৭ নভেম্বর অপশক্তিকে পরাজিত করে জনগণ: তারেক রহমান

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ তথা গনবাহিনীকে ১৯৭৫ সালে জনগণ অপশক্তি হিসাবে চিহ্নিত করেছে। সেই সময় প্রথমে আওয়ামী বাকশালী অপশক্তিকে পরাস্ত করে গনবাহিনী।  আর ৭ নভেম্বর সেনা ও জনগণের মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সকল অপশক্তিকে পরাজিত করে জনগণ। তিনি বলেন, এখন আবার এইসব পরাজিত অপশক্তি ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়ে মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে। তিনি সবাইকে এইসব অপশক্তির বিরুদ্ধে  সতর্ক থাকার আহবান জানান। ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত পাঁচদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের চতুর্থ দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার লন্ডনে দি অ্যাট্রিয়াম অডিটরিয়ামে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন কয়সর এম আহমেদ। তারেক রহমান বলেন, “শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহী মামলা করা প্রয়োজন। কারণ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেই তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে তিনি পাকিস্তানি নাগরিক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও শেখ মুজিব স্বেচ্ছায় পাকিস্তানের পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের অবৈধ রাষ্ট্রপতি।” তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, “শেখ মুজিব ৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, ২৫ মার্চও দেননি বরং তাজউদ্দিন আহমেদ তাকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার আহবান জানালে তিনি তাকে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেন। এসব তথ্য কি মিথ্যে?” তিনি বলেন, “শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই দেখেননি। দেখেননি তাদের দুঃখ, কষ্ট ও বীরত্বগাঁথা। এ কারণে পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে ফিরে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েই শেখ মুজিব কার্যত মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। লালঘোড়া দাবড়ানোর নামে নির্বিচার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা তিনিই শুরু করেন। জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ছেড়ে দেন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভুমিকা রাখতে না পারার লজ্জা শেখ মুজিবের ছিল। মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন তাদের সঙ্গে শেখ মুজিব কখনোই সহজ হতে পারেননি। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদও তার রোষানল থেকে বাঁচতে পারেননি।” তারেক রহমান বলেন, “সর্বহারা পার্টি নেতা সিরাজ সিকদারকে বিনা বিচারে হত্যা করে শেখ মুজিব ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলেছিলেন, কোথায় সেই সিরাজ সিকদার ? বিরোধী দলের একজন রাজনৈতিক দলের নেতাকে বিনাবিচারে হত্যা করে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এভাবে দম্ভ করে জাতীয় সংসদকে কলংকিত করেছিলেন শেখ মুজিব। পিতার মতো অন্যায়ভাবে এখন সেই সংসদ বিনাভোটের কথিত এমপি দিয়ে দখল করে রেখেছেন শেখ হাসিনা। ” তিনি বলেন, “জনগণকে শেখ মুজিব বিশ্বাস করতে পারেননি। পিতার মতো জনগণের প্রতি শেখ হাসিনারও আস্থা নেই। তাই সংসদ কিংবা সরকার গড়তে তাদের জনগণের ভোট কিংবা সমর্থনের প্রয়োজন হয়না। তিনি বলেন, জোর খাটিয়ে কিংবা রাজাকার আখ্যা দেয়ার ভয় দেখিয়ে শেখ মুজিবের পক্ষে যতই মিথ্যা ইতিহাস রচনা করা হোক, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসটি শেখ মুজিব আনন্দের সঙ্গে উদযাপনের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম বিজয় দিবসেই অর্থাৎ ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সর্বহারা পার্টি আধাবেলা হরতাল ডাকতে বাধ্য হয়। ৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও হরতাল ডাকে সর্বহারা পার্র্টি।”   তারেক রহমান বলেন, “১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের মেধা ও বিচক্ষণতায় বাংলাদেশ অরাজকতা ও বিশৃংখলতা থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণ তাহের- ইনুদের ষড়যন্ত্র প্রত্যাখ্যান করেছে। তারেক রহমান অভিযোগ করে বলেন, তাহের-ইনু চক্র চেয়েছিল জিয়াউর রহমানের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে। ৭ নভেম্বর এই চক্রটি জনপ্রিয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের কাঁধে ভর করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চেয়েছিল। কিন্তু অসম সাহসী বিচক্ষণ ও দেশপ্রেমিক জিয়াউর রহমান ইনু-তাহের চক্রের পাতা ফাঁদে পা দেননি। নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যর্থ হয়ে এরা এখন মিথ্যাচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়। ” তারেক রহমান বলেন, “এই চক্রটি এতদিন প্রচার করে আসছিল, ৭ নভেম্বর নাকি