অশোভন উক্তি ও আচরণ থেকে বিরত থাকুন-সংসদে সুস্থ বিতর্কই কাম্য

গত কয়েক দিনে জাতীয় সংসদে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সরকারি ও বিরোধী উভয় পক্ষের কতিপয় সাংসদ প্রতিপক্ষের প্রতি অশালীন উক্তি করেই ক্ষান্ত হননি, একে অপরের দিকে তেড়ে গিয়েছেন। জাতীয় সংসদ হলো জনগণের আশা-ভরসার স্থল।


জনপ্রতিনিধি হয়ে যাঁরা সংসদে গেছেন, তাঁরা সেখানে বসে রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করবেন, সে জন্য আলাপ-আলোচনা হবে, সাংসদেরা যুক্তি-তর্ক উত্থাপন করবেন—এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি!
রেওয়াজ অনুযায়ী, বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিয়ে থাকেন। সরকার ও বিরোধী দলের সাংসদেরা সেই ভাষণের ওপর বক্তব্য দেন, এর ভালো-মন্দ দিক তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি যথাযথভাবে উত্থাপিত না হলে বিরোধী দল তার সমালোচনাও করতে পারে। কিন্তু তা হতে হবে তথ্য ও যুক্তির ভিত্তিতে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্য দিতে গিয়ে সাংসদেরা অশালীন উক্তি বা প্রতিপক্ষকে গালাগাল করতেও দ্বিধা করছেন না। সে ক্ষেত্রে সাংসদদের সম্পর্কে জনগণের কী ধারণা হবে তা সহজেই অনুমেয়।
জনগণের কষ্টার্জিত অর্থেই সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সাংসদদের বেতন-ভাতারও জোগান দেয় তারা। তাদের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সাংসদেরা এ আচরণ করতে পারতেন না। দেশে হাজারো সমস্যা-সংকট আছে। সেসব সমস্যা নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় না। বেশির ভাগ বিতর্কই হচ্ছে দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানকে কেন্দ্র করে। তাঁরা শুধু দুটি দলের নেতা নন, জাতীয় পর্যায়েরও নেতা। দেশের গণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতাসংগ্রামেও তাঁদের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। সংসদে দাঁড়িয়ে কাউকে ‘খুনি’ বলা কিংবা কাউকে ‘ফেরাউনের’ সঙ্গে তুলনা করা কেবল অনৈতিক নয়, নিম্ন রুচিরও পরিচায়ক। এর মাধ্যমে তাঁরা প্রয়াত নেতাদেরও অসম্মানিত করেন। এভাবে কোনো সংসদ চলতে পারে না। সাংসদেরাও সেখানে যা খুশি বলতে পারেন না। মঞ্চে বক্তৃতা করা আর সংসদে কথা বলা যে এক নয়, সে বিষয়টিও তাঁদের বুঝতে হবে।
দীর্ঘদিন পর বিরোধী দল সংসদে যোগ দেওয়ায় জনগণের মধ্যে প্রত্যাশা জেগেছিল যে তাদের সমস্যা-সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। দুই পক্ষের যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে সেসব সমস্যার সমাধানও বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তাঁরা আত্মস্তুতি ও পরনিন্দায় যতটা উত্সাহী, দেশ ও জনগণের সমস্যার ব্যাপারে ততটা আগ্রহী নন। দুই পক্ষ এই অসুস্থতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ও অন্ধকার।
সংসদে এ ধরনের অশালীন কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী সংসদকে চালাতে হবে। সংসদ হলো যুক্তি ও বুদ্ধিচর্চার স্থান, পেশিশক্তি প্রদর্শনের নয়। এ ব্যাপারে সংসদের স্পিকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে তিনি সংসদনেত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। যেকোনো মূল্যে সংসদের পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.