অভিমত ভিন্নমত

দুর্ঘটনায় পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু কবে বন্ধ হবে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুর পোশাক কারখানা ‘গরিব অ্যান্ড গরিব’-এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২১ শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে এ রকম মর্মান্তিক ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। নিহত শ্রমিকদের পরিবারের জন্য এটা সারা জীবনের ঘটনা; এ ঘটনা তাঁদের জীবনে


বয়ে এনেছে এমন ক্ষতি যা অপূরণীয়। পত্রিকায় দেখলাম তৈরি পোশাক প্রস্তুত এবং রপ্তানিকারক সমিতির নেতারা নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। একটা জীবনের মূল্য কি দুই লাখা টাকা হতে পারে? আমার মতে এটা হওয়া উচিত, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চাকরির বয়স পর্যন্ত মালিকপক্ষ নিহত কর্মীর পরিবারকে নিহতের মাসিক ভাতা দিয়ে যাবে। একটা আইন করে এটি বাধ্যতামূলক করা উচিত। এ দায়িত্ব সরকারের।
এ ধরনের দুর্ঘটনা বন্ধ করতে হলে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি কারখানা গার্মেন্টসকর্মীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষার নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলছে। উন্নত দেশগুলোতে কলকারখনাসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার নিয়মনীতি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সেসব দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলেও তা আমাদের দেশের মতো এত ঘন ঘন ঘটে না এবং ঘটার পর কারখানা কর্তৃপক্ষের অনেক বড় মাশুল গুনতে হয়, বিপুল অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সেসব দেশে কলকারখানার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার শুধু আইন করেই দায়িত্ব শেষ করে না; আইন যে মেনে চলা হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা করে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিয়মিত তাদের কর্মচারীদের এ বিষয়ে সচেতন করার জন্য প্রশিক্ষণও দেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জানানো হয় দুর্ঘটনায় কীভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে, কীভাবে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো সভা-বৈঠক, প্রশিক্ষণ, কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে অনুষ্ঠানের শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, দেখিয়ে দেওয়া হয় দুর্ঘটনায় তারা কোন পথে নিরাপদ স্থানে যাবে। অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করে দেখা বাধ্যতামূলক। অনেক প্রতিষ্ঠানের দিনের শুরুতেই পরীক্ষা করে দেখা হয় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি যেমন—অগ্নিনির্বাপক-যন্ত্র, আগুন ও ধোঁয়ার সংকেতদান-যন্ত্র ইত্যাদি সচল রয়েছে কি না। যানবাহনেও একইভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। অর্থাত্ যেখানেই মানুষের উপস্থিতি, সেখানেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়মনীতি বাধ্যতামূলক। আর এ সবই নিশ্চিত হয় আইন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের সচেতনতার ফলে।
বাংলাদেশে কারখানা, সড়ক ও নদীপথের দুর্ঘটনায় যেভাবে মানুষের মৃত্যু হয় এটা অন্য কোনো সভ্য দেশে হয় কি না আমার জানা নেই। একটা তদন্ত কমিটি করে সরকার এবং মালিকপক্ষ তাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। এ রকম দুর্ঘটনা কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এ রকম ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে যথাযথ আইন করে এবং সে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ আইন অমান্য করলে তার উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সীনা আক্তার
লন্ডন, যুক্তরাজ্য।

শিবিরের পক্ষে লেখকের সাফাই!
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি খোলা কলমে সোহরাব হাসানের ‘আওয়ামী লীগও কি জিয়াকে ভয় পায়’ শিরোনামের লেখাটি পড়ে কী বুঝলাম নিজেই জানি না। তিনি বিমানবন্দরের নামবদলের সমালোচনা করেছেন, ভালো কথা। বিএনপি আমলে যখন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের নাম বদলানো হয়েছিল তখন কি তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন? তা নিয়ে কিছু লিখেছিলেন?
শুধু তাই নয়, শিবির একজন ছাত্রকে হত্যা করার পর সারা দেশে শিবিরের বিরুদ্ধে ধরপাকড়েরও সমালোচনা করেছেন তিনি। লেখক কি বলতে চান ওই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হামলায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই মারা যাওয়ার পর ধরপাকড় করাই ঠিক হতো? না কি প্রতিঘরে একজন মানুষ শিবিরের হাতে মারা গেলে?
