ধনী ও দরিদ্রের দৃষ্টিতে বাজেট by হায়দার আকবর খান রনো

আমরা সবাই জানি, বাজেট হচ্ছে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও পরিকল্পনা। মূল বিষয় এখানে যেটা দেখা দরকার তা হলো, আয়টা হবে কোত্থেকে এবং ব্যয়টা হবে কিভাবে। আয়ের প্রধান সূত্র দুটি- কর আদায় ও ঋণ। কর আদায় কোন শ্রেণীর কাছ থেকে নেওয়া হবে আর ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন শ্রেণী লাভবান হবে, সেটাই দেখার বিষয়।


আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ করের অংশ ৭০ শতাংশ, যা নিম্ন-আয়ের মানুষের ঘাড়ে গিয়ে পড়বে। এখানে ব্যক্তিগত আয়কর ও করপোরেট কর তুলনামূলকভাবে কম। অর্থাৎ করের বোঝাটা ধনীদের ওপর নয়। গরিবের ওপর চাপানো হয়েছে। ঋণ নেওয়া হয় ব্যাংক থেকে অথবা বিদেশ থেকে। এই ঋণের একটা বড় অংশ আত্মসাৎ করেই আমাদের দেশের ধনিক শ্রেণীর স্ফীতি ঘটেছে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করতে হয় গরিব মধ্যবিত্তের ট্যাক্স দিয়ে। অধিকাংশ প্রগতিশীল অর্থনীতিবিদ বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, এ বাজেট ধনীদের সুবিধা করে দিয়েছে এবং গরিবদের কষ্টের বোঝা বাড়িয়েছে। এই মতের সঙ্গেও আমিও একমত। তবে আমি এতে বিস্মিত হইনি। এটাই তো হওয়ার কথা। ৪০ বছর ধরে ঠিক এটাই হয়ে এসেছে। তবে আমি বিস্মিত হয়েছি, যখন দেখলাম, এতেও আমাদের ধনিক শ্রেণী ও ব্যবসায়ী শ্রেণী পুরো খুশি হয়নি। তারা আরো চায়! তাদের চাওয়ার ও পাওয়ার যেন শেষ নেই।
অর্থমন্ত্রী কর্তৃক বাজেট ঘোষণার পরপরই ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দাবি করেছে, কালো টাকার ওপর জরিমানা প্রত্যাহার করতে হবে। অর্থাৎ ধনিক শ্রেণী দুর্নীতি করে যে কালো টাকা বানাবে, তাকে বৈধ করতে হবে। এ যেন কোনো অপরাধ নয়। শাস্তি, জরিমানা- এসব কেন? এবারের বাজেটেও অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগেও দিয়েছেন। তবে বলছেন, ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের অফিশিয়াল প্রতিষ্ঠান অফিশিয়ালি বলছে, ওসব জরিমানা চলবে না। অর্থাৎ কর ফাঁকি দেওয়ার অথবা দুর্নীতি করার অর্থনৈতিক ও সামাজিক অপরাধ করার অবাধ লাইসেন্স তাদের থাকবে। জানি না তাদের এই অন্যায্য ও নির্লজ্জ দাবি মানা হবে কি না। না হলেও নিশ্চয়ই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবেন, কারণ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ তো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতিনিধিই রয়েছেন সর্বাধিক সংখ্যায় সংসদে। আমলা প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদেরই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক। তাঁরাই বড় বড় রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেন অথবা নিজেরাই দুটি বড় দলে কর্মকর্তা হয়ে বসে আছেন।
কিন্তু যে শ্রমজীবী মানুষ অর্থনীতিকে সচল রাখছে, দেশবাসীকে খাদ্য জোগান দিচ্ছে অথবা সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে, তাদের ন্যায্য দাবি কি শোনা হবে? এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা দরকার। দেশের অর্থনীতিতে অবদান কার বেশি? ব্যবসায়ী শিল্পপতি না প্রকৃত উৎপাদনশীল শ্রমজীবী জনগণের? ধরা যাক, গার্মেন্ট শিল্পের কথা। এ শিল্পই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু সেখানে