ক্যান্সারের সঙ্গে ১০ মাসের লড়াই

দিনটি ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১। ১৩ সংখ্যাটি 'অপয়া' হিসেবেই এসেছিল সে দিন। জনপ্রিয় লেখক ও নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার সংক্রমণের বিষয়টি জনসমক্ষে আসে ওই ১৩ সেপ্টেম্বর। পরদিন তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে। কিন্তু সেখান থেকে সুস্থ হয়ে তাঁর আর ফেরা হলো না।


এর আগে সিঙ্গাপুরে রুটিন মেডিক্যাল চেকআপে হুমায়ূন আহমেদের কোলন ক্যান্সার হয়েছে বলে ধারণা করেন চিকিৎসকরা। তাঁদের পরামর্শে তিনি নিউ ইয়র্ক যান।
নিউ ইয়র্কের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে তিনি ভর্তি হন। সেখানেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদের ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত চেক-আপের জন্য সিঙ্গাপুর যেতেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে সেখানে গেলে চিকিৎসকরা তাঁর কোলন ক্যান্সার হয়েছে বলে ধারণা করেন।
নিউ ইয়র্কে দীর্ঘ ১০ মাস বিশ্বসেরা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের অধীনে চিকিৎসা নেন হুমায়ূন আহমেদ। এ সময়ে বিশ্বের সেরা ক্যান্সার হাসপাতাল মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে দুই পর্বে তাঁকে ১২টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর তাঁর এমআরআই করা হয়। এর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তাঁর বৃহদান্ত্রে অস্ত্রোপাচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তার আগে ২০ দিনের জন্য প্রিয় মাতৃভূমিতে ছুটে আসেন বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই কথাসাহিত্যিক। গত ১১ মে ভোরে তিনি বাংলাদেশে আসেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-সুহৃদদের সানি্নধ্যে এই সময়টা তিনি কাটান গাজীপুরে নিজের হাতে গড়া নন্দন কানন নুহাশ পল্লীতে। এরপর ১ জুন তিনি নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে আবারও রওনা হন।
ক্যান্সার চিকিৎসার চূড়ান্ত ও শেষ ধাপে এসে হুমায়ূন আহমেদের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয় ১২ জুন নিউ ইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে। হাসপাতালের সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সার্জন ডা. জর্জ মিলারের নেতৃত্বে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। সেদিন রাত ৮টায় এ অস্ত্রোপচার শুরু হয়। দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্নও হয়। হুমায়ূন আহমেদ দ্রুত সেরে উঠবেন বলে আশাও করা হয়েছিল।
অস্ত্রোপচারের সাত দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে হুমায়ূন আহমেদকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর দুই দিন পর অস্ত্রোপাচার-পরবর্তী জটিলতা দেখা দিলে তাঁকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২১ জুন তাঁকে বেলভ্যু হাসপাতালে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করে জটিলতা নিরসনের চেষ্টা করা হয়। অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে পরপর বড় ধরনের দুটি অস্ত্রোপচারের কারণে তার সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়। সেই সঙ্গে ইনফেকশনসহ নতুন কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। সেই জটিলতা থেকে তিনি আর মুক্তি পাননি। দীর্ঘ ১০ মাসের নিরন্তর লড়াই অবশেষে থেমে গেছে গতকাল বৃহস্পতিবার।
জীবনে অনেক লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে। জীবনের শেষ ১০টি মাস অতিবাহিত করেছেন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে। মৃত্যু সে যুদ্ধ থামিয়ে দিলেও তিনি চিরবিজয়ী। তিনি বেঁচে আছেন এবং থাকবেন তাঁর বিপুল সাহিত্যকীর্তির মাঝে।

No comments

Powered by Blogger.