চরমপন্থীরা আবার সক্রিয়

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সশস্ত্র চরমপন্থীদের তৎপরতা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত শতকের শেষ দশকে এই অঞ্চলে চরমপন্থী দলগুলোর তৎপরতা চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ওই সময়ের শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্বের প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতায় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল চরমপন্থী দলগুলো।


পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, শ্রমজীবী মুক্তি আন্দোলন, জনযুদ্ধ, লাল পতাকা, গণবাহিনী ইত্যাদি নামে চরমপন্থী সংগঠনগুলো সক্রিয় ছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের অনেক নেতা এলাকার চরমপন্থী দলগুলোকে আর্থিক সহায়তা করতেন বলেও কথিত আছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এই পৃষ্ঠপোষকতায় ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, মাগুরা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে চরমপন্থী দলগুলো। অনেক জায়গায় ছোট ছোট উপদল তৈরি হয়। অল্প কিছু লোক নিয়ে এলাকাভিত্তিক কিছু বাহিনীরও জন্ম হয়। ওই এলাকার মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল এই চরমপন্থী দলগুলো। '৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় অনেক দল ও অনেক চরমপন্থী নেতা সদলবলে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো পুরোপুরি সন্ত্রাস বা চরমপন্থীমুক্ত হতে পারেনি। ছোট ছোট উপদল বা আঞ্চলিক সংগঠনগুলো থেকেই যায়। আন্ডারওয়ার্ল্ডে চলতে থাকে তাদের ত্রাসের রাজত্ব। সম্প্রতি প্রকাশ্যে ঝিনাইদহে এক দিনমজুরকে গুলি করে হত্যা করার ভেতর দিয়ে চরমপন্থীরা জানিয়ে দিল তাদের অবস্থান।
আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা, নিজেদের মধ্যে কোন্দল, হানাহানি ও 'ক্রসফায়ারে' অনেকের মৃত্যুর পর অনেক দিন আন্ডারওয়ার্ল্ডের চরমপন্থী দলগুলো প্রকাশ্য কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। কিন্তু সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে আবার চরমপন্থী দলগুলো সক্রিয় হতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছরে আন্ডারওয়ার্ল্ডে তৈরি হয়েছে বেশ কিছু নতুন উপদল। মূল দলের অনেক শীর্ষ নেতাই ভারতে পালিয়ে আত্মরক্ষা করলেও অনেকের ফিরে আসার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এবারও চরমপন্থী দলের নেতা ও সদস্যরা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদ নিয়েই এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট। এর পাশাপাশি অনেক চরমপন্থী নেতাকে এবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী দলগুলোতে নতুন এক মেরুকরণের কথাও শোনা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এখন অনেক দলই নিজেদের মধ্যে একটি সমঝোতায় পেঁৗছতে চেষ্টা করছে বলে খবরে প্রকাশ। আগের অনেক ছোট ছোট দল এখন নিজেদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে চাইছে। অচিরেই যদি এমনটি দেখা যায় যে আন্ডারগ্রাউন্ডে সক্রিয় অনেক ছোট ছোট দল বা বাহিনী একীভূত হয়ে গেছে, সেটা অবাক হওয়ার ব্যাপার হবে না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ একসময় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। অনেকের জীবন গেছে। ভুল পথে পা বাড়িয়েছে অনেক তরুণ। সমাজে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এসেছে অবৈধ অস্ত্র ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, মেহেরপুর জেলায় আবার যাতে চরমপন্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে তার জন্য সরকারকে এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার এখনই সচেষ্ট হলে চরমপন্থী দলগুলোর অপতৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে।

No comments

Powered by Blogger.