রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য-হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন মুজাহিদ

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সূচনা বক্তব্যে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালে মুজাহিদ হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে দুই সদস্যের (এক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ। গতকাল বৃহস্পতিবার এই সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ, কৌঁসুলি মোকলেছুর রহমান ও মীর ইকবাল হোসেন। পরে ট্রাইব্যুনাল সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৬ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
আসামির কাঠগড়ায় মুজাহিদের উপস্থিতিতে সূচনা বক্তব্যে বলা হয়, একাত্তরের অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজাহিদ ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। মুজাহিদ এ বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মতো এ বাহিনী গঠিত হয়েছিল। ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীদের আলবদরে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়, যোগ না দিলে তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারেরও হুমকি দেওয়া হয়। আসামি মুজাহিদ অল্প দিনের মধ্যে আলবদরের শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচিত হন। আলবদর বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য এ সংগঠনের বিভিন্ন অপরাধের দায়দায়িত্ব তাঁর নেতা-কর্মীদের ওপর বর্তায়।
২৯ পৃষ্ঠার লিখিত সূচনা বক্তব্যে রাষ্ট্রপক্ষ আরও বলে, একাত্তরে মুজাহিদ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে যেসব বিবৃতি দিয়েছেন, সেগুলো সেই সময়ের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সূচনা বক্তব্য শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী মুন্সি আহসান কবীর সাক্ষীদের তালিকা দাখিলের জন্য সময়ের আরজি জানান। তিনি বলেন, অভিযোগ গঠনের আদেশে নতুন একটি অভিযোগ সংযোজন করা হয়েছে। এই অভিযোগের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য ভারতে যেতে হবে, এ জন্য সময় দরকার। পরে ট্রাইব্যুনাল ২৬ আগস্ট আসামিপক্ষের সাক্ষীদের তালিকা দাখিলের দিন ধার্য করেন। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের দিনও ধার্য করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ কারাগারে আটক মুজাহিদের বিরুদ্ধে গত ২১ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ গঠন করেন এই ট্রাইব্যুনাল।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষীকে জেরা: একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হককে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো জেরা করে আসামিপক্ষ।
আসামির কাঠগড়ায় কামারুজ্জামানের উপস্থিতিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী জানতে চান, একাত্তরের পর বৃহত্তর ময়মনসিংহে দালাল আইনে যেসব মামলা হয়েছিল, তাতে কামারুজ্জামান আসামি ছিলেন কি না? জবাবে সাক্ষী বলেন, কামারুজ্জামান আসামি ছিলেন বলে শুনেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ময়মনসিংহে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধাপরাধীদের একটি তালিকা তৈরি করেছিল, তাতে এই আসামির নাম ছিল কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাম ছিল বলে শুনেছেন।
একপর্যায়ে কফিল উদ্দিন মত দেন, ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল বা পরবর্তীকালে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষীর দেখা হয়নি। হামিদুল বলেন, এটি সত্য নয়। জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় ২২ জুলাই পর্যন্ত এই মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়।
সংগ্রাম-এর প্রতিবেদন নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি: জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম-এ গতকাল ‘কাদের মোল্লার মামলায় ক্যামেরা ট্রায়াল: প্রথম নারী সাক্ষীর জেরা শেষ, দ্বিতীয় সাক্ষী ২৩ জুলাই’ শীর্ষক প্রতিবেদনের অংশবিশেষ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি নূরজাহান মুক্তা প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে বলেন, ক্যামেরা ট্রায়ালে যে নারী সাক্ষ্য দিয়েছেন, প্রতিবেদনে তাঁর নাম ও পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। ক্যামেরা ট্রায়ালে দ্বিতীয় যে নারীর সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে, তাঁরও নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি সাক্ষী ও ভিকটিমের সুরক্ষার জন্য বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানান। ট্রাইব্যুনাল জানান, বিষয়টি ২৩ জুলাই বিবেচনা করা হবে।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ ২৪ জুলাই: জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৪ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গতকাল এ দিন ধার্য করেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দ্বিতীয় সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম জবানবন্দি দিলেও তাঁর জেরা হয়নি।
এদিকে গোলাম আযমকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলেও এজলাসে তোলা হয়নি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাজতখানায় থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারাকক্ষে আটক আছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীকে কারাগারে ডিভিশন বরাদ্দের আবেদন জানিয়েছে আসামিপক্ষ। ২২ জুলাই এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা অব্যাহত: জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিনকে গতকালও সারা দিন জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। একই দিনে ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর পক্ষে করা চারটি আবেদন নিষ্পত্তি করেন।

No comments

Powered by Blogger.