সরকার হটাতে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান

বর্তমান সরকারকে ‘ভোটারবিহীন দখলদার সরকার’ আখ্যায়িত করে তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে রাজপথে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। একই সঙ্গে জনদাবি নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি আগামী ১০ই নভেম্বর নূর হোসেন  দিবসে রাজধানীতে মিছিল করারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এ সব কথা বলেন। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের জাতীয় ঐক্য হয়েই আছে। এখন প্রয়োজন তাদের আরও সুসংঘবদ্ধ করে রাজপথে নামা। তাহলেই তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ অর্জিত হবে। তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যের দলিল আছে। সেটা হলো সংবিধান। সেই সংবিধানে শোষণমুক্ত সমাজ ও মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা স্পষ্ট করে বলা আছে। এখন আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে। বাস্তবতা তাদের বোঝাতে হবে। আগামী ১০ই নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে রাজপথে মিছিল বের করার ঘোষণা দিয়ে ড. কামাল বলেন, রাজপথে মিছিল বের করার জন্য কারও অনুমতি নেয়ার দরকার নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদরা আমাদের সেই অধিকার দিয়েছেন। আমরা আগামী ১০ই নভেম্বর নূর হোসেন দিবসে মিছিল বের করবো। সেই মিছিলে কারও বাধা দেয়ার অধিকার নেই। কেউ যদি আইন করে সেটা বন্ধ করতে চায় তাহলেও সেটা যুক্তিসঙ্গত হবে না। সভাপতির বক্তৃতায় জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, রাতের অন্ধকারে যারা চুরি করে তাদের সিঁধেল চোর বলে। কিন্তু বর্তমান সরকার দিনের বেলায় কোটি কোটি মানুষের ভোট চুরি করেছে। তারা সিঁধেল চোর নয়, ডাকাত। তিনি বলেন, এখন রাজনীতিকদের হাতে আর রাজনীতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে আজ ঘিরে আছে আমলারা। তাই তিনি বাস্তবতা বুঝতে পারছেন না। দেশের জনগণ আজ পরিবর্তন চায়। দখলদার সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়। সবাইকে জাতীয় ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে ক্ষমতায় এসে সেই চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করতে হলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। জীবনের শেষ সময়ে এসে রক্ত দিয়ে হলেও তা বাস্তবায়ন করবো। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের নামে প্রবঞ্চনার পর যারা ক্ষমতায় আছে তারা দখলদার সরকার। ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- কেউ নাকি ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। দেশের জনগণের কাছে জায়গা না পেয়ে বিদেশের মুগুর ধরার চেষ্টা করছেন। ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, বিরোধী দলের আচরণেও জনগণ হতাশ। মানুষ তাদের বিশ্বাস করে না। তারা বিকল্প শক্তিকে  দেখতে চায়। আবারও লাখো মানুষকে রাজপথে এক জায়গায় করতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। তাদের আমরা বলতে পারবো- আমাদের হাতে রক্তের দাগ নেই। ডাকসুর সাবেক আরেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, দেশে নির্বাচনের নামে সার্কাস হয়েছে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা দখলদারের মতো। তারা মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা হরণ করেছে। এর জন্যই কি আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম? তিনি বলেন, ৭১ সালে যেভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলাম আবারও সেভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশ ছিল দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আরেকটি ছিল রাজাকারের শক্তি। কিন্তু আজ মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তি হারিয়ে গেছে। দেশ পরিচালনা করছে রাজাকারের পক্ষের শক্তি। তিনি বলেন, মানুষ এই সরকারের দুঃশাসন থেকে পরিত্রাণ চায়। রাজপথে ঐক্য গড়ে তুলে সরকারের দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। আলোচনা সভায় জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, জেএসডির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি কামালউদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

No comments

Powered by Blogger.