সোহরাব হাসান শিবিরের পক্ষ নিয়ে লিখেছেন, এভাবে গণগ্রেফতার ঠিক নয়। তিনি কি জানেন, প্রতিটি শিবিরকর্মী প্রতিটি ছাত্রলীগকর্মীকে খুন করতে চায়? শিবির যে সেদিন রাবির সব হলে তাণ্ডব চালিয়েছে নিশ্চয়ই একজন ছাত্রলীগকর্মীকে হত্যা করতে নয়। সরকার যদি নিজ দলের কর্মীদেরই রক্ষা করতে না পারে তাহলে সাধারণ মানুষকে কীভাবে রক্ষা করবে? বিএনপি আমলে হলে হলে ছাত্রদল ও শিবির কি করেছিল তা কি লেখক ভুলে গেছেন? আসলে এ লেখার উদ্দেশ্যটা কী?
রুবেল দাস, ঢাকা।

তারা কী না পারেন!
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা চাইলে কী না পারেন! তাঁরা চাইলে সাংবাদিকদের পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়েও যেতে পারেন অথবা থানায় না নিয়ে পা দিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের করেও দিতে পারেন অথবা গাছে ঝুলিয়ে পেটাতে পারেন। আর যদি অপরাধীরা (সাংবাদিকেরা) ক্ষমা চান, তাহলে দয়া করে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। সবই তাদের হাতে!
রংপুরের বদরগঞ্জে এক মেলা আয়োজনকারী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা সব সাংবাদিক এবং অন্যদের (তাঁদের যাকে খুশি) ডেকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এক সাংবাদিকের এত বড় ‘ধৃষ্টতা’ যে সে ডাকে না গিয়ে প্রথম আলোর বার্ষিক সম্মেলনে যোগদান করেছেন। স্থানীয় এক ইনকিলাব প্রতিনিধিও অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার ‘আস্পর্ধা’ দেখিয়েছেন। আর এই অপরাধে(!) চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু যেদিন (২৫ ডিসেম্বর) ‘আস্পর্ধা’ দেখিয়ে প্রথম আলোর বদরগঞ্জ প্রতিনিধি আলতাফ হোসেন ঢাকায় প্রথম আলোর সারা দেশের প্রতিনিধিদের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন (তিন দিন পর তাঁর এলাকা বদরগঞ্জে যান), সেদিন না কি তিনি বদরগঞ্জে চাঁদাবাজি করেছেন। যাই হোক, তাঁরা সত্যি সত্যিই চাঁদাবাজি করেছেন কি না এবং সে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করা অথবা তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া পুলিশের তথা আইনের কাজ। কিন্তু স্থানীয় ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদের হুমকি দেখে তো মনে হয়, তাঁদের হাতে আইন তুলে দেওয়া হয়েছে বা তাঁরা তুলে নিয়েছেন। তাঁরা চাইলেই যা খুশি তা-ই করতে পারেন। আর যদি তাঁরা আইনের লোক না হন, তবে সাংবাদিকদের মেরে ফেলার যে হুংকার দিয়েছেন সে জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? তা ছাড়া এ ধরনের ভয়ংকর কথা যাঁরা মিটিং ডেকে জনসমক্ষে (তাও আবার শহীদ মিনার চত্বরে) দাঁড়িয়ে বলতে পারেন, তাঁরা শুধু সংশ্লিষ্ট দুই সাংবাদিকই নয়, সমগ্র জাতির জন্য যে বিপজ্জনক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বদরগঞ্জের ২৬ জন সাংবাদিক জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হোক। হুমকিদাতা ভয়াবহ সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।
আমাদের দেশে অনেক সাংবাদিকের নিয়তি হলো ক্ষমতাসীনদের দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া কিংবা নিরাপত্তার অভাবে কোথাও জায়গা না পেয়ে পত্রিকা অফিসে এবং অনেক সময় শেষ পর্যন্ত স্বয়ং ‘ওপরওয়ালার’ কাছে আশ্রয় নেওয়া। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়া সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন—এ অবস্থা কি চলতেই থাকবে, না কি নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন?
