পথে পথে কৃষ্ণচূড়ার আগুন by মিঠুন চৌধুরী

ইট, পাথর, কংক্রিটের শহরে অন্য রকম আগুন লেগেছে। সূর্যের সব উত্তাপ ধার করে যেন রক্ত রঙে সেজেছে কৃষ্ণচূড়া। কম যায় না তার সঙ্গী-সাথিরাও। সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে বেগুনি জারুল ও হলদে সোনালি রঙের সোনালু ফুল। নগরের সিআরবি, সার্কিট হাউস ও পাহাড়তলী এলাকায় পরিকল্পিতভাবে পর পর লাগানো হয়েছে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল। গ্রীষ্মের কড়া রোদে সৌন্দর্যের ডালি খুলে বসেছে এসব ফুল।


নগরের প্রাণকেন্দ্র লালদীঘির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। ঐতিহাসিকদের মতে, ইংরেজ শাসনামলে লালদীঘির চারপাশে ছিল বড় বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ। গ্রীষ্মে দীঘির জল লাল হয়ে উঠত ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়ার পাপড়িতে।
লালদীঘির পাড়ে এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। পথচারীদের নজর কাড়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পাঠাগারের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ঝাঁকড়া মাথার গাছটি। লালদীঘি মসজিদসংলগ্ন অন্য গাছটিও বেশ বড়।
এ রকম জলাশয়ের পারে কৃষ্ণচূড়ার দেখা মিলবে আরও। নগরের বহদ্দারহাটে বহদ্দার পুকুরের দুই পারে আছে মাঝারি আকারের দুটি কৃষ্ণচূড়া।
ডিসি পাহাড়ে কৃষ্ণচূড়ার ডালে রং লাগলেই শহরবাসী জেনে যান ফাগুন এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পাহাড়চূড়ার কৃষ্ণচূড়া গাছগুলোর লাল অগ্নিশিখার ঐশ্বর্য চোখে পড়ে অনেক দূর থেকেই। তবে নগরের সিআরবি এলাকার পাহাড়েই এখনো সবচেয়ে বেশি দেখা মিলে জারুল, সোনালু আর কৃষ্ণচূড়ার।
ডিসি পাহাড়ে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে আসেন গৃহিণী ফেরদৌস বেগম। তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন সকালে আমরা অনেকে মিলে এখানে হাঁটি। কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটলে পাহাড়ের চেহারাই পাল্টে যায়। এমন পরিবেশে হাঁটার আনন্দই আলাদা।’
নগরের উদ্যানগুলোর পাশাপাশি পথের ধারে ফোটা কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো অকাতরে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে। টাইগার পাস পুলিশ বক্সের সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছটির পাতা ঢেকে দিয়েছে গাঢ় লাল ফুল। দেওয়ানহাট সেতুর ওপর উঠলেই দুই পাশে দুটি ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়া যেন স্বাগত জানায় পথচারীদের। আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কের ডান পাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০টি কৃষ্ণচূড়া গাছ। গাঢ় লাল ফুলে ঢেকে গেছে সড়কের এক পাশ।
পাহাড়তলি রেলওয়ে ওয়ার্কশপের সামনে বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের স্মৃতি ফলকের কাছেই বেশ কয়েকটি কৃষ্ণচূড়ায় ঘন হয়ে ফুল এসেছে।
কৃষ্ণচূড়ার ফাঁকে নগরের এখানে সেখানে উঁকি দিচ্ছে সোনালু আর জারুল। তবে সোনালু দেখা গেলেও জারুলের সংখ্যা খুব কম। নগরের ডিসি পাহাড়, সার্কিট হাউস ও সিআরবি এলাকায় দুই-একটি জারুলের দেখা মিলবে।
তবে সোনা ঝরানো সোনালু ফুল দেখতে খুব বেশি দূর যেতে হবে না। কোতোয়ালি মোড়ে সিডিএ ভবনের সামনে ছোট্ট একটা সোনালু হালকা বাতাসে শরীর দুলিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। একটু দূরেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরের পাহাড়ে দেখা মিলবে আরও কয়েকটি সোনালু গাছের। নগরের পাহাড়তলীর সেগুনবাগান ও সিআরবি এলাকায়ও সোনালুর ফিকে হলদে ঝুরির সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে।
সব ফুল একসঙ্গে দেখা যাবে সার্কিট হাউজ ও সিআরবি এলাকায়। এ দুটি স্থানে যেন হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালু। পথ চলতি নগরবাসীকে তাই হঠাৎ থমকে দাঁড়াতেই হয়। গরমের অস্বস্তি সত্ত্বেও বিস্ময়বোধ গ্রাস করে নেয় মন।

No comments

Powered by Blogger.