চরাচর-শরণার্থী দিবস by বিশ্বজিৎ পাল বাবু

'এখানে আমরা কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই না। আমরা যেতে চাই থার্ড কান্ট্রিতে- নতুবা এখানেই থাকতে চাই।' কথাগুলো ১৫ বছর বয়সী ফারুকের। বছরখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিক পি শোয়ার্জি কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে ফারুক তার কাছে এভাবেই অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে। ওই রোহিঙ্গা কিশোরের এমন কথায় সবাই চমকে উঠেছিল।


ফারুকের মতো লাখো রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বাংলাদেশে। তবে সরকারি হিসাবে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় দুটি রোহিঙ্গা শিবিরে মোট শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ সালের জুন পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের সহযোগিতায় ২০০৫ সালের জুলাই পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন ফিরে যায় স্বদেশে। বিভিন্ন সময় মাত্র ৮৫৬ জনকে পাঠানো হয় কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে। তবে প্রায় সাত বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের কাজ বন্ধ রয়েছে।
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। এমন একটি সময়ে দিবসটি পালন হতে চলেছে, যখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উত্তাল সারা দেশ। টেকনাফের নাফ নদের ওপারে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ায় রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা চালানোয় সীমান্তে সতর্ক বিজিবি। সরকারও বলছে, আর একজন রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে চাপ রয়েছে জাতিসংঘের। অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা তাদের অবস্থান নেওয়া এলাকাকে অপরাধের আখড়া বানিয়ে রেখেছে। তারা ওই এলাকার সীমান্তের চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। মাদকসহ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত তারা। খুন-খারাবিতেও জড়িত রোহিঙ্গারা। তার পরও আন্তর্জাতিক মহলের ষড়যন্ত্র রয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে না দিয়ে এটিকে সহজেই আন্তর্জাতিক ইস্যু বানানো হয়েছে। আর এই ইস্যুর রেশ ধরেই বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা বাংলাদেশে এসে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন উঁচিয়ে ধরতে কুণ্ঠাবোধ করে না। রোহিঙ্গারাও স্বদেশে ফেরার ব্যাপারে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারও যথাযথ মর্যাদায় তাদের দেশে ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের হুট করে বের করে দেওয়া না গেলেও তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ রয়েছে দেশের বিশিষ্টজনদের।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু

No comments

Powered by Blogger.