শাহানা আক্তার
উত্তর বারিধারা, ঢাকা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম: শান্তি কত দূর?
গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বাঘাইছড়ি উপজেলার মা-হারা তিন কিশোরের করুণ ও বিষণ্ন ছবি আমাকে কষ্ট দিয়েছে, বিচলিত করেছে। কিশোরী সুনীতা মায়ের মৃত্যুর বর্ণনা দেয়, ‘আর্মির উপস্থিতিতেই দুই বাঙালি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে আর্মি ও বাঙালিরা অন্যদিকে চলে গেলে আমরা মাকে নিয়ে পাহাড়ে যাই। সেখান থেকে গ্রামের অন্যরা মাকে নিয়ে যায়। এর মধ্যেই মা মারা যান।’ (প্রথম আলো, ২২ ফেব্রুয়ারি)। আমরা জানতাম, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআর পাহাড়ের শান্তিরক্ষার জন্যই অবস্থান করছে। তাহলে এ অবস্থা কেন?
একটি মুঠোফোন অপারেটরের কাজে কয়েক দিন আগে আমি প্রায় ১০/১২ দিন পার্বত্য তিন জেলা ভ্রমণ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছি অনেকবার। নাম, গাড়ির নিবন্ধন, কেন যাচ্ছি, এখানে যাওয়া যাবে তো ওখানে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি খবরদারির মুখোমুখি হয়েছি। ভেবেছি, নিরাপত্তার স্বার্থে এই নজরদারি প্রয়োজন। পাহাড়ি আদিবাসী অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা বাঙালির বসতি ভালোভাবেই মেনে নিয়ে মিলেমিশে থাকতে চান।
বাবু দেওয়ান চাকমা একজন সংস্কৃতিকর্মী। গান করেন, গান লিখেন। থাকেন রাঙামাটি শহরেই। সেদিন সকালে তাঁকে ফোন করলাম কেমন আছেন জানতে। সৌজন্যের খাতিরে বললেন—‘ভালো আছি’। তাঁর একমাত্র ছেলের খবর জানতে চাইলে বললেন, ‘ও আজ ভয়ে স্কুলে যায়নি। যদি মেরে ফেলে।’
‘সাবধানে থাকবেন’—এটুকু ছাড়া আর কথা বলতে পারলাম না।
পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতেই আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন, তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগানো ও লুটাপাট চলেছে। অনেক আদিবাসী প্রাণভয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। খাবারের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। ব্যক্তিগতভাবে মিশে দেখেছি, পাহাড়িরা আমাদের চেয়ে অনেক সিচন্তার শান্তিপ্রিয় মানুষ। কয়েকবার পার্বত্য জেলা ভ্রমণে আমার অভিজ্ঞতা হলো, সেখানে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের ভূমিকা বেশ আগ্রাসী। পাহাড়ের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের হাতে।
বাঘাইছড়ির সংঘর্ষের জের ধরে খাগড়াছড়িতেও এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ছবি ও খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। রাজনীতির নামে আমাদের সবার নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্রযন্ত্রটি যাঁরা পরিচালনা করছেন, কোনো ঘটনাই কি তাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? সুনীতা, জুয়েল, রূপনার করুণ অসহায় মুখ, বসতভিটা পোড়ানোর দৃশ্য তাদের কি বিচলিত করে না? আমাদের বিবেক কি মরে গেল?
এতগুলো প্রাণের মূল্য সরকার কীভাবে দেবে?
