ফেসবুক-বিরোধীআন্দোলন by মহিউদ্দিন কাউসার

রনি ফেসবুক ছাড়া খায় না, ঘুমায়ও না। গতকাল চা খেতে গিয়ে দেখা হলো। দারুণ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, পড়া কেমন হচ্ছে। বলল, ‘ভালো। তোর স্ট্যাটাসটাও পড়লাম, ভালোই ছিল।’ আমি বললাম, ‘ফেসবুকের কথা বলিনি। আসন্ন পরীক্ষার পড়া নিয়ে জানতে চাইছি।’ ও সমান উৎসাহে জবাব দিল, ‘হ্যাঁ, এক পৃষ্ঠা পড়েছি।


অসীম ট্যাগ করেছিল। ইমপর্টেন্ট কিছু পেলে আমার ওয়ালে ট্যাগ করে দিস তো, পড়ে নেব।’ আমি বললাম, ‘ও আচ্ছা, এখন তাহলে আগের চেয়েও বেশি ফেসবুকিং করছিস?’ ও বলল, ‘কই, না তো! তিন দিন আগে লগ ইন করে ঢুকেছিলাম।’
‘ও, এরপর আর ঢুকিসনি?’
‘না। ঢুকব কী করে, ওইবার ঢোকার পর তো আর লগ আউটই করিনি।’
আমি টাসকি খেয়ে তৎক্ষণাৎ ফেসবুকে লগ ইন করলাম। ফেসবুক ব্যবহারের সমস্যা ও তার কারণের গভীরে ঢুকে তা থেকে মুক্ত থাকার উপায় বাতলে একটা স্ট্যাটাস দিলাম। ১০০ জনের বেশি ফেসবুকার এতে লাইক দিল। আমি বিপুল উৎসাহে ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে ফেসবুকে নানাজনের সঙ্গে চ্যাট করতে শুরু করলাম। চ্যাট কার্যক্রমের মাধ্যমে আমার পরিচয় হলো পাবনার ঐশ্বরিয়া, চালিতাতলার কারিনা, হাতিয়ার ব্রিটনিসহ আরও অনেকের সঙ্গে।
কারিনা আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা, আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?’ নতুন সম্ভাবনার ঝলক দেখে আমি বললাম, ‘ব্যক্তিগত বিষয় পরে বলি। ব্লা ব্লা ব্লা...’
ঐশ্বরিয়া বলল, ‘আচ্ছা, ফেসবুক চ্যাটে ছেলেরা ছেলেরা কী কথা বলে?’ আমি লিখলাম, ‘কেন, মেয়েরা মেয়েরা যেমন কথা বলে!’
ঐশ্বরিয়া লিখল, ‘অ্যাহেহ...ছেলেরা এত খারাপ!
ব্লা...ব্লা...ব্লা...’
হাতিয়ার ব্রিটনি লিখল, ‘আমি তোমাদের এলাকায় আসতে চাই।’
আমি ওর প্রোফাইল পিকটা দেখে তারপর লিখলাম, ‘অবশ্যই! চলে এসো একদিন। তোমার ফোন নম্বরটা, প্লিজ।’
এভাবেই আমি নানা পয়েন্ট অব ভিউ থেকে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করতে সমাজসচেতনতা তৈরিতে অবদান রেখে চলেছি। কিন্তু সম্প্রতি আমার হলের নেট দেয় যে ব্রডব্যান্ড সার্ভিসদাতা, তাদের সমস্যার কারণে আমরা কেউই ঠিকমতো ফেসবুক ব্যবহার করতে পারছি না। কষ্ট করে মোবাইল ফোন দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে স্ট্যাটাস দিলাম, ‘নেট সমস্যায় ফেসবুকে ঢুকতে পারছি না। এখন কী করে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধের আন্দোলনটা এগিয়ে নেব বুঝতে পারছি না।’ পাঁচ মিনিট পর আবার ঢুকলাম। নিচে লেখা, ‘রনি অ্যান্ড ফিফটি আদারস লাইক দিস।’
স্ট্যাটাস মনে করে পুরো গল্পটা লেখার পর আবার পড়লাম। এবার কমেন্ট হিসেবে একটা গল্প লিখছি:
তিন বন্ধুর ফেসবুকে আসক্তি এমন পর্যায়ে গেল যে তাদের পড়াশোনা, অন্য কাজকর্ম সব লাটে উঠল। একদিন হঠাৎ তারা ফেসবুকে দেখল, তাদের তিনজনের এক মিউচুয়াল ফ্রেন্ড তাদের একটা চেরাগের ছবি ট্যাগ করেছে। নিচে লেখা, এতে লাইক দিলেই একটা দৈত্য আসবে। তার কাছে ওরা তিনজন একটা করে জিনিস চাইতে পারবে।
প্রথম বন্ধু লাইক দিতেই দৈত্য এসে বলল, ‘হুজুর, আপনার একটি চাওয়া বলুন।’ সে বলল, ‘আমি ফেসবুক থেকে দূরে থাকতে চাই।’ দৈত্য তার ফেসবুক-আসক্তি দূর করে দিল। দ্বিতীয় বন্ধু একইভাবে লাইক দিল এবং বলল, ‘আমিও ফেসবুক-আসক্তি থেকে মুক্তি চাই। ‘মুহূর্তেই তার ফেসবুকে ঢোকার আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেল।
এবার তৃতীয় বন্ধু লাইক দিতেই দৈত্যটা এল। সে বলল, ‘ফেসবুকে ওদের ছাড়া খুব নিঃসঙ্গ লাগছে। ওদের ফিরিয়ে নিয়ে আসো।’

No comments

Powered by Blogger.