বিদ্যুৎকেন্দ্রে কড়া নিরাপত্তা by আশরাফুল হক রাজীব

বিদ্যুৎ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছে সরকার। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ-সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাদের অনুরোধের পর বিদ্যুৎ-সংশ্লিষ্ট কার্যালয়গুলোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু গত মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআই। সেই হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা এমনিতেই বেশি। এর সঙ্গে যখন কোনো দপ্তর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়ানোর তাগিদ আসে, তখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার যে সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছে। বিদ্যুৎকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সেটা বুঝেই আচরণ করা দরকার।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে গত মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে আগামী দুই মাসে বড় রকমের সমস্যা বা সংকটের আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, চলতি সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের এ আশঙ্কার কথা জেনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটার অজুহাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করার অনুরোধ করা হয়। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'বোরো মৌসুম শেষ হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং কোথাও কোথাও অবনতি হয়েছে। এ অবস্থায় যেকোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সতর্কতামূলক চিঠি যখন আমাদের কাছে এসেছে, তখনই বোরো মৌসুম প্রায় শেষ। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা এখনো রয়েছে। আর এ জন্যই অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের মধ্যে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনামাফিক বছরভিত্তিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বজায় রাখা গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতিজনিত সংকট ধীরে ধীরে কমে আসবে। বিদ্যুৎ বিভাগ আগামী দুই মাসে গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবগত করেছে। এর মধ্যে কুইক রেন্টালের আওতায় কেরানীগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সিওডি গত ২৭ মার্চ সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামের জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সিওডি ২৬ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। এ ছাড়া কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গত মাস থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে গেছে এবং চলতি মাসেই সিওডি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমনুরা ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গত জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে চলছে এবং জাতীয় গ্রিডে ৪৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বেসরকারি খাতে ঘোড়াশালে স্থাপিত ভাড়াভিত্তিক ১৪৫ মেগাওয়াট ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রাকৃতিক গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে রূপান্তরের জন্য চুক্তির সংশোধনী আনা হয়েছে। ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়। এই বিদ্যুৎ আগামী বছরের জুন মাসে সরবরাহ শুরু হবে। ভারত থেকে আনা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ২ দশমিক ৮ রুপি।
সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি গত ২৪ মার্চ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রটি বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে ১৪৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। শিগগিরই চালু হবে চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটি বর্তমানে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে রয়েছে। পিকিং পাওয়ার প্লান্টের আওতায় শিগগিরই কাটাখালী ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে। এ ছাড়া সান্তাহার ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পও শিগগিরই চালু হবে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি ছিল ৮৪ শতাংশ।
বেসরকারি খাতে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গত ডিসেম্বরে ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে প্রাক-চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। কয়লাভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে মুন্সীগঞ্জ, খুলনা ও আনোয়ারায়। এ ছাড়া গত ২৯ জানুয়ারি ক্রয় কমিটিতে ৫৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.