ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল-সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যা করতে পারি by আলী রীয়াজ, রেজা সেলিম ও মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এ নির্বাচিত চারটি নাগরিক ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে বাগেরহাটের রামপালে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালার বিশ্লেষণাত্মক অভিমত ও সুপারিশ নিয়ে আলী রীয়াজ, রেজা সেলিম ও মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান-এর নিবন্ধসহ তিনজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


আমাদের ধারণা, সড়ক পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্যের অবসান এবং প্রতিদিন সংঘটিত দুর্ঘটনায় প্রাণহানি, যা সহজেই পরিহারযোগ্য। এর মোকাবিলার জন্য করণীয় কাজকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
জবাবদিহির সংস্কৃতি ও কাঠামো: সড়ক পরিবহনে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা অভাবনীয় হারে বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও দেশের সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই এ বিষয়ে কোনো রকম দায়িত্ব গ্রহণ করার মনোভাব প্রদর্শন করে না। জবাবদিহি গণতন্ত্রের একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত এবং সাধারণ মানুষের ভোটাধিকারের মতোই একটি অধিকার। আর তাই সবার কর্তব্য হচ্ছে জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরির জন্য দাবি তোলা ও চাপ প্রয়োগ করা। এই লক্ষ্যে দরকার জবাবদিহির জন্য প্রতিষ্ঠান তৈরি এবং যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে শক্তিশালী করা। প্রত্যক্ষভাবে পরিবহন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো, মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন, মন্ত্রণালয়—কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যত্যয় ঘটালে তার দায়িত্ব কার ওপর বর্তায়, তা সবারই জানার অধিকার রয়েছে। তার জন্য সাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং সরকারকে এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা তৈরিতে বাধ্য করা দরকার।
স্থানীয়ভাবে সমস্যা মোকাবিলা করা: পরিবহন খাতের সমস্যা জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা হলেও একে স্থানীয়ভাবে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে সমপ্রতি রামপাল উপজেলায় আমাদের গ্রাম প্রকল্পের উদ্যোগে পরিবহন বিশৃঙ্খলা নিরসনে এই স্থানীয় উদ্যোগটি উল্লেখযোগ্য। এলাকার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, পরিবহন সেক্টরের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, এনজিওসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছেন পরিবহনশ্রমিক এবং এ খাতে বিনিয়োগকারীরাই। তাঁদের বক্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য, সড়কের নৈরাজ্য এ খাতকে ক্রমাগত লোকসানের দিকেই ঠেলে দেয়। এ অবস্থা তাঁদের কাম্য নয়। এ ছাড়া নেতিবাচক পরিস্থিতি নিম্ন আয়ের শ্রমিকদেরই ভোগায় বেশি। রামপালের উদ্যোগে তাই একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, যেখানে ‘দুর্ঘটনামুক্ত উপজেলা’ গঠনের প্রতিশ্রুতি প্রতিটি এলাকার শান্তি ও নির্বিঘ্ন পথ চলাচলের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
জাতীয় পর্যায়ে নীতি ও কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন: আমরা দেখছি, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে যেসব সরকারি- বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে, তাদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া বুয়েট বা ব্র্যাকের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ যেসব গবেষণাকর্ম হচ্ছে, সে সম্পর্কেও নাগরিক সমাজ ভালোভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছে না। এর ফলে সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ ও দাবি আদায়ের কর্মকৌশল নিয়ে নাগরিক সমাজ ততটা কার্যকরভাবে উৎসাহী মনোভাব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মনে করি, প্রচলিত এবং জনপ্রিয় কর্মসূচির বাইরেও নাগরিক সমাজের নানা রকমের উদ্যোগ নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, যা টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে এগোতে পারবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে। এ ব্যাপারে আমরা একটি জাতীয় কনভেনশন আয়োজন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি, যেখানে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সবাই অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এই কনভেনশনের কয়েকটি দিক নিয়ে আমাদের ভাবনাগুলো:
১. সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়গুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনার সিংহভাগই সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ ও গুটিকয়েক এনজিওর মধ্যে সীমিত। এতে নিরাপদ সড়কসংক্রান্ত নানা উদ্যোগের সঙ্গে জনমানুষের সংশ্লিষ্টতা হয় না। কনভেনশনের মাধ্যমে আমরা একটি জাতীয় ফোরাম গঠন করতে পারি, যেখানে বিভিন্ন ধাপে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিনিধিরা স্থান পাবেন।
২. কনভেনশনে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে পরিচিত করানো এবং একই সঙ্গে সরকারি ও বিরোধী দলের কাছে থেকে সড়ক নিরাপত্তাবিষয়ক রাজনৈতিক অঙ্গীকার আদায়ের বিষয়টিও থাকবে। এ ব্যাপারে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানানো হবে। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আলাদা তহবিল গঠন, মহাসড়কগুলোর কাছাকাছি দুর্ঘটনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ নতুন ধরনের কিছু প্রস্তাব আমরা কনভেনশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে পেশ করতে পারি। এই উদ্যোগে বেসরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোকে অঙ্গীভূত করতে হবে।
৩. সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সফলতাগুলো কীভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে কর্মকৌশল প্রণয়ন। বিভিন্ন দেশে যেসব সংস্থা ও নাগরিক উদ্যোগ কাজ করছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। তা ছাড়া, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে কীভাবে থানা পর্যায়ে স্থানীয়ভাবে সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে নাগরিক সমাজ যুক্ত হতে পারে, তার দিকনির্দেশনা প্রণয়ন।
৪. সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে শিশু শিক্ষা কর্মসূচির একটি পরিকল্পনার কথা আমরা জানতে পেরেছি, যা উৎসাহব্যঞ্জক। তবে এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা ও উদ্যোগ বিবেচনায় এনে নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজনীয়।
৫. বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে হলে প্রচলিত ক্যাম্পেইন কৌশলে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সড়ক ব্যবহারকারীদের সবারই অভ্যাস ও আচরণ পরিবর্তন করা একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়। প্রস্তাবিত জাতীয় কনভেনশনে মনোবিজ্ঞানী এবং পাবলিক ক্যাম্পেইন বিশেষজ্ঞদের নতুন ধরনের প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
৬. নিরাপদ সড়ক নিয়ে গবেষণা ইনস্টিটিউট গঠনের প্রয়োজনীয়তা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বুয়েটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে অর্থ সাহায্য করা জরুরি। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পরিবহন খাতে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁদের এই অর্থায়ন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা দরকার।
বাংলাদেশে সড়ক অব্যবস্থাপনার সঙ্গে আর্থিক দুর্নীতি ও অসততা জড়িয়ে আছে। তাই অনেকেই নাগরিক সমাজের নানা উদ্যোগের সফলতার ব্যাপারে সন্দিহান থাকেন। তবে আমরা বিশ্বাস করি, এ ব্যাপারে নাগরিক সমাজের ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ ও লেগে থাকার কৌশল একসময় সামাজিক সচেতনতা তৈরি করবেই এবং অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমরা একসময় সবাই মিলেই কাটিয়ে উঠতে পারব। (সংক্ষেপিত)
 আলী রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভারসিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।
 রেজা সেলিম: পরিচালক, আমাদের গ্রাম, উন্নয়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি।
 মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান: সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

যোগ দিন ফেসবুক পেজে : www.facebook.com/bjbdmichil

জনমত জরিপের ফলাফল
বদলে যাও বদলে দাও মিছিলের ওয়েবসাইটে নতুন তিনটি জনমত শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। আপনিও অংশ নিন জরিপে।

সড়ক দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ নিহত ও আহত হলে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সাহায্য দেওয়া উচিত বলেমনে করেন কি?

 হ্যাঁ ৮৬%  না ৬%
 মন্তব্য নেই ৮%
৯ মে, ২০১২ পর্যন্ত
আপনি কি মনে করেন সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিক শিক্ষা ইভ টিজিং কমিয়েআনতে পারে?
 হ্যাঁ ৮৩%  না ৮%
 মন্তব্য নেই ৯%
৯ মে, ২০১২ পর্যন্ত
বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে দেখাচ্ছে না। এটা কি সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা বলে মনে করেন?
 হ্যাঁ ৮৫%  না ৯%
 মন্তব্য নেই ৩%
৯ মে, ২০১২ পর্যন্ত
www.bodlejaobodledao.com

No comments

Powered by Blogger.