ক্যান্টমেন্টের বন্দীদশা থেকে তারা জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিল। তবে জিয়াকে ঘিরে  ইনু তাদের ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান ২০১০ সালে ৭ নভেম্বর সংখ্যায় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হাসানুল হক ইনু‘র একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। সেখানে ইনু বলেন, ‘তাহের ও আমার মূল পরিকল্পনায় জিয়াকে গ্রেফতার করে আনার নির্দেশ ছিল। হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদারের দায়িত্ব ছিল বন্দী জিয়াকে মুক্ত করা এবং তাকে ৩৩৬ নম্বর এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় নিয়ে আসা। সেখানে তাহের ও আমি জিয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আমাদের এ পরিকল্পনা সফল হয়নি’।” সভায় তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন, একটি রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সম্মান মর্যাদা নিয়মানুবর্তিতা এবং চেইন অব কমান্ড রক্ষার স্বার্থেই ইনুর এই বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া প্রয়োজন। কোনো বৈধ ও আইনানুগ কর্তৃপক্ষ ছাড়া একজন সামরিক কর্মকর্তাকে এভাবে কেউ গ্রেফতারের আদেশ দিতে পারেন কি না? কোন ক্ষমতাবলে ইনু একজন সামরিক কর্মকর্তাকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে গ্রেফতারের আদেশ দিতে ঔদ্ধ্যত্য দেখিয়েছিলেন?  এতে কি প্রমাণিত হয় না যে ইনু-তাহের সেনাবাহীনিতে বিশৃংখলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছিলেন। অপরাধ কখনো তামাদি হয় না। এর জন্য অবশ্যই ইনুকে জবাবদিহি করতে হবে।” তারেক রহমান বলেন, “এই অপশক্তির মনে রাখা প্রয়োজন, জিয়াউর রহমানের মত এমন একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের ক্ষমতার জন্য কোনো ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিতে হয় না। ৭৫ ’র পরাজিত এই অপশক্তি এখন নিজেদের দোষ ঢাকতে তাদের অপপ্রচারের টার্গেট বানিয়েছে বিএনপি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানকে।”   তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তন কিংবা ৭ নভেম্বরের সিপাহী জনতার স্বতঃষ্ফূর্ত অভ্যুত্থান কোনো ঘটনাতেই জিয়াউর রহমান ক্ষমতার লোভ দেখাননি। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট  ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান পরিণত হন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীকে। ” সভায় আরো বক্তৃতা করেন, তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, যুক্তরাজ্য যুবদলের আহবায়ক দেওয়ান মোকাদ্দেম চৌধুরী নেওয়াজ, যুক্তরাজ্য স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক নাসির আহমেদ শাহীন, যুক্তরাজ্য জাসাসের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন,  যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী তরুণ দলের যুগ্ম আহবায়ক শরফরাজ শরফুসহ অনেকে। সভায় জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবনের সামগ্রিক দিক তুলে ধরে তারেক রহমানের শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপদেষ্টা মাহদী আমীনের একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়াও যুক্তরাজ্য জাসাসের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানেরর ওপর লেখা একটি গানও প্রদর্শিত হয়। এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী রিজিয়া পারভীন।    তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান অবৈধ সরকারের অবৈধ তথ্যমন্ত্রী সেই সময়কার ইনু চক্র তখন ছিল শেখ মুজিবের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জাসদের গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল, ‘খুনি মুজিব খুন হয়েছে: অত্যাচারীর পতন অনিবার্য।’ শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের পর বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে বঙ্গভবনে বিজয়ীর বেশে শলাপরামর্শে অংশ নেন কর্নেল তাহের ও হাসানুল হক ইনু । দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, যে ইনু চক্র ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল কিংবা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি ইন্ধন যুগিয়েছিল। ক্ষমতার লোভে সেই জঙ্গি ইনু এখন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক লাঠিয়াল, প্রধান মুখপাত্র।”   তারেক রহমান প্রশ্ন করেন, শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের সঙ্গে ইনুদের সংশ্লিষ্টতা না থাকলে খন্দকার মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে সেই সময় তাহের-ইনু বাহিনীর ভুমিকা কি ছিল? খন্দকার মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররাফ অভ্যুত্থান করলে তাহের- ইনু‘র ভুমিকা কার পক্ষে ছিল, খন্দকার মোশতাক আহমেদ নাকি ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ?”   ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বর দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টের উদ্বৃতি দেন তারেক রহমান। রিপোর্টে বলা হয়  ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর হাসানুল হক ইনু শাহবাগস্থ বেতার ভবনে গিয়ে অভ্যুত্থানের নায়কদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রতি সর্বান্তকরণে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি একা যাননি, গিয়েছিলেন লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের সঙ্গে। তাহের তখন জাসদের গণবাহিনীর অধিনায়ক, আর ইনু ছিলেন গণবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশনার’।” তারেক রহমান বলেন, “বর্তমান অবৈধ সরকারের আরেক অবৈধ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দল ইউপিপি শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট এক বিবৃতিতে বলে,..‘মুজিবের অপসারণে জনগণ উল্লসিত। তার মৃত্যু কারও মনে সামান্যতম সমবেদনা বা দুঃখ জাগায়নি, জাগাতে পারে না’। এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয় শেখ মুজিব হত্যার দায় ইনু কিংবা মেননরা এড়াতে পারেন না।’ রক্ষীবাহিনীকে খুনি ও বর্বরবাহিনী উল্লেখ করে সাংবাদিক ও গবেষক আহমেদ মুসা লিখিত বই ‘ইতিহাসের কাঠগড়ায় আওয়ামী লীগ' বই থেকে একটি ঘটনার উদাহরণ দেন তারেক রহমান। বইটিতে রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনের শিকার বাজিতপুরের ইকুরটিয়া গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক আব্দুল আলীর অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরেন। আব্দুল আলী বলেন, ‘....ওইখানে আমাকে (আব্দুল আলী) ও আমার ছেলে রশিদকে হাত-পা বেঁধে তারা খুব মারল। রশিদকে আমার চোখের সামনে গুলি করল। ঢলে পড়ল বাপ আমার। একটা কসাই আমার হাতে একটা কুঠার দিয়ে বলল, তোর নিজের হাতে ছেলের গলা কেটে দে, ফুটবল খেলব তার মাথা দিয়ে। আমার মুখে রা‘ নেই। না দিলে বলল তারা, তোরও রেহাই নেই। কিন্তু আমি কি তা পারি? আমি যে বাপ। একটানা দেড় ঘণ্টা মারার পর আমার বুকে ও পিঠে বন্দুক ধরল। শেষে নিজের হাতে কেটে দিলাম ছেলের মাথা। আল্লাহ কি সহ্য করবে?’। তারেক রহমান বলেন , “পিতার মতো শেখ হাসিনারও ভরসা এখন নিষ্ঠুর র্যাব।”     তারেক রহমান বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার শুধু  অবৈধই নয়, কুইক রেন্টালের ভর্তুকির নামে শেখ হাসিনা জনগণের ৩৪ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। অথচ বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশ। এই দুর্নীতিবাজ সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকীর সম্মুখীন।” এই অবস্থায় দেশ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহবানে দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানান তিনি।   সভায় অরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি‘র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এম এ মালেক, তারেক রহমানের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, গাজীপুর জেলা বিএনপি‘র সাধারণ সম্পাদক কাজী সায়েদুল ইসলাম বাবুল, জাতীয়তাবাদী  স্বেচ্ছাসেবক দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পারভেজ মল্লিক প্রমুখ।   ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট এবং ৭ নভেম্বরের পুর্বাপর ঘটনার ব্যাপারে কিছু সুনির্দ্দিষ্ট তথ্য উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন,  “এইসব ঘটনাগুলো তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে, যাতে ইতিহাস বিকৃত করে কেউ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে না পারে।”   এ বিষয়ে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন তারেক রহমান।  ১. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যার পর বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। গঠন করেন মন্ত্রিসভা। শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভার প্রায় সকলেই মোশতাকের মন্ত্রিসভার সভায় শপথ নেন। খন্দকার মোশতাক ছিলেন শেখ মুজিবের একমাত্র আদর্শ বাকশালের ৪ নং সদস্য। ২. খন্দকার মোশতাক সারাদেশে সামরিক আইন জারি করেন। ওই সময় সেনাপ্রধান ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এবং সেসময়কার জেনারেল শফিউল্লাহ। ৩. জিয়াউর রহমান সেই সময় ছিলেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ। ৪. শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পরে মোশতাকের মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে বিজয়ীর বেশে গিয়েছিল তাহের-ইনু বাহিনী এবং তৎকালীন মুজিব বিরোধী নেতারা। ৫. শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের   দশ দিন পর, অর্থাৎ ২৪ আগস্ট পর্যন্ত জেনারেল শফিউল্লাহ ছিলেন সেনাপ্রধান। ৬. রাষ্ট্রদূত হিসাবে সরকারি চাকরি কনফার্ম করার পর সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন জেনারেল শফিউল্লাহ। এরপর যথা নিয়মে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ থেকে প্রমোশন পেয়ে ২৫ আগস্ট সেনাপ্রধান হন জিয়াউর রহমান। ৭. তবে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হলেও সে সময় তিনবাহিনী প্রধানের ওপর নজীরবিহীনভাবে প্রথমবারের মতো চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ নামে একটি পদ সৃষ্টি করেন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক। সেই পদে তৎকালীন বিডিআর চিফ মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। একইসঙ্গে জেনারেল ওসমানীকে নিয়োগ করা হয় রাষ্ট্রস্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের ডিফেন্স এডভাইজর হিসেবে।        ৮. সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে জিয়াউর রহমান রক্ষীবাহিনী‘র প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী ও পেশাদার সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। ৯. ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় গৃহবন্দী করেন। ১০. জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করার পর প্রশাসনের ওপর নিজের নেতৃত্ব ও কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ৩  নভেম্বর প্রেসিডেন্ট মুশতাকের সঙ্গে নানা বিষয়ে দেন দরবার শুরু করেন। গৃহবন্দী জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রও নেয়া হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ মেজর জেনারেল হিসেবে নিজেই নিজের প্রমোশন নেন এবং নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা করেন। ১১. ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলের মধ্যে সংঘটিত হয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড। মুশতাক এবং আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মোশাররফের ভাই ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সম্মতিতে এবং জেনারেল ওসমানীর মধ্যস্থতায় ৩  নভেম্বর সন্ধ্যায় ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের সঙ্গে জড়িতরা নিরাপদে দেশত্যাগ করেন। ১২. ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন খোন্দকার মোশতাক। এরপর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সম্মতিতে বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন ৬ নভেম্বর।   ১৩. ১৫ আগস্ট থেকে মোশতাক-শফিউল্লার জারি করা সামরিক আইন বহাল থাকায় রাষ্ট্রপতি আবু সায়েম একাধারে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকেরও দায়িত্ব পালন করেন। ১৪. বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি। শেখ মুজিব পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। এর দুই দিন পর ১২ জানুয়ারি আবু সায়েমকে প্রধান বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৫. ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে পাল্টা অভ্যুত্থানে নিহত হন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ। ১৬. ৭ নভেম্বর সংঘটিত হয় সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব। শহীদ জিয়া বন্দীদশা থেকে মুক্ত হন। এরপর তিনি পুনরায় সেনাপ্রধান হিসাবে পুনর্বহাল হন।   ১৭. ১৯৭৭ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিচারপতি সায়েম। ১৮. এ সময়কালে জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান এবং উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। ১৯. ১৯৭৭ সালের ২০ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিচারপতি আবু সায়েম। ৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন জিয়াউর রহমান। দেশে সামরিক আইন বহাল থাকায় একইসঙ্গে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ১৭. ১৯৭৮ সালের ৩ জুন প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেনারেল এম এ জি ওসমানীসহ মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হবারও গৌরব অর্জন করেন শহীদ জিয়া। ১৮. ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিএনপি ২৬০টি এবং আওয়ামী লীগ ৩৯টি আসন লাভ করে। নির্বাচনে মোট ২৯টি দল অংশ নেয়। ১৯. ১৯৭৮ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের উন্নয়নে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।   ২০. এই কর্মসূচির উপর জনগণের আস্থা আছে কি না সেটি যাচাইয়ের জন্য ১৯৭৮ সালের ৩০ মে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। ২১. জিয়াউর রহমান সামরিক আইন জারি করেননি। ১৫ আগস্ট সামরিক আইন জারি করেন খোন্দকার মোশতাক। বরং জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন। ২২. জিয়াউর রহমান ইনডিমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেননি। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডিমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার বক্তব্যে তারেক রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ঘটনা, ১৯৭৫ সালের আগস্ট থেকে নভেম্বর এই সময়ের বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।

No comments

Powered by Blogger.