রিপন চৌধুরী, ঢাকা।

নিভৃতচারী এক ভাষাসৈনিক
‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভাঙার মিছিলে আমি মাঝখানের দিকে ছিলাম। একসময় পুলিশের গুলি ও টিয়ার শেলে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। কাঁদানে গ্যাসে চোখ জ্বালা করে উঠল। সেদিন সন্ধ্যায় আর মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে (তখনকার ব্যারাক) ফিরলাম না। রাতে ছাত্রাবাসের আমাদের কক্ষের তালা ভেঙে পুলিশ তল্লাশি চালাল। আমার খাটের নিচ থেকে দুটি লাউডস্পিকার উদ্ধার করে নিয়ে গেল। এগুলো রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রচারকাজে ব্যবহূত হতো।’
ডা. কামাল উদ্দিন এভাবেই ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার কথা বর্ণনা করলেন। কামাল উদ্দিন রেলওয়ের সাবেক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এই মানুষটি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম থেকে সম্পৃক্ত থাকলেও কখনো তা প্রকাশ পায়নি। নিভৃতচারী এই ভাষাসৈনিক জীবনের শেষ সময়ে এসে তুলে ধরেন তাঁর ক্রমশ ম্লান হয়ে পড়া স্মৃতির ঝাঁপি।
১৯৪৫ সালে ফটিকছড়ি করোনেশান স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৪৭ সালে কলকতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করার পর তিনি ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। তার কিছু সময় পর থেকেই ছাত্রদের মাঝে দানা বাঁধতে শুরু করে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। শুরু থেকেই সেই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন কামাল উদ্দিন।
‘১৯৫২ সালে আমি কলেজের ব্যারাকের ২ নং কক্ষে থাকতাম। কলেজের সব ছাত্র ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর আমি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠি। আর এসপি মাসুদের নেতৃত্বে রাতে আমাদের কক্ষগুলোতে তল্লাশি করে তছনছ করা হয়’—বলতে থাকেন কামাল উদ্দিন।
দুই দিন ছাত্রাবাসের বাইরে থাকার পর ছাত্ররা আবার ছাত্রাবাসে ফিরে আসেন। কিন্তু পুলিশের চোখ এড়িয়ে চলা মুশকিল হয়ে পড়ল। একদিন প্রায় ধরা পড়েই গিয়েছিলেন কামাল উদ্দিন। ‘ঘটনার দু-তিন দিন পর একদিন হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। দেখলাম, এসপি মাসুদ হোস্টেলের সামনে গাড়ি রেখে এগিয়ে আসছেন। আমি তাড়াতাড়ি ভেতরের রাস্তা দিয়ে প্রথমে মেডিকেল কলেজের এক মহিলা কেবিনে ঢুকে পড়লাম। পরে সেখান থেকে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে মাস্ক পরে ফেললাম। সেদিন এভাবে কোনোমতে রক্ষা পেয়েছিলাম।’ ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর প্রথম শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন কামাল উদ্দিন। ছাত্ররা ইট-বালি দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এই স্মৃতিস্তম্ভটি। পরদিন অবশ্য পুলিশ সেটি ভেঙে দেয়।
ভাষার মাস এলেই সেইসব দিনের কথা ভেবে আবেগাপ্লুত হন নিভৃতচারী ভাষাসৈনিক ডা. কামাল উদ্দিন।
প্রণব বল, চট্টগ্রাম।

জিএম খাদ্য নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় ফরিদা আখতারের লেখা ‘জিএম খাদ্য: আমাদের অতি প্রিয় বেগুনকে দূষিত করবেন না’ পড়লাম। জৈব প্রযুক্তির একজন শিক্ষার্থী হিসেবে তাঁর লেখাটি সম্পর্কে দু-একটি কথা বলা প্রাসঙ্গিক মনে করছি।
বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে নানা প্রযুক্তি এসেছে। তার কিছু কাজে লেগেছে, কিছু কাজে লাগেনি। তার মানে এই নয় যে আমরা প্রযুক্তির বিরোধিতা করব। জিএম বেগুন নিয়ে ফরিদা আখতারের আলোচনা প্রাসঙ্গিক, তবে তাঁর লেখার মূল সুরটি জিএম প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বলে আমার মনে হয়েছে। যে কেউ জিএম ফসলের বিরোধী হতেই পারেন। কিন্তু ফরিদা আখতার জিএম ফসলের বিরোধিতা করতে গিয়ে হাইব্রিড ও জিএম শস্যকে সমান্তরালে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু গবেষণা ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে দুটি বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাইব্রিড ফসলে কীটনাশক অনেক বেশি ব্যবহার করতে হয়, অনেক সময় তা কীটের চেয়ে বেশি ক্ষতি করে আমাদের। লেখকের এই তথ্যের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। মূলত এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই জিএম ফসলের ধারণার শুরু। যদি কোনো ফসলে বিশেষ জিন (বিটি জিন) ঢোকানো হয় তবে তা আপনা থেকেই ক্ষতিকর কীট ও বালাই প্রতিরোধ করে, আলাদাভাবে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে আমাদের পাকস্থলীর সঙ্গে সঙ্গে খেত, নদী, নালা, খাল-বিলের পানি-মাটিও দূষণের হাত থেকে বাঁচবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যে বিটি বিষ খেয়ে পোকামাকড় মারা যায়, তা আমরা কীভাবে খাব। আসলে ক্ষতিকারক পোকা ও মানুষের পাকস্থলীর ধরন এক নয়। গরু ঘাষ খেয়ে হজম করতে পারে, মানুষ পারে না। তেমনি বিটি বিষ পোকার জন্যই ক্ষতিকর, মানুষের জন্য নয়। বিজ্ঞানীরা মানুষের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েই এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন। ফরিদা আখতার তাঁর লেখায় এলার্জির কথা বলেছেন। এলার্জি ব্যক্তিনির্ভর। হাঁসের ডিম খেলে কারও গা চুলকায়, অনেকের আবার চিংড়ি মাছ খেলে, কিন্তু সবার নয়। বিশেষ কোনো ব্যক্তিকে দেখলেও কারও গা চুলকাতে পারে। এলার্জি প্রযুক্তির দোষ নয়।
ফরিদা আখতার তাঁর লেখায় ভারতের মনসান্টোর মতো বহুজাতিক কোম্পানির অনুপ্রবেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বেগুনের জাত বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁর আশঙ্কা অমূলক নয়। তবে আমাদের বিটি বেগুনের গবেষণার কাজটি করছে আমাদের দেশের কৃষি গবেষণা সংস্থা (বারি)। সুতরাং সেই প্রক্রিয়া যেন সঠিক হয়, যেন দেশি বীজ বিলুপ্ত না হয় সেদিকেই লক্ষ রাখতে হবে। পুরো প্রযুক্তিকে খারাপ বলে বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না।
দিগ্বিজয় দে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মূল গলদ শিক্ষাব্যবস্থায়
স্বাধীনতার পর আমাদের শিক্ষা বেশ প্রসার লাভ করেছে, কিন্তু কোনো ভাষানীতি তৈরি হয়নি। বর্তমান সরকার শিক্ষানীতির যে খসড়া উপস্থাপন করেছে তাতেও ভাষানীতি বলে কোনো অধ্যায় নেই। তাহলে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ভাষা বিকাশলাভ করবে কোন পথে? বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০০৮ সালের এক জরিপ-প্রতিবেদন অনুসারে জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও কম সংখ্যকের ন্যূনতম সাক্ষরতার দক্ষতা রয়েছে। এডুকেশন ওয়াচ-এর ২০০২ সালের জরিপ অনুসারে প্রায় চল্লিশ শতাংশ জনগোষ্ঠী বাংলা বর্ণমালা চেনেন না বা লিখতে জানেন না। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষার উপযুক্ত বয়সী প্রায় ৮৭ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু পঞ্চম শ্রেণী পাস করার পরও অনেকে বাংলা বর্ণমালা যথাযথভাবে উচ্চারণ করতে পারে না, বাক্য গঠন করতে জানে না, বানানে প্রচুর ভুল করে বা গুছিয়ে একটা অনুচ্ছেদ লিখতে পারে না। এসবের বড় একটি কারণ হলো বেশির ভাগ শিক্ষক সবগুলো বর্ণের ঠিক উচ্চারণ করতে জানেন না। তার ওপর রয়েছে আঞ্চলিক বাংলার টান। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে আমাদের অনেকেরই আরামবোধ হয়। কিন্তু লেখাপড়া জানা লোক নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রমিত উচ্চারণে কথা বলবেন—এটাই প্রত্যাশা। বিদ্যালয়ই হতে পারে প্রমিত মাতৃভাষা শেখার উপযুক্ত স্থান।
একটা ভাষানীতি প্রণয়ন করা খুবই জরুরি, যাতে বাংলাসহ আদিবাসীদের ভাষাগুলো ও ইংরেজি ভাষা বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা ও কর্মকৌশল থাকবে। সহজ উপায়ে বাংলাভাষা শেখার ও শিক্ষা দেওয়ার উপায় উদ্ভাবন করা খুবই প্রয়োজন। আদিবাসীদের ভাষার বিষয়েও অনুরূপ পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো (পিটিআই) ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারগুলো এবং মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজগুলোকে ভাষা শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। প্রশিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ ধরনের একটা প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান যেমন দেখানো হবে, তেমনি জনসাধারণকে দেওয়া যাবে ভাষা ব্যবহারের প্রকৃত অধিকার।
