৮২তম সউদী জাতীয় দিবস-সউদী আরবের সরকার পদ্ধতি -রাজকীয় সৌদি দূতাবাস

রাজকীয় সউদী আরব বংশীয় রাজতন্ত্র দ্বারা শাসিত একটি আরব ইসলামী রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজকীয় সউদী আরব ইসলাম ও আরবদের জন্য স্বতন্ত্র ভূমিকা পালন করছে। অধিকন্তু সউদী আরব আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ দ্বারা পরিপূর্ণ ও পরিবেষ্টিত।


আন্তর্জাতিক বাজারে ধারাবাহিক এবং নিরবচ্ছিন্ন তেল সরবরাহের আয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাহায্যের হাত বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার জন্য অবদান রেখে চলেছে।
সউদীতে সরকার ব্যবস্থা ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক সে দেশের আইন-কানুন প্রণীত। নিম্নের অনুচ্ছেদগুলোতে সরকারের মৌলিক আইন বর্ণিত হলো। যেসব কানুনের ওপর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও আছে। অধিকন্তু সেগুলো ইসলাম ধর্ম ও ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবজ হিসেবে বিবেচিত।
অনুচ্ছেদ-১ : রাজকীয় সউদী আরব একটি সার্বভৌম আরব ইসলামী রাষ্ট্র। ধর্ম : ইসলাম, সংবিধান : পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ, ভাষা : আরবি, রাজধানী : রিয়াদ
অনুচ্ছেদ-৫ :(ক) সউদী সরকার ব্যবস্থা : সউদী আরবে সরকার ব্যবস্থা হবে রাজতন্ত্র।
(খ) উক্ত রাজতন্ত্রেও বংশানুক্রমিক অধিকার নির্ধারিত হবে, সউদী আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান আল-সউদ-এর পুত্র ও পৌত্রগণের দ্বারা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি উক্ত পদের জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য হবেন। মহাগ্রন্থ কোরআন ও হাদিসে নববীর আইনানুযায়ী অঙ্গীকারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
(গ) পরবর্তী রাজার উপাধি হবে যুবরাজ এবং রাজকীয় আদেশের মাধ্যমে তাঁর দায়িত্ব নির্ধারিত হবে।
(ঘ) যুবরাজ তাঁর পুরো সময়টা বাদশাহর দ্বারা নির্ধারিত দায়িত্ব ও প্রদত্ত যে কোনো কর্তব্যে উৎসর্গ করবেন।
(ঙ) বাদশাহর মৃত্যুর পর যুবরাজ পরবর্তী দায়িত্ব গ্রহণে অঙ্গীকারবদ্ধ।
অনুচ্ছেদ-৭ :সরকার তাদের ক্ষমতা পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত করবে, যেগুলো সরকারি নীতি ও রাষ্ট্রের অন্যান্য সব আইন বলে পরিগণিত হবে।
অনুচ্ছেদ-৮ : রাজকীয় সউদী আরবের সরকার পদ্ধতি ইসলামী শরিয়াহ-এর আলোকে শূরা এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
অনুচ্ছেদ-৩৬ :রাষ্ট্র দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষা করবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষেত্রে জনগণের পুনর্বাসনের সুবিধা না দেওয়া পর্যন্ত অধিগ্রহণ করবে না এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত করা হবে না।
অনুচ্ছেদ-৪৩ :বাদশাহর দরবার ও যুবরাজ পরিষদ-এর দরজা সব নাগরিকের জন্য খোলা। যে কোনো ব্যক্তি সেখানে নিঃসংকোচে ও নির্ভয়ে অভিযোগ ও দুর্দশা প্রকাশ করতে পারে। সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যে কোনো বিষয়ে যোগাযোগ ও আলোচনা করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে।
সউদী আরবের রাজতন্ত্র এবং তাদের ক্ষমতা : খাদিমুল হারামাইন বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয আল-সউদ-এর অনুপস্থিতিতে যুবরাজ সালমান বিন আব্দুল আযীয আল-সউদ বাদশাহর প্রতিনিধিত্ব করবেন। বাদশাহ আব্দুল আযীয বিন আব্দুর রহমান আল-সউদ-এর পুত্রদের মধ্য থেকে পূর্বেই বাদশাহ নির্ধারিত হতো। বর্তমানে জনগণের দ্বারা রাজপরিবারের সদস্যগণের মধ্য থেকে সর্বোত্তম পন্থায় যথাযথ ব্যক্তি উপযুক্ততার বলে অনুমোদন পাবেন। এ পদ্ধতি সংশোধন করা হয়েছিল ১৯ অক্টোবর ২০০৬ সালে।
