তেলেঙ্গানায় ৩৪৮ কৃষকের আত্মহত্যা

ঋণ থেকে বাঁচার একমাত্র পথ তাদের আত্মহত্যা! ঋণে জর্জরিত ভারতের তেলঙ্গানা রাজ্যের কৃষক রামুলু (৪৫) প্রথম এ পথ বেছে নেন। আর তার পথ ধরেই মাত্র পাঁচ মাসে আত্মহননে মুক্তি খুঁজেছেন ৩৪৮ কৃষক। চলতি বছরের ২ জুন প্রাদেশিক মর্যাদা পাওয়ার পর বুধবার তেলেঙ্গানার প্রথম বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনেই উঠে আসে কৃষকদের আত্মহত্যার এই মর্মান্তিক পরিসংখ্যান। খবর দ্য হিন্দুস্থান টাইমসের।
খেয়ে পরে বাঁচতে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছিল রামুলু। ভেবেছিল ফসলের বাম্পার ফলন ঘটিয়ে ঋণ শোধ করে দেবে। আর ছেলেমেয়েদের মুখে হাসি দেখে আবার লেগে যাবে কৃষিকর্মে। কিন্তু অনাবৃষ্টি আর ফসলহানিতে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এদিকে সময় ক্ষেপণে সুদে-আসলে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ রুপি। রামুলুর সামনে বেঁচে থাকার কোনো পথ খোলা থাকে না। জীবন-যন্ত্রণার উপশমে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ।
তেলেঙ্গানার লুগাইয়াপল্লী থানার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পল্লীর মাত্র ২৮ বছর বয়সী বাসিন্দা আনজি নায়েক কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছেন কালীপূজার দিন। আনজির মা রত্নাম বলেন, ধান, শিম, ভুট্টা ইত্যাদি ফসল চাষের কয়েকটি উদ্যোগ ব্যর্থ হলে আনজি ভেঙে পড়ে। কারণ তার ৩ লাখ রুপি ঋণও ছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, আমরা বেঁচে থাকব। কিন্তু সে বলে, কীভাবে আমি ঋণ শোধ করব? এখন কীভাবে আমার নাতি-নাতনি, বউর জীবন বাঁচবে, বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন রত্নাম।
আনজি তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের নির্বাচনী আসন গাজভেলর বাসিন্দা ছিলেন। কার্তিকের এই মন্দার সময়ে আনজিসহ মেদাক জেলার ৬৪ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষকের আত্মহত্যার ব্যাপারে সচেতন হয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষে সব সামাল দেয়া সম্ভব নয়। তবু সরকার এসব রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিছুদিন আগে মেদাকের থিম্মাকপল্লীর চার কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। লাচ্চি রেড্ডি নামের একজন কৃষক বলেন, আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব? কী খেয়ে বেঁচে থাকব? এখানে বিদ্যুৎ নাই। তিনবার বীজ বুনলাম, একবারও ফসল হল না।
চার বারের বার অল্প একটু ফসল পাইলাম। মাসে একবার মাত্র বৃষ্টি হয়। আমাদেরই খাওয়ার কিছু নাই, গরু-বাছুররে কী খাওয়ামু? রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পচারাম শ্রীনিবাস বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনাবৃষ্টি, ফসলহানির জন্য এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা সারা ভারতেই ঘটছে।
আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব? কী খেয়ে বেঁচে থাকব? এখানে বিদ্যুৎ নাই। তিনবার বীজ বুনলাম, একবারও ফসল হল না। মাসে একবার মাত্র বৃষ্টি হয়। আমাদেরই খাওয়ার কিছু নাই, গরু-বাছুররে কী খাওয়ামু?
রেড্ডি, কৃষক
আমরা কৃষকের আত্মহত্যার ব্যাপারে সচেতন হয়েছি। কিন্তু সরকারের পক্ষে সব সামাল দেয়া সম্ভব নয়
মুখ্যমন্ত্রী
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনাবৃষ্টি, ফসলহানির জন্য এ ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা সারা ভারতেই ঘটছে
কৃষিমন্ত্রী

No comments

Powered by Blogger.