‘স্বাধীনতা দিবসে আসছে এলআরবির যুদ্ধ’

মাহমুদ মানজুর: এর মধ্যে ফুরিয়ে গেছে প্রায় তিন বছর। আর কালক্ষেপণ নয়। এবার সত্যি সত্যিই আলোর মুখ দেখছে এলআরবি’র বহুল প্রতীক্ষিত ‘যুদ্ধ’। সমপ্রতি কলকাতা সফর থেকে ফিরে এমনটাই নিশ্চিত করলেন আইয়ুব বাচ্চু। বললেন, আর ফাঁকা আওয়াজ দিতে চাই না। অবশ্য ফাঁকা আওয়াজ কখনই দিইনি। সময়ের ঘেরাটোপে ভরা আওয়াজগুলো পরে ফাঁকা আওয়াজে পরিণত হয়। তবে এবার আর ফাঁকা হতে দেবো না। ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে আমাদের ‘যুদ্ধ’ সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। সে ব্যবস্থাই করছি। এদিকে স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘যুদ্ধ’ শীর্ষক অ্যালবামটি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এ যুদ্ধ আবার স্বাধীনতা দিবসকে ম্লান করে আরেকটা যুদ্ধের আহ্বান নয়। এ যুদ্ধ আমাদের মহান স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখে সুন্দর আগামীর লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান। তিনি আরও বলেন, এটা প্রেম এবং দেশ প্রেমের কথা-সুর-গানের অনবদ্য এক আয়োজন। যে আয়োজনটি গেল তিন-সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা গুছিয়ে চলেছি নির্মোহভাবে। এলআরবি জনক আইয়ুব বাচ্চু জানান, অনেক সময় আর গবেষণা করে গেল তিন বছরে যুদ্ধর জন্য চূড়ান্তভাবে বেঁধেছিলেন ১০টি গান। তবে নতুন বছরে এসে এলআরবি’র মনে হলো এর মধ্যে ছয়টি গানই পরিবর্তন করা উচিত সময়ের দাবিতে। তাইতো নতুন বছরের প্রথম প্রহর থেকে আবারও যুদ্ধের জন্য নতুন ছয়টি গান বাঁধা শুরু করেছেন এলআরবি যোদ্ধারা। কেন এমন হলো? কি এমন দরকার ছিল অ্যালবামের ৬০ ভাগ কাজ নতুন করে করার? আইয়ুব বাচ্চু বলেন, সাদা চোখে দেখলে কোন দরকার ছিল না। আরামছে গানগুলো রেখে দিতে পারতাম। গেল ৩০ বছরের মিউজিক জীবনে এ কাজটাই পারিনি। জীবনে অনেক কিছুর সঙ্গে কমেপ্রামাইজ আর সেক্রিফাইজ করেছি। শুধু মিউজিকটার সঙ্গে পারিনি। ভাল মিউজিকের জন্য, ভাল কিছু গানের জন্য যেমন করে গেল তিনটা বছর যুদ্ধ বুকে পুশে চুপচাপ থেকেছি। চাইলে এর মধ্যে এলআরবি’র অন্তত আরও দু’টি অ্যালবাম প্রকাশ করতে পারতাম। করিনি কিন্তু। কারণ যে ইন্ডাস্ট্রিতে জন্মের পর আমার সন্তান আমার থাকে না, বাবা ডাকতে হয় পাশের বাড়ির চাচা-খালুকে। সে ইন্ডাস্ট্রিতে নিসন্তান থাকাই অনেক স্বস্তির (আইয়ুব বাচ্চু এখানে ‘সন্তান’ বলতে নিজের তৈরি গান আর ‘চাচা-খালু’ বলতে অডিও প্রযোজক-পরিবেশকদের বুঝিয়েছেন)। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও বলেন, অনেকেই আমায় ব্লেইম (অভিযোগ) করেন। আমি আগের মতো অন্যদের দিয়ে গান করি না। যেমনটা করেছি তপন দা থেকে শুরু করে কানিজ সুবর্ণা, আলম আরা মিনু, জুয়েল, রূপমদের। অথবা আয়োজন করি না ‘তারা ভরা রাতে’ কিংবা ‘তুমিহীনা সারাবেলা’র মতো মিশ্র অ্যালবাম। শ্রোতাদের এমন অভিযোগের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমিও ভাই করতে পারি না বলে নিজের উপর নিজেই ক্ষিপ্ত। আমিতো করতেই চাই। কিন্তু কার জন্য করবো? কাদের হাতে তুলে দেবো? নিজের সন্তানকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করে আর চাচা-খালুদের হাতে তুলে দিতে চাই না। এসব নিয়েইতো গেল ক’টা বছর যুদ্ধ করে চলেছি। কারণ, আমি যদি যুদ্ধ না করি, আমার সন্তানরা স্বাধীনতা পাবে না। স্বাধীনতা না পেলে আমার সন্তানদের সন্তানরাও পিতৃপরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত হবে, ভুগবে হীনম্মন্যতায়। তাই চলমান যুদ্ধ স্বাধীনতার লক্ষ্যেই। আইয়ুব বাচ্চুর এই ঝাঁঝালো কথাগুলো সময়ের সঙ্গে শতভাগ যৌক্তিক। এ গতি কিংবা অনুভূতি নিয়ে শীর্ষ গানওয়ালারা এগুলে নিশ্চয়ই স্বাধীনতা মিলবে। সম্ভবত তারই প্রথম আলামত হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে এলআরবি’র ‘যুদ্ধ’। তেমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেল আইয়ুব বাচ্চুর কণ্ঠে। তিনি বলেন, আমাদের ‘যুদ্ধ’ ডিজিটাল এবং ফিজিক্যাল, দুটো মাধ্যমে একই সময়ে প্রকাশ পাবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। সেই পথেই এগুচ্ছি আমরা। আশা করছি স্বাধীনতার লক্ষ্যে আমাদের এ যুদ্ধ আলো ছড়াবে সংগীতাঙ্গনে। এ প্রসঙ্গে আইয়ুব বাচ্চুর কাছে শেষ জিজ্ঞসা- অডিও প্রযোজক-পরিবেশনকরা ক’দিন আগে ঘোষণা দিয়েছেন ব্যান্ড কিংবা ব্যান্ড শিল্পীদের অ্যালবাম প্রকাশ করবে না। সে ক্ষেত্রে ‘যুদ্ধ’ ফিজিক্যালি প্রকাশ পাচ্ছে কিভাবে? আইয়ুব বাচ্চু বলেন, এ ঘোষণাটা ছিল ওনাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কিংবা বোকামি। কারণ, এ ঘোষণার পরেও ওনাদের সামনে দিয়ে আমরা অ্যালবাম প্রকাশ করবো। এর জন্য ওনাদের কাছে আমাদের যাওয়ার দরকার হবে না। ওনারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখবেন। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। সে জন্যইতো স্বাধীনতা দিবসে এলআরবি’র ‘যুদ্ধ’ উপহার।

No comments

Powered by Blogger.