নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা জরুরি-মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাচ্ছে

প্রবণতাটা এশিয়ার প্রধান প্রায় সব দেশেই দেখা দিয়েছে। চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। সংগত কারণেই এটা চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবর থেকেই জানা যায়, ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, যা গত ১৫ মাসে সর্বোচ্চ।


নীতিনির্ধারকেরা অবশ্য এই বলে সান্ত্বনা পেতে পারেন যে বার্ষিক গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করেনি। এতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার বিপদ এড়ানো যাবে না। বিশেষ করে খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৯ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এর মানে হলো, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রীর মূল্যস্তর অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকাটা এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে সীমিত আয়ের মানুুষ পড়েছে সবচেয়ে বেশি সংকটে। বাড়তি দাম দিয়ে নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যের সংস্থান করতে হয় বলে এর আয়ের বড় অংশই চলে যাচ্ছে। তাই অন্য কাজে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
বস্তুত খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে সাম্প্রতিক মাসগুলোয়। চালের মূল্যের এই বৃদ্ধি কৃষকদের কতটা সুফল দিয়েছে, তা বলা মুশকিল। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জোগান-ব্যবস্থাপনার ত্রুটি এই দাম বাড়ার একটা বড় কারণ। অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য ইদানীং চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার জন্য বাজারের মুষ্টিমেয় চক্র বা সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। সরকারের মন্ত্রীরা যদি অভিযোগ করেন, তাহলে বুঝতে হবে যে এই দুষ্টচক্র অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রশ্ন হলো, বাজারে যদি এ ধরনের দুষ্টচক্র থেকেই থাকে, তাহলে তা ভাঙা হচ্ছে না কেন? সরকার কেন এদের দমন করছে না? এরা কি সরকারের চেয়ে ক্ষমতাশালী? শুধু সিন্ডিকেটের দোহাই পেড়ে দায় সারলে চলবে না। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার মন্দা কেটে যাওয়ার প্রভাবে বিশ্ববাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। এই দাম বাড়ার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়তে শুরু করেছে। কারণ, বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যের বড় অংশই আমদানি করতে হয়। সুতরাং আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হচ্ছে।
এই বাস্তবতায় যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সরকারকে তার দিক থেকে তা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি পদক্ষেপ হলো খাদ্য উত্পাদন নিশ্চিত করা। আরেকটি হলো পণ্যের জোগান নির্বিঘ্ন করা। জোগানের প্রক্রিয়া গতিশীল করতে হলে পরিবহনব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। রেলপথ কাজে লাগাতে হবে। রেলপথে সাশ্রয়ী মূল্যে যে বিপুল পরিমাণ পণ্য বহন করা সম্ভব, তা সড়কপথে সম্ভব নয়। সর্বোপরি আগামী দিনগুলোর সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে এখন থেকেই পরিকল্পনা নিতে হবে। ২০০৭ সালের শেষভাগে যখন বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে, তখন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেননি। এ কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, যা সহনীয় হতে অনেক সময় নিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.