বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য কঠোর হাতে দমন করুন-চট্টগ্রামের ঘটনা

হেফাজতে ইসলাম নামে একটি সংগঠনের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবার চট্টগ্রামে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি উদ্বেগজনক। সংগঠনটি মূলত কওমি মদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হলেও এর পেছনে একটি মৌলবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমর্থন আছে বলে জানা গেছে।


সেটি দোষের কিছু নয়, কিন্তু এ ধরনের একটি সংগঠনের সঙ্গে বিদেশি কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসাজশ থাকার খবর অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। আবার নিছক সন্দেহবশত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও সমর্থনযোগ্য নয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কেন সমাবেশের অনুমতি দেয়নি, তার ব্যাখ্যাও তাদের দিতে হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ থাকলে তা প্রকাশ্যেই বলা দরকার। এর প্রতিক্রিয়ার দিকটি কি তারা আমলে নিয়েছিল? সে ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্টসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হলো না কেন? যদি কোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে জঙ্গি তত্পরতার তথ্য-প্রমাণ না থাকে, সেই সংগঠনকে শান্তিপূর্ণ সমবেশ করার অনুমতি দেওয়াই শ্রেয়। সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে সংগঠনের কর্মীরা সড়ক অবরোধ করেছেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন, পুলিশের হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়েছেন, যা দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
সংবিধানে নাগরিকদের সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলেও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। সংগঠনের উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য যদি গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই ফাঁদে পা দিল কেন? পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ ও শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে সংগঠনটি লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ আহ্বান করেছিল।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রশ্নে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনটি জানা যায়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। সংসদে এ-সম্পর্কিত কোনো বিলও উত্থাপিত হয়নি। শিক্ষানীতির কোথাও ধর্মীয় শিক্ষা বাতিলের কথা বলা হয়নি। তা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ডেকে কেউ তাদের বক্তব্য প্রচার করতে চাইলে তাতে আপত্তি থাকা উচিত নয়। একটি সমাবেশে বাধা দিলে প্রতিবাদে ১০টি সমাবেশের আশঙ্কা থেকে যায়।
অতএব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভেবেচিন্তে। আবার সভা-সমাবেশের নামে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে তাদের সজাগ থাকতে হবে। চট্টগ্রামে যারা পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রেও নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

No comments

Powered by Blogger.