অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র-ভাবিয়া করিও কাজ

সারাদেশে যখন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি, তখন সরকারি-বেসরকারি ২১টি সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন অলস বসিয়ে রাখা হয়েছে তার উত্তর রয়েছে পুরনো আপ্তবাক্যটিতে। বস্তুত বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর যখন নির্বিচারে ভাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনে উৎসাহ জোগাচ্ছিল, অনেকেই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন_ ভাবিয়া করিও কাজ।


পরিস্থিতি হয়তো দ্রুততম উৎপাদনের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগকে জ্বালানি তেলের খরচ বাঁচাতে ও লোকসান ঠেকাতে ২১টি সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাহলে লাভ কী হলো? সচল বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে সরকার দৃশ্যত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্যদিকে বেড়ে গেছে লোডশেডিং। প্রশ্ন হচ্ছে, সমস্যার যদি সমাধানই না হয়, তাহলে এত বিতর্কিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন স্থাপন করা হয়েছিল? বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাঘা বাঘা ব্যক্তিদের মাথায় সাধারণ হিসাবটি কি ছিল না যে ভর্তুকি একসময় বহন-অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে? এর জবাব সরকারকেই দিতে হবে। সাড়ে তিন বছরে নিজস্ব ও বৃহদাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ কত দূর অগ্রসর হয়েছে, সে প্রশ্নও করার সময় হয়েছে। আমরা জানি, দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সেটা এখনও দূরের বাদ্য। এখন প্রয়োজন নগদ নারায়ণ। আমরা আশা করি, সংশিল্গষ্টরা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন। বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতেই হবে। লোডশেডিং অব্যাহত রেখে আর যা-ই হোক পরিস্থিতির উন্নয়ন করা যাবে না। সমকালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেও কিছু ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে আরও আড়াই ডজন ইউনিটে। এতে করে আরও ১৪শ' মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। এর জবাব কী? প্রতিবার গরমের মৌসুমের আগে পুরনো ইউনিটগুলো ওভারহোলিং করা নিয়ম। অতি জরুরি কাজটি এবার নাকি কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়নি। এই যদি হয় দায়িত্বশীলতার নমুনা, বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে কী করে? আমরা মনে করি, বিলম্বে হলেও সরকারের উচিত বিদ্যুৎ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি, দূরদর্শী ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে নতুন মুখও আনতে হবে। গোড়ায় না হয় ভেবেচিন্তে কাজ করা হয়নি, এখন ভাবলেও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.