পাঠকের মন্তব্য: অনলাইন থেকে-খবর পড়া আর স্নায়ুর পরীক্ষা দেওয়া সমার্থক হয়ে উঠছে

প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রতিদিন রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে পাঠকের মতামত প্রকাশিত হয়। তাঁদের এই মতামত চিন্তার খোরাক জোগায় অন্যদের। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।


এই মায়ের কোল খালি হবে আজ!
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মাদকাসক্ত এক ব্যক্তি ঘরের ছোটখাটো সব জিনিস বিক্রির পর বিক্রি করে দেন নিজের পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকেও। হূদয়স্পর্শী এই সংবাদ গত শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। বহু পাঠক আবেগাপ্লুত হয়ে সন্তানটি যাতে মায়ের কোলে থাকতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সাহায্য করার কথাও বলেন, যদিও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে রাব্বি মায়ের কোলেই থাকতে পেরেছে।
মো. রফিকুল ইসলাম: দুই হাজার টাকার জন্য রাব্বিকে বিক্রি করার দরকার নেই। ও ওর মায়ের কাছে থাকবে। সব দায়দায়িত্ব আমি নিতে চাই।
দেবু সরকার: খবর পড়া আর স্নায়ুর পরীক্ষা দেওয়া দিন দিন সমার্থক হয়ে উঠছে। সকাল বেলায় উঠে এ-জাতীয় খবর পড়লে বিশ্রী অস্বস্তি লাগে। কিন্তু এই-ই তো আমার দেশ ও মানুষের গল্প।
সুনন্দন বড়ুয়া: নেশার খরচ জোগাতে নিজের সন্তানকে বিক্রি করা হচ্ছে আজ প্রথম শুনলাম। বাবা নিজের সন্তানকে যদি নেশার খরচ জোগাতে বিক্রি করে, তাহলে ছেলের বাবার কোনো ধরনের আইনের আওতায় শাস্তি হতে পারে?
আবুল কালাম আজাদ: আমি দুঃখিত, লজ্জিত ও ব্যথিত। বাচ্চাটার জন্য একটা কিছু করা উচিত আমাদের।

রাজনীতির ঊর্ধ্বে মানবতা, রুশদীরকে প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর সন্তানদের নিয়ে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। এই খবর ওই দিন সর্বোচ্চ আলোচিত সংবাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
আবদুল মজিদ কাজী লিখেছেন: যতই দেরি হোক, আমরা ইলিয়াস আলী সম্বন্ধে নেগেটিভ চিন্তা এখনো মাথায় আনব না। তিনি যেখানেই থাকুন, যেই তাঁকে অপহরণ করুক না কেন, আমি আশা করি, তাঁর কোনো ক্ষতি করতে সাহস পাবে না। তাঁর কোনো ক্ষতি করলে তার ফল যে অত্যন্ত খারাপ হবে, তা অপহরণকারীও জানে।
রাজিব হাসান: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজনীতির অনেক ঊর্ধ্বে মানবতা। আমার বিশ্বাস, ইলিয়াস আলী যেখানেই থাকুক না কেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেবেন। আর সেটাই হবে এই সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা।
সজল: রাজনীতির চেয়ে মানবতা অনেক ঊর্ধ্বে। ওই মানবতাকে প্রাধান্য দিয়েই সরকারের দায়িত্ব কোনো নাগরিক নিখোঁজ হলে তাঁকে খুঁজে বের করা।

মানবাধিকার-পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়
দেশের সার্বিক মানবাধিকার-পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেনি বলে গত বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। তবে বেশির ভাগ পাঠকই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করতে পারেননি; বরং দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পাঠকেরা তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ এস মাহমুদ লিখেছেন: কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন মনে করছি না। কারণ, আমরা অত্যন্ত ত্যক্ত ও বিরক্ত।
বাবুল করিম: সোয়া তিন বছরে ১২২ জন ‘গুম’ হয়েছেন। দয়া করে বলবেন কি আর কতজন গুম হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার-পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ হবে?
মাহবুবুল হক: সরকারে যখন যাঁরা থাকেন, তাঁদের চোখ সব সময় অন্ধই থাকে। কামনা করি, সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁদের চোখের জ্যোতি ফিরিয়ে দেন।

