ভিনদেশির চোখে by একরামুল হক শামীম

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছিল। সাড়া জাগানো সেই বিজ্ঞাপনের স্লোগান ছিল 'বিউটিফুল বাংলাদেশ : স্কুল অব লাইফ, অ্যাডমিশন গোয়িং অন।' জীবন নামের স্কুল থেকে অনেক কিছুই শেখার সুযোগ রয়েছে, তাই ভর্তি হওয়ার আহ্বান অনেককে মুগ্ধ করেছিল।


সাড়ে চার মিনিটের অসাধারণ সেই বিজ্ঞাপনটির প্রশংসা করেছিল অনেকেই। বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র্য বিজ্ঞাপনটিতে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। বলা হয়েছিল দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের কথা, দুর্বার আকর্ষণে কাছে টানা পাহাড়ের কথা, এমনকি বৃষ্টির কথাও বলা হয়েছিল। 'বিউটিফুল বাংলাদেশ'কে বহির্বিশ্বে তুলে ধরার চমৎকার প্রয়াস ছিল সেই বিজ্ঞাপন। তারপর অনেক দেশের অনেক পর্যটক এসেছেন এ দেশে। ঘুরে দেখে পরিচিত হয়েছেন রূপবৈচিত্র্যের সঙ্গে। তাদের কাছে কেমন লেগেছে 'বিউটিফুল বাংলাদেশ'? পর্যটকরা ফিরে গিয়ে যেসব লেখা লেখেন তা পড়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও বিষয়গুলো জানা যায়। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের পত্রিকা দ্য নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে ছাপা হওয়া একটি লেখায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র্যের প্রসঙ্গ। এ দেশের মানুষের আনন্দময় জীবনযাপনের কথাও লেখায় এসেছে। বার্নড কুবিস্ক নামে একজন এসেছিলেন বাংলাদেশের কক্সবাজার দেখতে। কক্সবাজার দেখার পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের আরও অনেক জায়গায় গিয়েছেন। সিলেটে হজরত শাহজালালের মসজিদ দেখতে গেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরান ঢাকার অলিগলিতে। এ সময় তিনি কাছ থেকে দেখেছেন এ দেশের মানুষদের। দেশ ভ্রমণ ও মানুষ পর্যবেক্ষণের ঘটনাগুলো তিনি লেখায় তুলে ধরেছেন।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে ছাপা হওয়া লেখার শুরুটা কিছুটা নেতিবাচক বক্তব্যের মাধ্যমে। তবে সেই নেতিবাচক বক্তব্যের পর আশা জাগানিয়া বক্তব্যও রয়েছে। লেখার শুরুতেই বার্নড কুবিস্ক লিখেছেন, সংবাদপত্রের অনেক শিরোনামে বাংলাদেশের নেতিবাচক খবরের কথা উঠে আসে। এ দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দারিদ্র্যসহ অনেক বিষয় খবর হয়। এসব পড়ে মনে হয় দেশটি ভীতিকর কোনো স্থান। তবে দেশটিতে না গেলে বোঝা যাবে না কত মনোমুগ্ধকর স্থান রয়েছে সেখানে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যময় অনেক স্থান সেখানে রয়েছে। দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার পর্যটকদের মুগ্ধ করবেই। নগর ঢাকা ঘুরে বেড়ানোর প্রসঙ্গও এসেছে বার্নড কুবিস্কের লেখায়। ঢাকাকে তিনি তুলে ধরেছেন ঘনবসতিসম্পন্ন একটি পিণ্ডিভূত নগরী হিসেবে, যেখানে ১২ থেকে ১৪ মিলিয়ন লোক বসবাস করছে। ঢাকার রাস্তায় তিনি প্রচুর রিকশা চলতে দেখেছেন। পুরান ঢাকার কোনো কোনো অলিগলিতে এক রিকশায় তিন-চারজন যাত্রীও দেখেছেন। রিকশাওয়ালার তাতে কোনো সমস্যা নেই। সে আনন্দ করতে করতে রিকশা চালাচ্ছে, মাঝেমধ্যে টুং টাং শব্দে বেল বাজাচ্ছে। প্রায় সব রিকশাতেই পেইন্টিং রয়েছে। এতে রয়েছে বাঘের মুখ, ফুটন্ত ফুল কিংবা জনপ্রিয় কোনো নায়ক-নায়িকার ছবি। ঢাকার রিকশা পেইন্টিংকে বার্নড কুবিস্কের কাছে মনে হয়েছে চলন্ত আর্ট গ্যালারি।
স্থান সম্পর্কে বর্ণনার পাশাপাশি বার্নড কুবিস্ক এ অঞ্চলের মানুষকে যেভাবে দেখেছেন তার কথাও লিখেছেন। তার মতে, এখানকার মানুষ পর্যটকদের আপন করে নেয়। কেউ কোনো বিষয় জানতে চাইলে আগ্রহ নিয়ে অনেক কিছুই জানায়। কোনো পর্যটক যদি কারও ছবি তুলতে চায় তাহলে দূর থেকে তোলার প্রয়োজন নেই। কারণ এখানকার মানুষ ছবির বিষয়বস্তু হতে পছন্দ করে। একসঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে হাসিমুখে রাজি হয়ে যায়। বার্নড কুবিস্কের মতে, বাংলাদেশে গেলে স্থানীয় লোকদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মিস করা উচিত নয়, কারণ এই লোকগুলো বন্ধুত্বপূর্ণ ও উপকারী মন নিয়ে আপনাকে স্বাগতম জানাবে।
 

No comments

Powered by Blogger.