খুন্তির ছেঁকায় শিক্ষা-আদালতের নিষেধাজ্ঞার রায় প্রচার করুন

কোমলমতি শিশুদের পায়ে তপ্ত খুন্তির ছেঁকা দিতে পারে কোনো মানুষ! সে-ও ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে। বলা হলো, শিশুরা মাদ্রাসা বন্ধ থাকাকালে বাড়িতে থেকে নিয়মিত নামাজ পড়েনি। তাই সেই 'অপরাধ'-এর জন্য তাদের দোজখবাস করতে হবে। কেমন হবে সেই দোজখের আগুন? ওরা যাতে উপলব্ধি করতে পারে, তাই খুন্তি চুলায় দিয়ে তপ্ত করে,


সেই খুন্তির ছেঁকা দেওয়া হলো ছোট ছোট শিশুর হাঁটু আর গোড়ালির মাঝামাঝি অংশে। সেই বর্বর, নৃশংস কাজটি করেছেন ঢাকার পূর্ব নামা শ্যামপুরের তালিমুল কোরআন নামক মাদ্রাসার কথিত অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার। স্বঘোষিত অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার অমানবিক এ কাজটি করে আমাদের অশিক্ষা আর পশ্চাৎপদ মানসিকতাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, এই দুর্বিষহ ঘটনার পর প্রমাণ হলো বিনা অনুমতিতে এবং অনুপযুক্ত লোক দ্বারা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা বন্ধ করা কত জরুরি। জানা যায়, পূর্ব নামা শ্যামপুরের এই প্রতিষ্ঠানটির মতো অনেক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। এ ধরনের শিক্ষায়তনগুলোয় সাধারণত প্রশিক্ষণবিহীন ও সামান্য লেখাপড়া জানা লোকদেরই শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তাঁদের লেখাপড়ায় থাকে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা। দেশ ও আইনকানুন কিংবা সংবিধান ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকে খুবই কম। এ কারণে এই কথিত অধ্যক্ষের মতো হাজার হাজার শিক্ষক ছাত্রছাত্রীকে শাস্তি প্রদানে আদালতের নিষেধাজ্ঞার খবরও জানেন না। তাঁরা জানেন না শারীরিক কিংবা মানসিক আঘাত করে কাউকে প্রকৃত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়, তা সে দোজখের ভয় দেখিয়ে হোক কিংবা স্বাভাবিক শিক্ষাপদ্ধতি হিসেবেই হোক। আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি না জেনে এবং প্রকৃত শিক্ষালাভ না করেও তাঁরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারছেনমূলত দেশে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোনো কর্তৃত্ব না থাকার কারণে। এবতাদিয়া কিংবা কওমী মাদ্রাসাগুলোকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে এনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা না করতে পারলে জেসমিন আক্তারের মতো শিক্ষকদের অপশিক্ষা বন্ধ করা যাবে না।
পূর্ব নামা শ্যামপুরের তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার মতো ব্যবসা পরিচালনা করতে সরকারের কোনো অনুমতি নিতে হয় না। সরকারও এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে না। স্পর্শকাতর ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে বিষয়টিকে বরাবরই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অথচ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্যই এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ডগুলো বন্ধ করা অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের মানসিক কিংবা শারিরীক শাস্তি প্রদানের বিষয়ে আদালতের রায়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়া উচিৎ। একইসঙ্গে এধরনের মাদ্রাসাগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাক্রমও নির্ধারণ করতে হবে কোনো বৈধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।

No comments

Powered by Blogger.