এই সরকারের কোনো চরিত্র নেই
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গত শুক্রবার অভিযোগ করেন, এই সরকারের কোনো চরিত্র নেই। এই সংবাদ সেদিন আলোচিত সংবাদের তালিকায় শীর্ষে ছিল। তবে অধিকাংশ পাঠকই মওদুদকে রাজনীতির মাঠে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর এ ধরনের বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
শফি এ চৌধুরী: সরকার বা দল তো আপনাদের নিয়েই। তাই দল বা সরকারের চরিত্র বলতে আপনারা রাজনীতিবিদদের চরিত্রই বোঝায়। আপন চরিত্র সম্পর্কে নিজের চেয়ে আর কে ভালো বলতে পারে!
আফনান: রাজনীতি আদর্শের ব্যাপার। আপনার আদর্শের রাজনৈতিক দল দুর্নীতিগ্রস্ত হলে একজন সুযোগ্য নেতা হিসেবে আপনার উচিত হবে দলের প্রতি ভালোবাসা থেকে সেই দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন করা।

অচ্ছুত সামন্ত ওডিশার বিস্ময়
একার চেষ্টায় হোটেল হয়, কলকারখানা হয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও হয়। কিন্তু একার চেষ্টায় বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে ভারতের ওডিশার অচ্ছুত সামন্ত প্রমাণ করেছেন, মানুষের ইচ্ছা থাকলে সব পারে। প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ছুটির দিনে প্রকাশিত তাঁর এই কীর্তি সীমানা ছাড়িয়ে এ দেশের পাঠককেও আপ্লুত করেছে। এমন একটি মহান মানুষের জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষার আক্ষেপও ফুটে উঠেছে তাঁদের মন্তব্যে।
মোস্তাফিজুর: আমাদের দেশে কবে হবে এমন মহামানব, যাঁর হাত ধরে আমরা দাঁড়াতে পারব মাথা উঁচু করে।
শেখ মনির: এ খবর সত্যিই আনন্দের। এর থেকে ভালো খবর আর কী হতে পারে? এখানে দলাদলি নেই, নেই মিথ্যাচার। আছে স্রেফ মানুষের জন্য নিঃস্বার্থ কাজ করে যাওয়া।
এম এম ফরহাদ: আমাদের দেশের টাকার কুমিরদের চাই আরও অনেক টাকা, দামি-দামি গাড়ি হাঁকাতে এবং সুবিস্তৃত প্রান্তরের (সীমাহীন জমি) মালিক হতে। আমাদের দেশের এমন কিছু সেবামূলক কর্মকাণ্ড যারা করে থাকে, তাদের শতকরা ৯০ ভাগের বেশি লোক করে থাকে নিজের নাম জাহির করার জন্য। আমাদের দেশের টাকার কুমিরেরা, আসুন আমরা শুধু মানুষের জন্য ও আপামর দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য এমন কিছু করতে থাকি শুধু দায়িত্ব বোধ থেকে, বিন্দুমাত্র নামের জন্য নয়। তবে এমনিভাবে আপনাদের নামও এই অচ্ছুত সামন্তের মত বিনা খরচে সংবাদপত্রে প্রকাশ হবে এমনিতেই।
কমল বড়ুয়া: ভোগবাদি-লুটেরা-আগ্রাসী সমাজব্যবস্থায় ওডিশার বিস্ময় অচ্ছুত সামন্ত, আমাদের রিকশাচালক জয়নুল আবেদিন, মাদ্রাসাশিক্ষক রণজিৎ কুমার রায় বা খতিব আবদুল জাহিদ মুকুল—মানুষ হিসেবে আমাদের বিবেককে আঘাত করে যায়। শুধু দৃঢ় ইচ্ছা শক্তিই পারে সমাজের অচলায়তন ভেঙে নতুন সূর্য উদিত করতে, অবহেলিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে।
দেলোয়ার হোসেন: ধন্যবাদ প্রতিবেদনটি প্রকাশের জন্য। আমাদের এই বাংলাদেশে ঘুরে দেখুন তো, এমন প্রতিবেদন কয়টা পাবেন? আমরা এখন শুধু খাই-খাই, আরও চাই, আরও পাই রবে মেতে উঠেছি তাই। দয়া করে আমরা সবাই একটু ভালো হই, প্লিজ!
মাহফুজা বুলবুল: অচ্ছুত সামন্ত সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার ছিল। তিনি কীভাবে একেবারে শূন্য থেকে উঠে এলেন, বিশেষ করে তাঁর সাফল্যের প্রথম সোপান সম্পর্কে লেখায় পরিষ্কার করে কিছু পাওয়া গেল না। তবে তাঁর এ সাফল্য রূপকথার কাহিনিকেও ছাড়িয়ে গেছে বলা যায়। খুব ভালো লেগেছে। আমরা কি এমন সামন্ত পেতে পারি না!
(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে ও আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.