রমজানের বাজার-দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দূর করুন

জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদ আছে_ একে তো নাচুনি বুড়ি, তার ওপর ঢোলের বাড়ি। ঢোলের বাদ্য শুনলে শখের বুড়ির নাচন থামায় কে? মেঘ ডাকলে বৃষ্টির আভাস মেলে। বাংলাদেশে বাজেট এলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। বাজেট পাস শেষে নতুন অর্থবছরের উপহার হিসেবে আরেক দফা দাম বাড়ে। রমজানের সময়েও বাড়ে।


কেন বাড়ে, সে জন্য কোনো যুক্তিযুক্ত কারণের দরকার পড়ে না। অর্থনীতির একটি তত্ত্ব আছে_ পণ্য চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি থাকলে দাম বাড়তে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এ তত্ত্ব কাজ করে না। অসাধু ব্যবসায়ীরা লাজলজ্জার মাথা কেটে নিদ্বর্িধায় বলে দিতে পারেন, 'আমরা তো এমনি এমনিই দাম বাড়াই।' এ বছর ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের যাত্রা শুরুর পক্ষকাল যেতে না যেতেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। যারা অর্থনীতির নিয়ম মেনে চলেন না, মানুষের কষ্ট বাড়াতে যাদের বিন্দুমাত্র সংকোচ নেই তাদের জন্য এটা মোক্ষম সময়। বলা যায়, সোনায় সোহাগা। সরকার এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম সচেতন বলেই মনে হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি সক্রিয় হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও সময়টি বিবেচনায় রেখেছেন। রমজান মাস শুরুর বেশ আগেই চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে ছোলা, চিনি, মটর ডাল ও ভোজ্যতেলের যথেষ্ট মজুদের পাকা খবর আছে। শনিবার সমকাল 'রমজানের প্রস্তুতি : গুদামে পণ্য, তবুও শঙ্কা' শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছে, আন্তর্জাতিক বাজার গত দুই বছরের তুলনায় নিম্নমুখী থাকায় এবার প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে খরচ পড়েছে কম। এরপরও উল্টোপথে হাঁটছে তেল, ডাল, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য। টিসিবির হিসাবে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে রমজানে বেশি চাহিদা যেসব পণ্যের সেগুলোর দাম বেড়েছে গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। একই দিনে প্রথম আলো 'রোজার পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, তবু দাম নিয়ে শঙ্কা' প্রতিবেদনে লিখেছে, সরবরাহ ভালো থাকায় রমজানে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু অসাধুতা যদি ন্যায়নীতি ও মূল্যবোধের ওপরে স্থান করে নেয় তাহলে যা হওয়ার কথা নয় সেটাও ঘটে। সরকার যেহেতু পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে আগেভাগেই সচেতন হয়েছে সে জন্য তাদের কাছে বাড়তি কিছু ভূমিকা প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। তাদের দুটি কাজ হবে, বাজারে নজরদারি বাড়ানো এবং অতিমাত্রায় মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে যারা জনগণের পকেট খালি করে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব গ্রহণ। তাদের জন্য আরেকটি কাজও গুরুত্বপূর্ণ_ সরবরাহ লাইন ঠিকঠাক রাখা। শুধু পথের ব্যবস্থা যথাযথ রাখা নয়, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সক্রিয় থাকতে হবে। পণ্যমূল্য স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনেরও ভূমিকা প্রত্যাশিত। দেশের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের অনেক সংগঠন রয়েছে। সদস্যদের অভাব-অভিযোগ দূর করায় চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা তৎপর থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক। এতেও দ্বিমত করার কারণ নেই যে, ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্যই বিনিয়োগ করেন। পণ্যের বেশি চাহিদার সময় মুনাফার পরিমাণ একটু বেশি হবে_ এটাও ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে যে তিলকে তাল করা হয়! রমজান শুরু হওয়ার অন্তত এক মাস আগেই যখন পণ্যের ভালো মজুদ গড়ে তোলা গেছে এবং বিশ্ব বাজারেও পণ্যের দাম কমতির দিকে, তখন এসব সংগঠন তাদের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাড়তি কিছু উদ্বেগ নিতে পারে বৈকি। এ ধরনের পদক্ষেপে জনগণেরও সাধুবাদ মিলবে।
 

No comments

Powered by Blogger.