সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ইইউ’র অবাঞ্ছিত বক্তব্যঃ এই ঔদ্ধত্য অমার্জনীয়

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংস ঘটনা ঘটে গেল তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উস্কানিমূলক বক্তব্য শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, সেই সঙ্গে নিন্দনীয়ও।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউউ) পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি ক্যাথরিন আইনের পক্ষে ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে দেয়া এক বিবৃতিতে তার মুখপাত্র বলেছেন, ‘১৯ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ...রাঙামাটি জেলার সহিংস ঘটনায় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য নিহত হয়েছে। ৪শ’ পাহাড়ি পরিবারের ঘরবাড়ি ও সম্পদ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ...এ সহিংস ঘটনায় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং সেনাবাহিনীর নিয়োগ করা ব্যক্তিরা জড়িত থাকার অভিযোগের ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি অবহিত আছি। ...সেনাবাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ দ্রুত ও স্বাধীনভাবে তদন্তের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। বাংলাদেশ সরকারকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এ লজ্জাজনক ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’ বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পর্কেও নসিহত করা হয়েছে।
ইইউ হচ্ছে ইউরোপের কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট। এই জোটের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সম্পর্কে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তুলে কার্যত আমাদের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি যা ঘটে গেল তা অবশ্যই বেদনায়ক ও লজ্জাজনক। এ ঘটনা ঘটতে ও বাড়তে দেয়া উচিত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে সেখান থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের পর বাঙালিদের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক এবং কিছুসংখ্যক পাহাড়ি যুবকের মধ্যে হিংসাত্মক প্রবণতা বাড়ছিল। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে আগাম পদক্ষেপ নিলে হয়ত অবাঞ্ছিত ঘটনাপ্রবাহ এড়ানো যেত। এটা এক বিষয়। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে একপেশে, মনগড়া, কূটনৈতিক ভব্যতাবর্জিত কথা বলার অধিকার ও সাহস ইইউ কোথা থেকে পেল, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের ধন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য হিসেবে আমাদের সেনাবাহিনীর ছেলেরা বিভিন্ন দেশে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে তা এরই মধ্যে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের হিংসাত্মক ঘটনাকে উপলক্ষ করে সেই সেনাবাহিনীকে কলঙ্কিত করার স্থূল প্রচেষ্টা আসলে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারে সরকারকে বাধ্য করার ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করি।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এর আগে শোনা যায়নি। এক এগারোর আগে থেকে বাংলাদেশ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলে আসার ব্যাপারটা সত্য বলে ধরে নেয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে একাধিক। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গোপন আনুগত্যের দাসখত দিয়ে নির্বাচনের অবিশ্বাস্য ফলে জয়লাভ করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে বলেই কি ইইউ এ ধরনের কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে? তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারী ঘরে-বাইরের সবাইর মনে রাখা উচিত, বাংলার মানুষ মচকাতে জানে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ব তিমুরের পুনরাবৃত্তি কিছুতেই ঘটতে দেয়া হবে না। সরকার ইইউ’র বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা মনে করি, বিষয়টি এতই গুরুতর যে, শুধু প্রতিবাদের আনুষ্ঠানিকতায় কাজ হবে না। এমন কঠোর অবস্থান নিতে হবে যাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খেলতে উত্সাহী ঘরে-বাইরের সবারই কানে পানি যায়।

No comments

Powered by Blogger.