কার অবদান মুখ্য? মালিকের না শ্রমিকের? যেহেতু এ শিল্পে তেমন উন্নত প্রযুক্তি লাগে না এবং পুঁজিও তেমন লাগে না। আমরা প্রধানত শ্রম দিয়ে মূল্য যোগ করি, তাই এই শিল্প থেকে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য ৯০ শতাংশ অবদান শ্রমিকের, যে শ্রমিক সবচেয়ে কম খেয়ে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে (দৈনিক ১৭/১৮ ঘণ্টা) র‌্যাব-পুলিশের গুলি খেয়ে, মার খেয়ে দেশের জন্য সমৃদ্ধি আনছে। বাজেটে তাদের কথা শোনা যায় না। হাজারটা প্রতিবন্ধকতা, ভর্তুকি হ্রাসের প্রবণতা, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, অধিক দামে কৃষি উপকরণ ক্রয় করা, বিদ্যুৎ না পাওয়া ইত্যাদি সত্ত্বেও যে কৃষক উৎপাদন অব্যাহত রেখে চলেছে, তাদের বেলায়ও কিন্তু কোনো ন্যায্য দাবি শোনা হচ্ছে না। অথচ এ দেশের উৎকট ধনিক শ্রেণী কালো টাকা উপার্জন করার ও জরিমানা ছাড়া সাদা করার প্রস্তাব করতে পারছেন। লজ্জা-শরমও নেই। তা নিয়ে কেউ ধিক্কারও দিচ্ছে না। এই ধনিক শ্রেণী এমন নির্লজ্জ ঔদ্ধত্য পায় কোথা থেকে?
ধরা যাক, কেউ যদি বলে, ওয়াসা বা বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে দেরি হলে যে ফাইন দেওয়ার নিয়ম আছে তা মানব না। সরকার কি সেই দাবি মেনে নেবে? অথবা বিনা টিকিটে রেলে চড়ার জন্য মোবাইল কোর্ট যে ফাইন করে, সেটাকে অমান্য করলে কী হবে? পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে জেলে পুরবে। রেলের টিকিট ফাঁকি দেওয়া আর কর ফাঁকি দেওয়া কি একই রকম অপরাধ নয়? কিন্তু বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণকারী গরিব মানুষ অথবা সময়মতো ওয়াসার বিল পরিশোধ করতে অক্ষম মধ্যবিত্ত কিন্তু 'ফাইন দেব না'- এমন অন্যায় দাবি করতে পারে না দুটি কারণে। কারণ তারা জানে যে এটি অন্যায় দাবি। কালো টাকার মালিক বা শোষক শ্রেণীর মতো অসৎ তারা নয়। তাদের নৈতিক বোধ আছে। দ্বিতীয়ত, তারা আর্থিকভাবে দুর্বল, রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত নয়। অন্যদিকে আসলে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যে বুর্জোয়া শ্রেণী তারা সবল, তাদের প্রতিনিধি আছে, সংসদে, মন্ত্রিসভায় এবং প্রশাসনযন্ত্রেও। উপরন্তু তাদের কাছে নৈতিকতার মূল্য কোনো দিন ছিল না, এখনো নেই। এ কথা বিনা দ্বিধায় বলা যায় যে বাংলাদেশের অধিকাংশ নব্য ধনিক ও কালো টাকার মালিকরা খুব সৎভাবে বিত্ত-সম্পদ বানায়নি। সে জন্য তারা অপরাধ করেও জরিমানা দিতে রাজি নয়। সেটা তারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে জোর গলায় ঘোষণা করে। বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধও করে না।
অবশ্য তাঁরা একটা খোঁড়া যুক্তি হাজির করছেন। সংবাদ সম্মেলনেও সে কথা বলেছেন। জরিমানা দিলে কালো টাকা বিনিয়োগে আসবে না। তাঁরা যাতে অপ্রদর্শিত আয় অথবা লুটপাতের বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় বিনিয়োগ ও উৎপাদনে কাজে লাগাতে পারেন, সেই সুযোগটা দেওয়া হোক। আসলে কালো টাকার মালিকরা দেশের উন্নয়নে কতটুকু অবদান রাখছেন সেটাও বিতর্কের বিষয়। অতীত ও বর্তমান সরকার কালো টাকা সাদা করার অনেক সুযোগ আগেও দিয়েছে। জরিমানা তো দূরের কথা, অনেক সুযোগ-সুবিধার কথাও বলা হয়েছে। স্বাভাবিক করের চেয়ে কম কর দিতে হবে, এটাও বলা হয়েছিল। কিন্তু খুব বেশি কালো টাকা সাদা হয়নি। কারণও