এখন যুবরাজ নির্বাচিত হবেন নতুন 'বাইআতের' মাধ্যমে। যুবরাজ গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে বাদশাহ নির্বাচিত হবেন। সরকারের মৌলিক আইনে কোনো কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত উপস্থাপনের জন্য আইন, শাসন ও বিচার কর্তৃপক্ষের কার্যে বাদশাহর নির্দেশ বলবৎ থাকবে। প্রধানমন্ত্রীকে এই আইন এবং অন্যান্য আইন অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ কর্তব্য পালনে সহযোগিতা করবেন।
সউদী রাজতন্ত্রের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব
বাদশাহ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। বাদশাহ বাইআতের মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োজিত হবেন। বাদশাহ মন্ত্রীবর্গ, উপমন্ত্রীবর্গ এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণকে নিয়োগ দেবেন। বাদশাহ তাঁর মন্ত্রিপরিষদ বাতিল ও সংস্কার করার ক্ষমতা রাখেন। বাদশাহ শূরা কাউন্সিলের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং এর সাধারণ সচিব নিয়োগ ও দায়িত্ব প্রদান করবেন। বাদশাহ প্রদেশগুলোর আমির ও ডেপুটি আমির নিয়োগ ও তাদের দায়িত্ব প্রদান করবেন। বাদশাহ বিচারক এবং কর্মকর্তা নিয়োগ ও তাদের চাকরি বাতিল করতে পারবেন। বাদশাহ রাষ্ট্রীয় জননীতির সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করবেন। বাদশাহ সব সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা। বাদশাহ জরুরি অবস্থা জারি, জনগণের স্থানান্তর, যুদ্ধ এবং জিহাদ ঘোষণা করতে পারবেন। তিনি অন্য কোনো দেশের বাদশাহ, রাষ্ট্রীয় প্রধান এবং উচ্চপদস্থ অতিথিকে সংবর্ধনা প্রদান করবেন। তিনি বিদেশি রাষ্ট্রদূতের নিয়োগপত্র গ্রহণ করবেন এবং বিদেশে নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ প্রদান করবেন। বাদশাহ পদক ও সম্মাননা গ্রহণ করবেন। বাদশাহ তাঁর কিছু ক্ষমতা যুবরাজের মধ্যে ভাগ করে দিতে পারেন।
মন্ত্রিপরিষদ ও এর ক্রমোন্নতি ও অবয়ব
শাসনকার্যের সুবিধার জন্য প্রতিষ্ঠা থেকে পরবর্তীকালে যেসব মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় তা হলো-
১. ১৯৩০ সালে পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২. ১৯৩২ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় ৩. ১৯৪৪ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৪. ১৯৫১ সালে স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৫. ১৯৫৩ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৬. ১৯৫৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৭. ১৯৫৩ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় ৮. ১৯৫৩ সালে পানি মন্ত্রণালয় ১০. ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
১৯৫৪ সালে মন্ত্রিপরিষদ নতুন আইন প্রণয়ন করে মন্ত্রিপরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ কাউন্সিলের নিয়োগ, সংস্কার এবং বাতিল করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়।
১৯৫৮ সালে প্রণীত আইনে বাদশাহ এবং মন্ত্রিপরিষদের হাতে প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়। তারপর নতুন আইনে (সরকারের মৌলিক আইন শূরা কাউন্সিলের আইন, মন্ত্রিপরিষদ ১৯৯২/১৯৯৩ আইন) প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয় যে, শাসন কর্তৃপক্ষ হিসেবে শুধু বাদশাহ ও মন্ত্রিপরিষদ যৌথভাবে অংশগ্রহণ করবেন।
ক) বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ পদ্ধতি
