ট্যাকা চাইনি, তোমরা আমার স্বামীডারে ফিরি দাও

‘আমি ট্যাকা চাইনি, তোমরা আমার স্বামীডারে ফিরি দাও। আমার ছেলিডারে নিয়ে আমি কেমন কইরে বাঁইচব।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজবাড়িতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনি আহাজারি করছিলেন আকিজ বিড়ি কারখানায় আনসারের গুলিতে নিহত মিন্টুর স্ত্রী রোজি খাতুন। এ সময় তিনি তার ১০ মাসের একমাত্র ছেলে সন্তান খুশিকে বুকে ধরে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রোজি খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। স্বামীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ পেয়েছি ৫ লাখ টাকা। আমি টাকা চাইনা, আমার স্বামীকে ফেরত চাই। আমার স্বামীর জীবনের মূল্য কখনো টাকা দিয়ে পূরণ হবে না।‘
এমনই আহাজারি নিহত আরেক শ্রমিক রাকিবুলের পরিবারের লোকজনের। এদিকে স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে স্ত্রী মিতু খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৪ মাসের ছেলে সন্তান আলিফকে নিয়ে তিনি বাড়ির বারান্দায় অবস্থায় শুয়ে রয়েছেন। অসুস্থ শরীরে স্যালাইন চলছে তার। পাশেই তার একমাত্র শিশু সন্তান আলিফ ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। বাড়িতে খাবার না থাকায় তাকে কেউ খেতেও দিচ্ছেনা।

অপরদিকে, দরজার পাশে ছেলের শোকে পাথর হয়ে বসে আছেন রাকিবুলের মা সূর্য খাতুন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছেলের জীবনের মূল্য হিসেবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কী হবে টাকা দিয়ে? আমার ছেলেকে ফেরত চাই আমি।‘

স্ত্রী মিতু খাতুন জানালেন, ‘আমার টাকা চাই না। তোমরা আমার স্বামীকে ফেরত দাও।‘
এসময় তারা দাবি জানান, যারা ছোট্ট শিশু আলিফকে পিতৃহারা করেছে, তাদের কঠিন শাস্তি হোক।

এদিকে, ঘটনার পরদিন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা যান কালা নামে আরেক শ্রমিক। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এদিকে, নিহতদের পরিবারের লোকজন বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘হত্যাকারীদের আটক করেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।‘

এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ১৩ আনসার সদস্য এবং আকিজ বিড়ি কারখানার ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলমকে আটক নয়, তাদের নিরাপদ হেফাজত হিসেবে থানাতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, রোববার কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোসেনাবাদ আকিজ বিড়ি কারখানার শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করলে কারখানায় নিরাপত্তার দাফ আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে মিন্টু, রাকিবুল ও কালা নামে ৩ শ্রমিক নিহত হয়। আহত হয় আরও ১০ শ্রমিক ।

ওই ঘটনায় নিহত মিন্টু’র ভাই সেন্টু বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে প্রকৃত হত্যাকারীদের আটক করলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

অপরদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আকিজ বিড়ি কারখানার পক্ষে কুষ্টিয়া ১ আসনের সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ ওই ৩ পরিবারকে ৫ লাখ করে টাকা হস্তান্তর করেন।

No comments

Powered by Blogger.