খুব সহজ। ওই ধনিক শ্রেণী সামান্য করও দিতে রাজি নন। তাঁরা ওই টাকা দিয়ে জমি, বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ দখল করে বসে আছেন। সরকার যেহেতু তাঁদের শ্রেণীরই, তাই ভয়ভীতিরও কোনো কারণ নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা, কালো টাকার একটা বড় অংশ ইতিমধ্যেই ডলার হয়ে বিদেশে চলে গেছে। দেশের উন্নয়নে, বিনিয়োগে তাঁদের কোনো আগ্রহ নেই। তার মানে তাঁরা শুধু যে প্রতারক ও শোষক তাই-ই নয়। তাঁরা প্রধানত উৎপাদনবিমুখ এবং অদেশপ্রেমিক।
পাশাপাশি দেখা যাক সেই শ্রেণীটির কথা- যারা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে। ৪০ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক। দুই হাজার টাকা তাদের নিম্নতম মজুরি আর ২০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং মাত্র ৮০০ টাকা ঘরভাড়া ভাতা। বাজেটে ও সরকারি নীতিতে তাদের দাবি উপেক্ষিত। এই অতি নিম্ন-আয়ের, চরমভাবে শোষিত অথচ অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা গ্রহণকারী শ্রমিকদের জন্য কি সরকার সামান্যতম ভাবিত?
এ সরকার শ্রমিকবিদ্বেষী শোষক মালিক শ্রেণীর সরকার। গার্মেন্ট শ্রমিক বা গ্রামের গরিব শ্রমজীবী রেশনের জন্য তাই কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ যে কাঠামোগত সংস্কারের কর্মসূচি (Structural Adjustment Programme) চাপিয়ে দিয়েছিল আশির দশকে, সেটা এখনো চলে আসছে। ওদের নাখোশ করে তা বদলানো, রেশন ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তনের ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই বর্তমান সরকারের।
এই বাজেট কেবল ধনিক শ্রেণীর স্বার্থে, কালো টাকার মালিকদের অনুকূলের বাজেটই নয়, এটা বিদেশ নির্দেশিত বাজেটও বটে। আমি জোরের সঙ্গে বলতে পারি যে সরকার সম্প্রতি যে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করতে বাধ্য হয়েছেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী।
আইএমএফের ঋণ নিয়ে লাভবান হয়েছে, এমন একটি নজিরও আমাদের সামনে নেই। বরং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বিভিন্ন দেশের জন্য কী সর্বনাশ ডেকে এনেছে তার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত আছে। এমনকি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎস অন্দরমহল থেকে যে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন এবং তার ভিত্তিতে যে বর্ণনা দিয়েছেন (দ্রষ্টব্য Globalization and its discontent) তারপর কোনো দেশে উচিত হবে না আইএমএফের ঋণ নেওয়ার জন্য। স্টিগলিৎস 'আইএমএফের সন্ত্রাস' শব্দটি পর্যন্ত ব্যবহার করেছিলেন। আর আমরা জানি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা হচ্ছে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক হাতিয়ার। তবু কেন আমরা IMF-এর মতো দুষ্টচক্রের সঙ্গে চুক্তিতে গেলাম। আইএমএফ ঋণ দেয় যখন কোনো দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সমস্যা হয়। কিন্তু সঙ্গে জুড়ে দেয় যেসব কঠিন শর্ত, তাতে একদিকে দেশটির অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে, অন্যদিকে বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর অবাধ লুণ্ঠনের সুযোগ করে দেবে। এসব জেনেও কেন আমরা আইএমএফের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি?
