ক্যান্সার-চিকিৎসাধীন নারীদের বন্ধ্যাত্ব ঠেকানো যাবে

ক্যান্সার চিকিৎসাধীন নারীদের জন্য সুসংবাদ এনেছেন বিজ্ঞানীরা। কেমো বা রেডিওথেরাপির কারণে কিভাবে ডিম্বাণু উৎপাদনকারী কোষের মৃত্যু হয়, অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী তা আবিষ্কার করেছেন। মৃত্যুর কারণ ঠেকিয়ে কোষগুলোকে রক্ষা করা এবং সেগুলোকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা।


এর ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন নারীদের জন্যও সন্তান ধারণের এবং সুস্থ শিশু জন্মদানের আশা তৈরি হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রিন্স হেনরি ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চের কয়েকজন গবেষক 'প্রাইমোর্ডিয়াল ফলিকল ওসাইটিস' নামের ডিম্বাণু কোষ নিয়ে গবেষণা করেন। এই কোষ থেকেই মূলত নারীদেহের ডিম্বাণু তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা জানান, ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য যে কোমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়, এর ফলে ডিম্বাণু উৎপাদনকারী এই কোষগুলোর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 'পুমা' ও 'নঙ্া' নামের দুটি প্রোটিন উৎপন্ন হওয়ার কারণে কোষগুলো মারা যায়। এ কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেক নারীই সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারান। ডিম্বাণু কমে যাওয়ায় নারীদের ঋতুচক্রও পরিণত বয়সের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। তাঁদের গবেষণাটি মলিকিউলার সেল সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোষগুলোতে পরিবর্তন ঘটানো গেলে বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে পুমা প্রোটিনের কার্যকারিতা থাকবে না। এর ফলে রেডিওথেরাপির পর কোষগুলো মারাও যাবে না। মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক জেফ কের বলেন, 'রেডিওথেরাপির কারণে কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব কোষ থেকে উৎপন্ন ডিম্বাণুতে জন্ম নেওয়া শিশু অস্বাভাবিক হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে অনেকের মধ্যে। কিন্তু আমাদের গবেষণায় খুবই আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেছে, রেডিওথেরাপির পর কোষগুলো বেঁচে থাকার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএও আগের মতো ঠিকঠাক করে নিতে পেরেছে। তারা সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার মতো ডিম্বাণু উৎপাদন করেছে। কোষগুলোকে যখন নঙ্া প্রোটিন প্রতিরোধী করা হয়, তখন বিচ্ছুরিত রশ্মির বিরুদ্ধেও তারা লড়াই করে।'
ওয়াল্টার অ্যান্ড এলিজা হল ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চের গবেষক ক্লেয়ার স্কট বলেন, 'গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে ওষুধের মাধ্যমে পুমার কার্যকারিতায় বাধা তৈরি করা যাবে।
রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি গ্রহণকারী নারীরা সন্তান ধারণক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন।' ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াও বিলম্বিত করা যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.