বস্তিতে আগুন

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেগুনবাড়ী বস্তিতে এক ভয়াবহ অগ্নিকা- সংঘটিত হয়েছে বলে দৈনিক জনকণ্ঠসহ জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বস্তির বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষ যখন নিজ নিজ কর্মস্থলে, তখন আগুনের লেলিহান শিখায় ৬০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, পুড়ে গেছে ঘরের মালামাল।


জানা যায়, রান্নার চুলা থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। যা অতিদ্রুত সমগ্র বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকা- শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার ব্রিগেড ঘটনাস্থলে আসে এবং পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।
বেগুনবাড়ীর এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভুক্তভোগীদের যে ক্ষতি হলো, তা পুষিয়ে নেয়া তাদের জন্য কষ্টকর হবে। তবুও জীবন থেমে থাকবে না। নতুন করে আবার সব গুছিয়ে নিতে হবে; জীবনের স্বাভাবিক গতিকে সচল রাখতে হবে এটাই তো নিয়ম। ঢাকা শহরের বস্তিতে আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন বস্তিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। ঘটনার দিন বা তারপরের দু’একদিন এ নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়। সমবেদনা জানানো হয়। কিন্তু দু’চারদিন যেতেই সব আগের চিত্র। বস্তির মানুষের সেই বৃত্তাবদ্ধ জীবন আগে যেমন ছিল, তেমনই থাকে। এরই পাশাপাশি চলমান থাকে জাঁকজমকপূর্ণ, কোলাহলময় বর্ণিল নাগরিক জীবন। রাজধানীর বুকে এই বৈপরীত্য বেমানান হলেও এটাই যেন বাস্তবতা।
বস্তিতে যারা বসবাস করেন, তারা অধিকাংশই শ্রমজীবী খেটে-খাওয়া মানুষ। পেটের দায়ে এদের অনেকেই গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন কাজের সন্ধানে, রুটি-রুজির তাড়নায়। সহায়-সম্বলহীন এই মানুষগুলোর আশ্রয় হয় শহরের বস্তিগুলোতে। কায়িক শ্রমের মাধ্যমে উপার্জিত সীমিত অর্থে তারা অভিজাত এলাকায় বাসা ভাড়া নিতে পারেন না। সুতরাং অবধারিত ঠিকানা এসব বস্তি। কিন্তু বস্তি হোক আর অভিজাত আবাসিক এলাকা হোক সবার প্রয়োজন এবং জীবন-যাপনের অধিকার কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করার জন্য দায়বদ্ধ। সুতরাং বস্তির দরিদ্র, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষও রাষ্ট্রের সেবামূলক কার্যক্রমের বাইরে নয়। হতভাগ্য বস্তিবাসীদের নিরাপদ জীবনযাপনের নিশ্চয়তা বিধান করা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একথা সত্যি যে, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে সব বস্তিকে রাতারাতি পাল্টে ফেলে সেখানে পুরোপুরি আবাসনযোগ্য পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। বস্তিবাসীদের কোথাও আবাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বস্তিবাসীদের জীবন যেমন অধিকতর নিরাপদ ও স্বস্তিময় হবে, তেমনি অগ্নিকা-ের মতো আকস্মিক বিপর্যয়ও বহুলাংশে এড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.