কারণটি বোধ হয় এই যে কুইক রেন্টালের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা প্রায় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন হলো, বিদ্যুতের জন্য কুইক রেন্টালের পথ নিলাম কেন? এতে বিদ্যুতের ঘাটতি কমেনি। কিন্তু শর্তানুযায়ী সরকারকে দিতে হয়েছে কুইক রেন্টালের মালিকদের ব্যয়বহুল জ্বালানি। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়েছে। আর তাই যেতে হয়েছে আইএমএফের কাছে। বিনিময়ে মানতে হয়েছে তাদের শর্ত, যা দেশের জন্য ভয়াবহভাবে ক্ষতিকারক। এ এক দুষ্টচক্র। এই দুষ্টচক্রে পা বাড়ালাম কেন? একি অপরিণামদর্শিতা? না বুঝে ভুল সিদ্ধান্ত? অনেকের মতে, কোনো বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি ও পরিবারকে বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্যই কুইক রেন্টালের নীতির উদ্ভাবন ঘটেছিল। হয়তো ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ লাভবান হতে পারে । কিন্তু ব্যক্তির উন্নয়নের জন্য দেশের সর্বনাশ হয়েছে।
আইএমএফ বা অন্যান্য তথাকথিত 'দাতা' গোষ্ঠী (দাতা কথাটা আসলে সঠিক নয়, তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে প্রতারিত করার জন্য পশ্চিমা মহল এ শব্দটির সৃষ্টি করেছে) অর্থনৈতিক ও অঘোষিত রাজনৈতিক শর্ত ছাড়াও সুদ আদায় করে। এটি কোনো দান নয়। তথাকথিত দাতাগোষ্ঠী সুদাসলে ঋণের টাকা ফেরত নেবে। আমাদের দেশের কিছু রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী নানা কায়দায় এই ঋণের টাকার একটা অংশ আত্মসাৎ করে (অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের হিসাবমতে ৩০ শতাংশ) নব্য ধনীতে পরিণত হলেও সুদাসলে ঋণ কিন্তু পরিশোধ করতে হবে জনসাধারণকে।
বাংলাদেশের কিন্তু আইএমএফের কাছে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। এমনকি জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ বিদেশি ঋণ নিয়ে আমরা যে সাম্রাজ্যবাদীর স্বার্থের কাছে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছি, তারও কোনো প্রয়োজন নেই। আগামী অর্থবছরে শুধু
ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২.২ শতাংশ, যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে বেশি।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দরকারই বা কী? মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো খাতকে তো ব্যক্তি খাতের ওপর ছেড়েই দিয়েছে। তাই ইংলিশ মিডিয়াম প্রাইভেট স্কুল ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গজিয়ে উঠেছে; যেখানে লাখ লাখ টাকার বেতন দিয়ে প্রবেশাধিকার আছে শুধু ধনীদের। বড় বড় দামি দামি হাসপাতাল হয়েছে অনেক, যেখানে কেবল ১ শতাংশ ধনী লোকের চিকিৎসা হবে। আর কোটি কোটি মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিদ্যুৎ ও পানীয়জল থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ এসবই তো পণ্য, সেবা নয়। এই দর্শনেই তো বিশ্বাস করে বর্তমান সরকার। এরই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের বাজেটে। এর আগে বিএনপি যে বাজেট সম্পর্কিত ধারণা ও প্রস্তাব তুলে ধরেছিল পাঁচতারা হোটেল রুমে বসে, সেখানেও একই দর্শনের বাইরে কিছু বলা হয়নি। বস্তুত অর্থনৈতিক ও শ্রেণী বিচারে উভয়ই তো এক, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মাত্র।
রাজনীতি ও অর্থনৈতিক নীতির মতো বাজেটেরও শ্রেণী দর্শন আছে। আর ঠিক সে কারণেই ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠান সাহস দেখিয়ে বলতে পেরেছে, কালো টাকার ওপর জরিমানা দেব না।
অথচ আমাদের সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির একটি হচ্ছে সমাজতন্ত্র।

লেখক : রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.