১. প্রধানমন্ত্রী : বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয আল-সউদ ২. উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা ও বিমান মন্ত্রী ও মহাপরিদর্শক : যুবরাজ সালমান বিন আব্দুল আযীয আল-সউদ ৩. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী :আমির আহমদ বিন আব্দুল আযীয আল সউদ ৪. পররাষ্ট্রমন্ত্রী :আমির সউদ আল ফয়সাল বিন আব্দুল আযীয আল সউদ ৫. পৌর ও পল্লী মন্ত্রী : আমির মানসুর বিন মুতইব বিন আব্দুল আযীয আল সউদ ৬. ইরশাদ, দা'ওয়াহ, আওকাফ ও ইসলামী বিষয়ক মন্ত্রী :শাইখ সালেহ বিন আব্দুল আযীয বিন মুহাম্মাদ আল আশ শাইখ ৭. শিক্ষামন্ত্রী :আমির ফয়সাল বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আল সউদ ৮. উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী :ড. খালিদ বিন মুহাম্মাদ আল আনকারী ৯. বিচার মন্ত্রী :শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল করিম আল ঈসা ১০. পেট্রোল ও খনিজ মন্ত্রী :ইঞ্জিনিয়ার আলী বিন ইবরাহীম আন নাঈমী ১১. পরিবহন মন্ত্রী : ড. জাবারাহ বিন ঈদ আস সরিসরী ১২. বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী : ড. খালিদ আর রবি'আহ ১৩. সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী :ড. ইউসুফ বিন আহমদ আল উসাইমিন ১৪. অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী :ইঞ্জিনিয়ার খালিদ বিন মুহাম্মাদ আল কুসাইবি ১৫. স্বাস্থ্যমন্ত্রী :ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয আর রবিআহ ১৬. সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী :ড. আব্দুল আযীয বিন মুহিউদ্দীন খাজা ১৭. শ্রমমন্ত্রী :ড. আদিল আল ফকিহ ১৮. জনসেবা মন্ত্রী :ড. মুহাম্মাদ বিন আলী আল ফায়েজ ১৯. অর্থমন্ত্রী :ড. ইবরাহীম বিন আব্দুল আযীয আল আসসাফ ২০. পানি ও বিদ্যুৎমন্ত্রী :ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ বিন আবদুর রহমান আল হাসীন ২১. কৃষিমন্ত্রী : ইঞ্জিনিয়ার ফাহাদ বিন আব্দুর রহমান বিল গনীম ২২. হজমন্ত্রী : ড. ফুয়াদ বিন আব্দুস সালাম আল ফারিসি ২৩. যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী :ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মাদ জামিল বিন আহমদ মোল্লা। * প্রতিমন্ত্রী ও বাদশাহর উপদেষ্টারা রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
ক) মন্ত্রিপরিষদের প্রশাসনিক দায়িত্ব
মন্ত্রিপরিষদ ও সরকারপ্রধানের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করা।
মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা অনুমোদিত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত তথ্য তৈরি করা। প্রধানমন্ত্রী অথবা তার উপদেষ্টার যোগাযোগের ঠিকানা পর্যবেক্ষণ করা। প্রধানমন্ত্রীর আদেশের খসড়া তৈরি ও তা ইস্যু করা।
পরিষদের পারস্পরিক সহযোগিতা করা।
খ) মন্ত্রিপরিষদের সাধারণ সচিব
মন্ত্রিপরিষদের আইনানুযায়ী সাধারণ সচিব নিয়োগপ্রাপ্ত। তার দায়িত্ব ও কর্তব্য : মন্ত্রিপরিষদের কার্যক্রম তৈরি করা। সাধারণ কমিটির কার্যক্রম তৈরি করা।
মন্ত্রিপরিষদের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কার্যক্রম প্রণয়ন করা।
গ) রাজকীয় দফতর ও আদালতের দক্ষতা
১৯৫৩ সালে দফতর শাখা নামে প্রতিষ্ঠিত, এর নাম পরিবর্তন করে কোর্টের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এ শাখা মন্ত্রিপরিষদের কাছে তাদের কার্যক্রম সরবরাহ করে। এটা কাউন্সিল থেকে যে কোনো বিষয় পরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরণ করে। জনসংস্থার মাধ্যমে এটা আইন-কানুন দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ দ্বারা খসড়া তৈরি করা হয়।
ঘ) সাধারণ কমিটি
সাধারণ কমিটি ছোট মন্ত্রী পরিষদের মতো কাজ করে। সাধারণ কমিটি একজন চেয়ারম্যান ও ১৩ জন সদস্য দ্বারা গঠিত। এই কমিটির প্রত্যেক সদস্য আইন এবং চুক্তির বিষয়াবলি ছাড়া যে কোনো বিষয় স্থির করার জন্য সপ্তাহে কমপক্ষে একবার মিলিত হয়। অধিকন্তু প্রায় ১৫টি অন্যান্য উচ্চ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কমিটি ও পরিষদ রয়েছে। তাদের কার্যক্রম বা দায়িত্ব হলো_ মন্ত্রিপরিষদের বোঝা লাঘব করা।

রাজকীয় সৌদি দূতাবাস
ঢাকা, বাংলাদেশ

No comments

Powered by Blogger.