ্য, সেই সাথে চৌকস গোয়েন্দা বাহিনী, যারা কুর্দিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। যা ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনের পাশাপাশি ইরানেও ভাঙন ধরাতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.