সমীর রঞ্জন নাথ
ঢাকা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আহ্বান
আমাদের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দুটি দলের পক্ষেই বিপুলসংখ্যক মানুষের সমর্থন রয়েছে। এ দুইয়ের কোনো একটি দলকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি আপাতত কল্পনা করা যায় না। কোনো দলই ইচ্ছা করলেই অন্য দলটিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। দুটি দলই বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা, এটা যাঁরা অস্বীকার করতে চান, তাঁদের চিন্তাভাবনা বাস্তবসম্মত নয়।
তাহলে দেশের ভাগ্য, জনগণের সুখ-দুঃখ, উন্নতি-অবনতি, শান্তি-অশান্তি—সবকিছুই নির্ভর করছে এই দুটি রাজনৈতিক দলের ওপর। আমরা সাধারণ মানুষ, খুব আশা নিয়ে একটি দলকে নির্বাচিত করি। ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা বিএনপিকে নির্বাচিত করলাম এই ভেবে যে তারা দেশকে আগের সরকারের দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্ত করবে। কিন্তু বিএনপি সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ঘটনা ঘটল উল্টো। দুর্নীতি ও সন্ত্রাস বন্ধ হলো না, শুধু হাতবদল হলো। দেশটি বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতে থাকল।
তারেক রহমানের জন্য খুব মায়া হয়। তিনি এত দুর্নীতি করলেন, এত সন্ত্রাসী লালন করলেন—কিন্তু এই খাতে কোনো নোবেল পুরস্কার নেই। তারেক রহমান ছাড়াও বিগত খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও নেতারা দেশকে দেখিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি কাকে বলে, দুর্নীতি কত প্রকার ও কী কী এবং দুর্নীতির মাত্রা কী চূড়ান্ত রূপ ধারণ করতে পারে।
বিএনপির দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা নির্বাচিত করলাম আওয়ামী লীগের সরকার। ভোট উপচে পড়ল নৌকা মার্কায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এসে দেখাতে লাগল দিনবদলের দিবাস্বপ্ন। নামবদলের মাধ্যমে তারা দিনবদল শুরু করল, কিন্তু এভাবে কি দিনবদল হয়? তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথা আর কী বলব। তারা কী রকম দুর্নীতি করছেন তা এখনই জানা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই জানা যাবে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতানেত্রীদের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধ, আপনারা দুর্নীতি ও সন্ত্রাস ছেড়ে দিন। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, রোগ-বালাই, অশিক্ষাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই দেশের জনগণ। তাদের দুঃখ-কষ্ট আর বাড়াবেন না। আপনারা দয়া করে ভালো হয়ে যান। বিএনপির নেতাদের বলছি, ভবিষ্যতে আপনারা আবার ক্ষমতায় যাবেন। তখন দয়া করে আর দুর্নীতি করবেন না। এখন বিরোধী দলে আছেন, সততার সঙ্গে বিরোধী দলের যথাযথ দায়িত্ব পালন করুন। সেই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীকে ত্যাগ করুন। আমরা ধর্মের নামে ধর্ম চাই, রাজনীতি চাই না। আওয়ামী লীগের প্রতি আমার আহ্বান, নামবদলের উন্মাদনা ছেড়ে দিয়ে দেশের মানুষকে যেসব স্বপ্নের কথা বলে ভোট চেয়েছিলেন সেগুলো পূরণ করার উদ্যোগ নিন।
স্বজন বিশ্বাস
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের লিখে পাঠান। এ ছাড়া সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন।
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ
প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ইমেল: editorial@prothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.