চরাচর-একজন জনগণমন অধিনায়ক by মো. মুজিবুর রহমান

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের সঞ্চয় শুধু মানুষের ভালোবাসা। মাদক ব্যবসায়ী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, অন্যায়-অত্যাচারের সঙ্গে আপস করেননি যে ব্যক্তিটি, যিনি মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একজন মানুষ ও রাজনীতিবিদ। সেই ব্যক্তি প্রাণ হারালেন ঘাতকচক্রের হাতে।


১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার উপজেলা পদ্ধতি বিলোপ করে দেয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যানদের নিয়ে আহসান উল্লাহ মাস্টার দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। এ জন্য তিনি জেল, জুলুম এবং নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি। উপজেলা বিলোপের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁরই মামলার ফলে আদালত স্থানিক পর্যায়ের প্রশাসনিক স্তর বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ নির্দেশনা আজ দেশে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের বাস্তব ফল হিসেবে বিরাজ করছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাস্তবায়ন, পেশা ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা এবং প্রবাসী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করার দাবি নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন প্রতিনিয়ত। দেশে যখন ত্রাস ও গ্রাসের রাজনীতির বলয় তৈরি হয়েছে, তখনই শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে দেখা গেছে টঙ্গী ও ঢাকার রাজপথে। তিনি ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯০, ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালের রাজনৈতিক পটভূমিতে শ্রমজীবীদের নেতা হিসেবে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা গর্ব করার মতো।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন দশের মধ্যে একক। তাঁকে মানুষ ভক্তি করত, তিনিও মানুষকে শ্রদ্ধা করতেন। স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্যে আর দশজন থেকে তাঁকে পৃথক করা যায় এবং তিনি দীপ্যমান হয়ে ওঠেন জ্যোতির্ময় সূর্যের মতো। সবার প্রিয় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন সর্বস্তরের মানুষের গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনগণমন অধিনায়ক। দেশ ও মানুষের জন্য তিনি কাজ করেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার বহুমুখী প্রতিভা ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। এ রকম ব্যক্তিকে বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ২০০৪ সালের ৭ মে, শুক্রবার। দেশ হারায় জনগণমননন্দিত অধিনায়ককে, যিনি ছিলেন সহস্র তরুণের আদর্শ, যিনি ছিলেন জনকল্যাণমুখী চিন্তাধারার একজন রাজনীতিবিদ ও একজন মানুষ গড়ার কারিগর।
আজন্ম শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার লোভ ও লালসার ঊধর্ে্ব থেকে গণমানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে ও আদর্শে সমুজ্জ্বল হয়ে। আর সে কারণেই দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করি, তিনি ছিলেন জনগণমন অধিনায়ক। আজ সেই নন্দিত জনগণমন অধিনায়কের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মো. মুজিবুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.